হায় বসন্ত
– সুমিত্র দত্ত রায়
হায়রে নবীন বসন্ত,
এ কী মরণ খেলা খেলছো?
ছিলো যেই বীণ দুরন্ত,
মারণে কেন রাঙা করছো!
এখনও কৃষ্ণচূড়ার রঙে
ধূলির পথে যে লুটোচ্ছে,
সবুজ গাছেই ছিলো টঙে
খেলাঘর সাড়া কি দিচ্ছে!
ভুলের খেলা কত চলবে,
সুমতি কতদূরে থাকবে!
কেউ কি রাঙা হাত ধরবে,
যে ছোঁয়ায় এই মন জাগবে?
কেউ আসবে না
– সুমিত্র দত্ত রায়
আজো তরী বেয়ে যাই একলা অজানায়
ভাঙাগড়া নদীর দুকূলে,
ঈশান কোণের কালো মেঘ এখন আমায়
ঘিরে চলেছে…ঘিরেই চলছে…
হাল ধরবার কেউ আছো কি?….
কেউ কি আছো? …
পাল ভাঙা তরণীর হাল ধরবার মতো !
কেউ আসে না,
জানতাম কেউ আসবে না,
আমি সেই ঘনাবৃত মেঘের ভ্রুকুটির
মাঝে একাই রয়ে যাব,
ক্রমাগত পরিণত ঝড়ের তাণ্ডবে –
সজীব বৃক্ষ হতে ধীরে ধীরে
ফুল ঝরে যায়…ঝরেই যায় …
ঘোর অন্ধকার,
অশনিসংকেতে মেঘ ডাকে,
হায়! আবার বুঝি বৃন্তহারা হলো,
কোনো কুঁড়ি বা অন্য কোনো ফুল।
নদীর দুকূলই এখন রাঙা
মেঘের দুরন্ত লালের আভাসে ।
কেউ আছো? …কেউ কি আছো?…
তোমরা কি বুঝতে পারছো না?
কত ভয় করছে আমার…কত্তো ভয়…
গত অতীতের কঙ্কাল ফিরে ফিরেই
কেন যে আসে বারবার! ঘেরে শুধু আমাকেই?
উপহাস ভরে ওরা আজ কেবলই বলছে আমায়,
“কেউ তো আসবে না.. কেউ আসে না ..
তোমাকেই ধরতে হবে এ হাল।”
চোরে চোরে রাত দুপুরে
– সুমিত্র দত্ত রায়
দুই চোরে কথা হয়
ঠিক রাত দুপুরে,
বল তো কি পাওয়া যায়
আকাশের ওপরে?
ওমা, তাও জানিস না
আছে রাজকন্যা,
হীরে, জহরতে যার
গায়ে ডাকে বন্যা।
আয় তবে দুজনায়
সেখানেই উঠবো,
যত জহরত মেলে
দুয়ে ভাগ করবো।
টর্চ আমি জ্বেলে রাখি
আলো বেয়ে তুই ওঠ,
আলো নিভে পড়ে গেলে
পাব যে ভীষণ চোট!
এরই মাঝে বৃষ্টিটা
ভেঙে এলো দুরদার,
হলো না আকাশে ওঠা
ওরাই পগার পার।
উৎসেচক
– সুমিত্র দত্ত রায়
চন্দ্রচূড় জটাজাল হতে,
বরফ বন্দী জল নামে,
বসতি গড়ে ওঠে,
দুকূল ছাপিয়ে নদী ধায়।
তরলের ধর্মই –
অবিরাম ধারে নিম্নে গমন,
রসাতল নেই বেশী দূরে ,
যেন এক তরল-মতি!
নিশ্চিন্তে সাগরে বিশ্রাম।
নেই উন্নতি, নেই রূপান্তর,
পারে না সে গগন বিহার,
যে কাজ আত্মার!
কিন্তু সবই পারে,
যদি পায় সঠিক উত্তাপ,
কিম্বা স্পর্শ রবিকরের,
সেইতো তার পথ প্রদর্শক।
দুটি অনুকাব্য
– সুমিত্র দত্ত রায়
ক) মানুষ সত্য
জগত সত্য বলেই মানুষ রয়েছে,
ধর্ম আছে মানুষের আপন বিশ্বাসে,
মিথ্যে দ্বন্দ্ব চললে কিভাবে সে বাঁচে?
মানুষ নাই বাঁচলে ধর্ম রবে কিসে?
খ) আশা নিরাশায়
মত্ত জীবনে মত্ত মরণে
পৃথিবী দেখতে চাও না,
হায়রে বলো বুঝবে কেমনে
তাজমহলের কান্না ?
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।