বিশ্বপথিক
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
সকালবেলা মনটা বড়
উঠোন জুড়ে উদার হাওয়া বইছে।
জাতপাতের ভাঙছি বেড়া
জানলা খুলে দেখছি তামাম বিশ্ব,
বেলা বাড়লে দরজায় খিল
আমার আমি তোমার তুমি _
আমরা সবাই এমনি অধিকাংশ।
তিনি কিন্তু অন্যরকম
নিজের ধর্ম আঁকড়ে আছেন ধরে,
যখন ধুলার পথে নামলেন
পথের তিনি, বিশ্বপথিক
খোলা হাওয়া বইছে তখন
সদরে অন্দরে,
সারা আকাশ জুড়ে রবি_
সে একটা দেখার মতন দৃশ্য।
উড়ন্ত সারসের কাছে
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
এখন ঘড়িতে ভোর ছ’ টা
আকাশে আলোর ছটা কিছু এখনও দৃশ্যমান।
ঝিলের চারপাশে গাছ _ আম, নিম, জামরুল,
সেইসব গাছ থেকে সাদা সাদা বকেরা কেবল
উড়ে এসে জল থেকে তুলে নিচ্ছে মাছেদের পো।
শুধু বক নয়,মাছরাঙাও নেমেছে শিকারে,
আমি শুধু দেখে যাচ্ছি _
আনন্দ ছড়িয়ে যাচ্ছে শিরায় শিরায়।
ক’টা দিন পরে
এইসব স্মৃতি নিয়ে চলে যাব কাজের শহরে,
সেতু আর নতুন প্রাসাদে যা কেবলই বর্ধমান।
সে আকাশ দিয়েও কখনও
এইসব সারসেরা উড়ে যায় নিজের মতন
স্বচ্ছ কোন জলের দর্পণ তারা পায় না সেখানে।
শিকারী জঙ্গীর দল গোপনে আগুন পোষে,
ওৎ পেতে বসে থাকে,
তাদের নরম মাংসে শুধু লোভ তার।
সুন্দরে ভোলে না চোখ
দৃষ্টিতেও ক্ষুধার বসতি।
একবার মওকা পেলে ছারখার করে দেবে
সরোবর, সাজানো বাগান।
উড়ন্ত সারস তুমি উড়ে যাও দূরে আরও দূরে
কোন পর্ণমোচী বৃক্ষে তোমার আস্তানায় গিয়ে বাঁচো
ভুল করে এখানে নেমো না।
কেউ কেউ পান্থপাদপ
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
সকলেই পান্থপাদপ হতে পারে না,
কেউ কেউ পান্থপাদপ হয়ে যায়
সময়ের হাত ধরে
ত্যাগে, শ্রমে, তিতিক্ষায়,
পাখি, কীট, পতঙ্গ,মানুষ
সকলেই তার কোলে
পেতে চায় একান্ত আশ্রয়।
সকলেই স্রোতের বিরুদ্ধে
সাঁতার কাটতে পারে না,
কেউ কেউ পারে
চোয়ালে জেদের মুদ্রা এঁকে
অনাদরে, উপেক্ষায় বিনা পুরস্কারে।
অনেকেই তফাতে থেকে যায়।
এইভাবে কেউ কেউ
কালের বঞ্চনায় চোখ বুঁজে
একদিন কালকে অতিক্রম করে,
মহাকাল বুকে ধরে তাকে।
অকালমৃত্যু
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
কেউ কি তাকে বলেছিল এমনি করে যাওয়া
যেতেই হবে যখন
তখন মিথ্যে কেন দেরি?
তারায় ভরা আকাশ
আর জোয়ার ভাটায় নদী বয়ে চলুক,
তার জন্য তৈরি আছে ফেরি।
এমন কথা কেউ বলেনি,
মনের মধ্যে তবে
তার কী এমন দুঃখ ছিল
খোঁজ রাখেনি কেউ,
কাছের যারা দূরেই ছিল এতই তার থেকে,
বুকের মধ্যে উথালপাথাল
আছড়ে পড়ে ঢেউ।
আমার এ দেশ
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
শত কোটি মানুষের স্বপ্নে জাগে
আমার এ দেশ
হাজারো শহীদের রক্তে উজ্জীবিত
হয়েছে স্বাধীন।
এখনও বুভুক্ষু প্রাণ, উপেক্ষিত জীবনের দাবি
বঞ্চিত মানুষের স্বপ্নের ঘটছে সমাধি,
অন্নের আকুতি জাগে পথে ও প্রান্তরে।
তবু এই দেশ
নিত্য স্পন্দিত বুকে, এ দেহের নীল ধমনীতে,
দৃপ্ত প্রাণ আগুয়ান
সীমান্তে আগন্তুক শত্রু যদি
জন্ম-অধিকার যদি দলিত মাটিতে।
স্বপ্নে ও জাগরণে
নিত্য জাগে আমার এ দেশ
এরই মধ্যে জাগ্রত আমার পৃথিবী।
কবি পরিচিতি

জন্ম ১৯৫০। স্নাতক। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির শুরু। কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প, অণু গল্প, নিবন্ধ লিখে থাকেন। বড়দের জন্য, ছোটদের জন্যও। কিছু কিছু অনুবাদও করেছেন, ইংরেজি থেকে বাংলায় — কবিতার, গল্পের। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে — আসলে আলোর জন্যে, এখানে তরঙ্গ এখানে জীবন, জলের উপমা,অপ্রিয় শব্দমালা (এককভাবে), যাঁরা কবিতা পড়েন না (দুজনে মিলে), ছড়ার মজা খাস্তা গজা ও চার মাথার মোড় (চারজনে মিলে)।