ঝরলো খুশি
– পারমিতা ব্যানার্জি
বৃষ্টি এলো বৃষ্টি এলো
অনেক দিনের পরে।
অপেক্ষাতে ছিল যারা,
আনন্দের গান ধরে।
তাদের মধ্যে অন্যতম
কোলা ব্যাঙের ছা!
গাল ফুলিয়ে বলছে সে
আহারে বাহারে বাঃ!
আরো খুশি চাতক পাখি
জল খায় প্রাণ ভরে।
বৃষ্টি বলে, এলামই তো,
ঝরতে অঝোর ঝরে!
সমুখ সমরে
– পারমিতা ব্যানার্জি
আজ যখন যুদ্ধ
আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়,
আমি ভীত হয়ে পড়ি।
হাত পায়ের নখগুলো
বেরোতে গিয়েও সেঁধিয়ে যায়।
অথচ অহং আমাকে
পিছিয়ে দিতে চায় না যেন।
সামনাসামনি দাঁড়িয়ে নিজেকে
লুকিয়ে ফেলি সভ্যতার খোপে।
অন্দরমহলের শিলালিপিগুলো
ধুলোর আস্তরণ সরিয়ে
আমার চোখে চোখ রাখে।
আমি চোখ নামিয়ে নিই।
ভালো লাগে ভাবতে __
এই আমিই তো সেই একদিন
যুদ্ধে গিয়েছিলাম।
বীর বিক্রমে
বোধহয় সভ্যতাও এনেছিলাম!
সুখের আগুন
– পারমিতা ব্যানার্জি
বিরহ যন্ত্রণা
সহ্য করতে করতে যখনই
ন্যাড়া ছাদের
সীমানায় এসে দাঁড়াই
লাটাই বিহীন ঘুড়িটার মতো
উড়তে ইচ্ছে করে।
পারছি কই?
কে যেন বাধা দিচ্ছে বারবার!
একটাই ক্ষোভ __
প্রজাপতি, ফড়িং এর মতো
উড়তে পারি না আমি।
ফুল বগিচায় মধু প্রেম কুড়োতে
পারি না।
আমার জন্য কি নেই
বিরহ বিহীন একটা আকাশ!
একটা চড়ুই ছানা একদিন
ছুঁতে চেয়েছিল সূর্য।
ওর মা বাধা দিয়েছিল।
বলেছিলো __
পুড়ে ছাই হয়ে যাবি রে বোকা!
আমার কোনো বাধা নেই।
তবুও পারি না কেন
সুখের আগুনে পুড়ে ছাই হতে!
স্থবির অস্তিত্বে
– পারমিতা ব্যানার্জি
বেলাশেষে এসে দেখি
পা দুটো চলছে না আর!
মনে মনে ভেসে চলি
নদীর কিনারে বারবার।
ইচ্ছে করে বয়ে যেতে
নদীর মতো, দুর্নিবার __
নদী বয়ে যায় আপন খেয়ালে।
আর আমার স্থবির পা
ভিজে যায় ছুটন্ত জলে।
নদী ফিরে দেখেও না তা!
দুরন্ত জলের ঝাপটায়
ভিজে যাই আমি __
ভিজে যায় আমার নিঃস্ব মন __
চপলা হতে ইচ্ছে করে তখন।
বহতা নদী আড় চোখে দেখে
আমার পাগলামি!
কী অদম্য ইচ্ছে
মনে মনে এঁকে চলি আমি!
রাত-গল্প (ছড়া)
– পারমিতা ব্যানার্জি
সন্ধ্যে হলেই গাছে গাছে
চামচিকেরা আসে।
পেয়ারা গাছের ডালে ওরা
শীর্ষাসনে ভাসে।
ডালে বসে ছোট্ট প্যাঁচা
গোল গোল চোখে তাকায়।
আড্ডা তখন রাত পোকাদের
পানা ভরা জলায়।
জানলা খুলে রাতে মাখি
চাঁদের ভালবাসা।
রাত জাগা পাখির গলায় যেন
বিরহের এক ভাষা।
এসবই তখন তাকিয়ে দেখে
ঘুমহীন দুই চোখ।
এমনি করে ভুলেই থাকি
দিনের আলোর শোক।!
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।