ঈশ্বর যখন পোশাক পরিবর্তন করে
– যোষেফ হাজরা
ঈশ্বর যখন পোশাক পরিবর্তন করে
আমার বিচ্ছিন্নতায় ধর্ম বিশ্বাসী হই
আমরা প্রত্যেকে বিশ্বাস করি পরম ব্রহ্মাকে
তবে মনে করি আমাদের আচারনিষ্ঠা সর্বশ্রেষ্ঠ
যে বিশ্বাস করে না লৌকিকতার ঐতিহ্য
তাকে মনে হয় বিদ্রোহী নাস্তিক ভ্রষ্টাগত
আদতে বস্তু অবস্তুতে যে প্রেম অনুভূত নয়
নিরাকার লক্ষ্য তাকে ছুড়ে দেওয়া স্বার্থপরতা
কোন ভয় কোন লোভ থেকে মুক্তি মেলে কীনা জানি না
বাসনাবিহীন তাই নির্মলতার প্রেম চাহিদায় সীমাবদ্ধ নয়
মানুষের জন্ম হয় মৃত্যু বরণ করে
বুদ্ধ তথাগত নির্বাণবাদী
বাসনার বন্ধনে মানুষ সর্বগ্রাসী প্রফুল্ল নয়
কর্ম বৈচিত্র্যময়তা এনে দিবে প্রশান্তির ঘুম
আমার বস্তু কেন্দ্রিক চিন্তার দূরত্ব মসজিদ অবধি
তবে হাস্যকর যে নিজেকেই চেনে না
মানুষ তাই ঘুরে ফিরে একই অন্ন ভোজন করে
একই চিন্তায় আবদ্ধতা তাই পরাধীনতার নামান্তর
তবে সুখে থাকাই সর্বশ্রেষ্ঠ
বিলাসিতার দাড়িপাল্লায় নিজেকে মাপলে দুঃখী হতে হয়
পৃথিবীতে কোন কিছু একচ্ছত্র নয়
আধ্যাত্মবাদ থেকে সহিংসতা
আর পৃথিবীতে কোন অসৎ ব্যক্তি থাকতে পারে না
তেমনি থাকতে পারেন নিরেট খাঁটি মানুষ
সবকিছু অবিচ্ছিন্ন অপেক্ষিকতার সামিল
এজন্য প্রত্যেকেই করে ক্ষুদ্রতম বিনির্মাণ
জন্মের সূচনাতে আমরা সকল সত্তা নিয়ে আবির্ভূত হই
প্রকৃতিই সৃষ্টি করে দেয় বাকি পথটুকু
তবে আমরা কেউ আলাদা নই
না আমরা কেউ ঐক্যবদ্ধ
আমার কেউ একক সামর্থ্য বেঁচে থাকি না
তেমনি সম্পূর্ণ রুপে পরনির্ভরশীল
আমার প্রত্যেক প্রত্যকের পরিপূরক
আমদের ভগবানও সে কথা কথা অস্বীকার করে না
একটি ভোজ উৎসব হোক
– যোষেফ হাজরা
তুমি তো আমার সাথে ভোজে বসে ছিলে একদিন
আমি তোমার বন্ধু ছিলাম
আমাদের আত্মা ছিল হাসি আনন্দের চিত্রপট
সেদিন আকন্ঠ ভোজন করেছিলাম হৃদ্যতা
আমরা এখনো সেই কথা ভাবতে বসি
ভাবি জীবন ছিল সবুজের মত সামাজিক
নির্মল নৈসর্গিক
আমরা একই মন্ত্রে আবদ্ধ ছিলাম বহু বর্ষকাল
আমরা মাঠে ফসল ফলাতাম সোনালী ধান, রবিশস্য
রৌদ্রজল দুপুরে তেষ্টার জল একসাথে পান করেছি
বর্ষার যখন আমাদের ঘর ভেসে গিয়েছিল
কালবৈশাখী ঝড়ে যখন আমার আশ্রয় হারিয়েছি
তখন তুমি আমার পাশে ছিলে
আমি তোমার পাশে ছিলাম
আমরা বিশ্ব বিধাতার অখন্ড ছত্রছায়ায় একাত্মা ছিলাম
কিন্তু আজ আমরা সভ্যতার সোনালি সেতুর উপর
নির্মাণ করেছি অটুট এক জীবন-যাপন
আমাদের সড়ক-মহাসড়ক-আকাশ-জলপথ
সমগ্র বিশ্বের বিশ্বায়নের আমাদের ভাসিয়েছে
আমাদের জীবন আরো বেশি
আধুনিক, যান্ত্রিক ও প্রগতিশীল
তবুও কেন যেন নিজেকে অসহায় মনে হয়
কেন যেন মনে হয়
আমার ভরসা রাখার জায়গাটুকুর বড় অভাব
আমার সন্তান যেকোন মুহূর্তে পারে মাদকাসক্ত
আমার স্ত্রী-কন্যার হতে পারে সম্মানহানি
আমার বৃদ্ধা পিতামাতা ঘর ছাড়াও হতে পারে
আমি আমার বর্তমান ও অতীত নিয়ে শঙ্কিত
আমার মন্দির জড় ঈশ্বররে মুখে তাকিয়ে যে আশা পেয়েছিলাম
তারা যে কোনো সময় ভেঙে খান খান হয়ে যেতে পারে
আমি তো আকার-নিরাকার ঈশ্বরকে
মানুষের চেয়ে অধিক ভালবাসতে পারি না
তবুও আমরা কেন ভুলে গেছি
সৃষ্টির শুরুতে আমরা একই মায়ের সন্তান ছিলাম
আমার মা ছিল সৃষ্টির সবচেয়ে সেরা
ভালবাসা-ভরসা-জ্ঞানের আধার
তখন তো কোন ঈশ্বর ছিল না
আর ছিল না আমি-তুমি নিয়ে কোন ভাগাভাগি
আমরা ছিলাম আমাদের
তবে আমরা চল আবার একাত্মা হই
আর আধুনিকতার মানে অতীতকে ভুলে যাওয়া নয়
সভ্যতার মানে কোন বর্বরতা নয়
পৃথিবীর কোন একক বস্তু নয়
আমরা আর তোমরা কখনো শত্রু নয়
কল্যাণ আর অকল্যাণ কখনো একার জন্য আসে না
ভুলের মাসুল সকলেই দিতে হয়
প্রতিটা মানুষ সমস্ত পৃথিবীকে পেলেও সুখী হতে পারে না
অভাববোধের সমাপ্তি সুখের সূচনা
শান্তিতে নির্মল রসের মত
পৃথিবীকে অধিকার করুক
তবে আমরা আবার মিলিত হব
আবার ভোজে বসব একদিন
পান করব আকন্ঠ সম্প্রীতি
সমতা ন্যায়ের পক্ষে
– যোষেফ হাজরা
যারা ন্যায়ের পক্ষে তারা সকলেই সমান
তারা ধনী ও দরিদ্র হয়ে বিভেদ করে না
তারা পুরুষবাদী নয় নারীবাদী নয়
তারা জ্ঞানী আর মূর্খ নয়
তারা আরব বা আমেরিকান নয়
তারা আস্তিক বা নাক্তিক নয়
তারা ভারতীয় বা চৈনিক
মোঙ্গলীয় বা রারা মুনি
বা কোন প্রকৃতিবাদি আর আধ্যাত্নবাদি নয়
এমনকি কোন বৈজ্ঞানিক বা ভাবুক কবি
যারা তাদের সমস্ত সত্বা একে অন্যের থেকে ভিন্ন করে
তারা সকলে বিশ্বাস করে তারা সকলেই সকলের অভিন্ন
এবং জীবিকার অন্যপ্রান্ত থেকে নিরলস প্রচেষ্টা
মানবতার জন্য উৎসর্গ করে
কারণ তারা জানে
মানুষ মানুষ হিসেবে জন্মায় না
মানুষ হোমোসেপিয়েন্স পর্বের প্রাণীবিশেষ
যাদের উন্নত মস্তিষ্ক তাদের বিশেষায়িত করে
একে অন্যের সুরক্ষায়
এবং পৃথিবীর পরম বন্ধু যারা তারা সকলের থেকে দুরে
সৃষ্টির কল্যাণে আছে গবেষণার মগ্ন
আমি এখনো অবাক হয়ে যাই
যখন শুনি প্রকৃতির অপশক্তির বিরুদ্ধে তৈরি বিধ্বংসী
কিন্তু কে তার খোজ রাখে
আর যারা অনাচারী শত্রু
তারা থাকে মানুষের খুব কাছে
আর মিথ্যা কথা গুলো বার বার বলে
যেন মনে হয় সমস্তই বিশ্বাসযোগ্য
তবে যারা সর্বশ্রেষ্ঠ তারা চোর ও ডাকাত
ধর্ষক ও মদ্যপায়ী
কৌশলে সম্পদ-বাড়ি-নারী আত্মসাৎ করে
এবং বলে এতে আমাদের হক আছে
আর তারা জানে না সম্মান ও সহিষ্ণুতার পথ
তারা বিক্ষিপ্ত মন্ত্রে দলাদলি করে
উসকে দেয় নিভানো আগুন
কারণ তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ হতে হবে
তাহলে আরো নারী আর দাস-দাসীতে হেরেম ভরে যাবে
আমি সত্যিই বলছি পৃথিবীতে কেউ অনাহারে থাকত না
যদি সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত হত
আর পৃথিবী অকৃপণ নয়
বরং আমরা অতিরঞ্জিত করে নষ্ট করি
এবং যতটা নষ্ট হয়
তার জন্য অবশ্যই কেউ বঞ্চিত হয়
তবে বিচার করার দিন শুরু হয়ে গিয়েছে
এবং ঐক্যবদ্ধ হবার দিন শুরু হয়ে গিয়েছে
তাই যারা মানব কৃষ্ণগহ্বর
তাদের সম্ভোগ জ্বালানি আর কেউ না দিক
কবি পরিচিতি

যোষেফ হাজরা। ছদ্ম নাম তারুণ্যের কবি। বর্তমান নিবাস – বঙ্গবন্ধুপাড়া, শেলাবুনিয়া, মোংলা, বাগেরহাট।
আমি আমার জীবন গঠনের সময় বহু জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। শহরের হাওয়া বা মফসলের জীবন এমনকি উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারার ছোঁয়া আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। আমার জন্মস্থান মোংলার স্বনামধন্য সেন্ট পলস হাসপাতালে। ১লা মে জন্ম হাওয়ায় ফাদার মারিনো রিগন আমার নাম যোষেফ (আধুনিকায়নে যোসেফ) রাখে। পিতা তাপস হাজরা, মাতা এন্ড্রো রিনা নাথ।
আমি প্রথম যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতা পড়ে তার সম্পর্কে জানি তখন থেকেই তিনি আমার অনুপ্রেরণা। এ জন্য চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও পরবর্তীতে সেন্ট পলস স্কুলের লাইব্রেরি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অপার সুযোগে লেখালেখির হাতে খড়ি দেই। সকল শিল্প-সংস্কৃতি থেকে আমি লেখালেখি করতে বেশি ভালবাসি। কারণ মনের কথা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে, ভাষার জাদুকারিত্বে, জ্ঞান ও দর্শনের যে সমন্বয় হয়, সেই আত্মদর্শনে সম্পূর্ণ আত্মতৃপ্ত করতে সক্ষম। আমি যদিও রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব মানি তবুও তার ধাঁচে আমি লিখি না। আমি কাব্য ও রচনায় অন্যান্য ঢং রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি যাতে কেউ পড়ামাত্রই বুঝতে পারে এই লেখনীর স্রষ্টা কেবলমাত্র আমি।