কেন ডাক তুমি মোরে
– সুমিত্র দত্ত রায়
তোমার মনে বাঁচার জন্য
মনের যেটুক আশা ছিলো,
তোমার নিঠুর মনের মাঝে
ভুল সে আশার মৃত্যু হলো।
মৃত আশার লাশের প্রতি
আমার কোন লোভ নেই,
আমার কোন ক্ষোভ নেই।
ভেবেছিলেম সবুজ মনে
সুখী হবো তোমায় এনে,
এখন বুঝি ভুল করেছি
আমার মাঝে তোমায় টেনে।
হতাশ হয়ে যে বাঁচতে হবে
এমন তো আর মন নেই,
আমার কোন ক্ষোভ নেই।
সন্ধ্যা রাতে মনের সাথে
মিলে যখন তোমায় দেখি,
দেখার শেষে আজকে বুঝি;
আলেয়া দেখা সবটা ফাঁকি।
নতুন তারে বাঁধবো কারে?
বাঁধার মত সে চোখ নেই,
আমার কোন ক্ষোভ নেই।
ইচ্ছে আর সময়
– সুমিত্র দত্ত রায়
সময় চলে যায়,
ইচ্ছে চলে যায়,
হামেশাই হয়।
যদি, সময় রয়ে যায়,
ইচ্ছেটা চলে যায়,
হতাশ হৃদয়।
সময় চলে যায়,
ইচ্ছে রয়ে যায়,
অঘটন তায় !
কিন্তু, সময় রয়ে যায়,
ইচ্ছেও রয়ে যায়,
সঠিক পন্থায়।
সময় ধ্রুবক নয়,
ইচ্ছের চলতে হয়,
সময়কে মেপে।
যাতে, ইচ্ছের আনাগোনা,
সত্ত্বার বিকাশে না
পোড়ে অনুতাপে
প্রতিফলন
– সুমিত্র দত্ত রায়
রঙিন কাঁচে –
সাদা হয় লাল,
সবুজ হলুদ,
শুধুমাত্র কাঁচের তফাৎ।
সাদা মন স্বচ্ছ কাঁচ –
পারদের অনুলেপনে,
আর সে কোন কিছুই
নিজে ধরে রাখে না,
সব বিম্বই প্রতিবিম্ব হয়।
একপিঠ তখনও –
লাল আস্তরণে ঘেরা,
নিষ্প্রভ অন্ধকার ময়।
তবে কেন আর
রঙিন চোখে দেখা?
কেনইবা এ অনুলেপন?
স্বচ্ছই থাকতে
দাও না ওকে,
যেতে দাও না –
মুক্ত আলোকে,
কোন বন্ধন ছাড়াই ;
স্বচ্ছই থাকুক না কাঁচ
স্ব মহিমায়।
মনের আমি
– সুমিত্র দত্ত রায়
এখন সংগ্রাম দুজনের –
মন আর আমি।
জীবন মজা লুটছে ;
তার চারদিকে থাকে থাকে ইঁট,
সাথে সিমেন্ট আর বালি,
প্রাচীর যদিও শক্ত, মজবুত –
তবুও সারি সারি ইঁট।
প্রতিটা ক্ষোভ, প্রতিটা আঘাত,
বালিখসা প্লাস্টার যেন!
তবু তাকে মানতেই হবে –
এই নাকি জীবনের রীতি,
জন্মাবধি এই ক্লিষ্ট ক্ষুধার্ত সংগ্রাম,
নির্মম, নিষ্ঠুর আর ক্লেদাক্ত।
সেই কিন্তু চিরসত্য নিরন্তর।
মন এক জ্বলন্ত অঙ্গার,
এক জীবন্ত জিজ্ঞাসা,
ছাইচাপা আগুনই –
শুধু উত্তর যোগাবে।
প্রতিটা গুহা কন্দরের মুখ –
পাথর দিয়ে চাপা।
জানি না কত আর বইবো পাথর।
এ যাত্রায় মন বেঁচে গেলো,
আমার আমি এসে –
বোঝাটাকে কাঁধে তুললাম,
আর কোন প্রশ্নই উঠলো না।
অনেক অনেক পথ এখনো চলার,
অনন্ত অসীমেরে সংগী মানলাম।
এখন আমি কেবল তারই ক্রীতদাস।
শিথিল স্বপ্ন
– সুমিত্র দত্ত রায়
শিথিল স্বপ্ন রেখো না যত্ন করে
বাকি জীবনটা ভরে,
বহুদিনে বহুযুগে বন্দী হবার রোগে
ভুগেছ অন্ধকারে।
রূপালী পর্দা নয় এ জীবন,
কেন ব্যর্থতা? কেন এ কাঁদন?
পাষাণ কঠিন মুক্ত নবীন -
চলো আলো পথ ধরে,
থেকো না অন্ধকারে।
চল অরুণাচলের পথে -
ভেঙে এই মায়াজাল ,
চল নতুন যুগের প্রাতে -
ছেড়ে পুরনো এ কঙ্কাল,
বাঁধন ভাঙার এই শুভদিনে -
আঘাত হানো গো ব্যর্থ প্রাচীনে ,
শুধু দক্ষতা রেখো গো স্মরণে -
এগোও পিছু না ফিরে,
ডুবো না অন্ধকারে।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।