পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা(বন্ধ করো ত্রাস, ইচ্ছে ভালবাসা, লাকড়ি, অপ্রাসঙ্গিক, শব্দ প্রলয় যখন)

বন্ধ করো ত্রাস

– পারমিতা ব্যানার্জি

যুদ্ধ চলছে ঘরে ঘরে
যুদ্ধ তোমার মনে।
যুদ্ধ হচ্ছে দেশে দেশে
যুদ্ধ নিজের সনে!

গোলাগুলি যুদ্ধ শেষে
জীবন যুদ্ধ আসে।
চাইনা যুদ্ধ, তবুও যুদ্ধ
হিংসা ও সন্ত্রাসে।

রূদ্ধ হয় কতই শৈশব
লোভের অট্টহাসে।
আর কত কাল বাঁচব
বিশ্বযুদ্ধের ত্রাসে!!

মানবতা এসে জাগো
বন্ধ হোক বিদ্বেষ!
এসো মানুষ ছিন্ন করি
যুদ্ধরূপীর বেশ!!

ইচ্ছে ভালবাসা

– পারমিতা ব্যানার্জি

আমি হইনি __
শীতের রোদে ভেজা
পিঠে বিছিয়ে থাকা এলোচুল।
আমি শুনিনি
শিউলি ঝরার স্বর্গীয় শব্দ ___
তবু হতে চাইনি
শিশির ভেজা শুভ্র শিউলি ___
আমি যা হতে পারব না,
তা কেন চাইব!
তবু খুব ইচ্ছে করে ___
বকুল গন্ধ হয়ে ছড়িয়ে পড়তে!
শরতের কাশ হয়ে
মাথা দোলাতে নদীর ধারে।
নাই বা পেলাম আকাশ কুসুম ___
পারি না কী হতে
শুধুই “ভালবাসা”!!!

লাকড়ি

– পারমিতা ব্যানার্জি

যখন
সোনা রঙে ভরে যায়
অমলতাস।
চেনা ফুল গুলোয়
রক্তিম হয়ে ওঠে বনানী।
টিয়া রঙ গায়ে মেখে
ঝিলমিল করে কিশলয়
বুড়ো অশত্থের ডালে।
ডাক দিয়ে যায় যৌবন…
তখন _
তুমি কবিতা হয়ে যাও!

আমি কলম ধরিনি কখনো,
কেউ শেখায়নি লিখতে।
আমি শুধু বনে বনে ঘুরে ঘুরে
লাকড়ির কাঠ জোগাড় করি।
আঁকড়ে ধরে থাকি!

সূর্য ডুবে গেলে _
পাখিরা ফেরে বাসায়,
আকাশ ভরে তারায়,
ফিরে আসি মায়ের কাছে।
মা ঐ লাকড়ির কাঠি জ্বালায়,
ভাত রান্না করে _
আমি দেখি ভাতের ধোঁয়ায়
তোমার মুখ!!!
আবছা হয়ে যায় চোখ!
এলোমেলো ধোঁয়ায়
কবিতা বুঝি পথ হারায়!

অপ্রাসঙ্গিক

– পারমিতা ব্যানার্জি

সব প্রেম কী বয়ে যায়
নদীর মতো _
বাধা কাটিয়ে এঁকে বেঁকে,
নিজের মতো করে!
কী জানি!

নদীর বুকে থাকা নুড়িরা,
জানে কী সেই সব?
হদিস রাখে কী প্রেমের_
যা বলা হয়নি কখনো!
কে জানে!

গভীরে, আরো গভীরে _
প্রেম গেঁথে আছে
নদীর জলেরও নীচে !
নুড়ি আর বালুর খাঁজে!
কেই বা জানে!

নদী পৌঁছে যায় সাগরে।
না-বলা প্রেম
অনাদরে পড়ে থাকে
কঠিন নুড়ির আড়ালে _
হয়ত অনন্তকাল!

শব্দ প্রলয় যখন

– পারমিতা ব্যানার্জি

কত যে শব্দের ঝড়
ঘুরে বেড়ায় আবহের শূন্যে!
কোনোটা ধাক্কা দেয় পাহাড়ে_
চুরমার হয় আঘাতে!
কোনোটা হারায় মরুপথে_
বালু ঝড়ের দাপটে।
বহতী নদীও বয়ে নিয়ে যায়
কত শব্দ_
মিশিয়ে দেয় অতলান্ত
সাগর জলে।

এরা কেউ আমার চেনা,
কেউ অচেনা ।
কেউ ছুঁয়ে যায় আমার হৃদয়!
বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে
আমার স্বচ্ছ মনের দেওয়ালে!

ওরা সুন্দর!!!
অদ্ভুত ওদের এলোমেলো গতি!
বাক্য হয়ে ওঠে কেউ কেউ!
কেউ বা ভেঙে টুকরো হয়ে যায়
অক্ষরে অক্ষরে।
জানি না ওরা কেউ কেউ
আমার কবিতা হয় কী না!

তবে জানি পাহাড় নদী সাগর
মরুভূমি বনানীতে ওরা_
একবারের জন্য হলেও
এক একটা কবিতা হয়ে ওঠে!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।