বিগত হেমন্ত-কথা
– পারমিতা ব্যানার্জি
হেমন্ত পরিসর বড় অল্প!
অগোচরে থাকে অনেকের!
ঢালে প্রেম যতটা সাধ্য হয়।
গোলায় গোলায় ধান ভরে।
নবাণ্ণের করে আয়োজন __
হেমন্তের হিমেল হাওয়ায়__
ভেসে যায় আদরেরই সুর।
লুকিয়ে থাকা পাখিটাকে
কেউ দেখেনি কোনোদিন।
তবু সে প্রেম বিলিয়ে দেয়!
হেমন্ত আকাশে হিমমাখা
চাঁদ ওঠে।ওঠে সুখ-তারা!
রাইফেল লুকোয় সৈনিক!
যুদ্ধ চায় না যে হৈমন্তিকা!
হেমন্ত হাসুক না দীর্ঘ দিন!
ভরা পেট
– পারমিতা ব্যানার্জি
শিমুলতলার
সেই ফ্রক পরা ছোট্ট মেয়েটি…
উস্ক খুস্ক চুল __
পায়ে ছেঁড়া হাওয়াই চটি__
ঘুরে ঘুরে বেড়ায়
শিমুলতলা বাজারের
মুড়ি বিস্কুট চায়ের দোকানে।
পেটে যে আগুন!
কেউ কেউ খেতে দেয় __
কেউ বা দূর দূর করে __
কেউ কেউ মেপে নেয় __
চেখে দেখে!
মেনে নিতে হয় সবকিছুই।
পেটে যে আগুন!
বাপটা উধাও অনেকদিন,
মাকে ভরা পেটে রেখে।
মা ছোট ভাইকে নিয়ে
পথ খুঁজে নেয়।
ওর জায়গা নেই সেখানে।
মা দিয়েছে খেদিয়ে।
পেটে আগুন নিয়ে
পালেদের রোয়াকে ঘুমায়।
মাঝরাতে
টেনে নিয়ে যায় কেউ __
উচ্ছিষ্টের মত
ফেলে দিয়ে যায় ভোরে!
অবশেষে __
পেট ভরে গেল একদিন!!
কেন এলে অসময়ে
– পারমিতা ব্যানার্জি
বড় অসময়ে, তুমি এসে যাও __
মুখোমুখি এসে দাঁড়াও!
যে কথা জানাতে চাই
হয় না বলা __
মাঝপথে থেমে গেছে পথ চলা।
তানপুরায় পড়েছে ধূলা।
ভুলে গেছি সেই গান __
হারিয়ে গেছে যত অভিমান।
বড়ো অসময়ে তুমি এলে আজ!
এখন যে আমার
অগোচরে কাঁদার সময় __
কোহিনূর
– পারমিতা ব্যানার্জি
বাজারের থলের
বারান্দা থেকে ঝুলে আছে
লাউডগার আকর্ষ।
গলদঘর্ম সব্জি আধ সেদ্ধ,
আমার মনের যুদ্ধের মতো।
সাপের মতো
কিলবিলে কথার লাইনের
ফাঁক গলে ফাঁকিবাজি!
ফণা তোলার হিম্মত
ছক কাটা লুডোর বোর্ডেই!
গুড়ের মধ্যে টোপা কুলের
গড়াগড়ি __
মাখো মাখো সম্পর্কের দই!
টইটম্বুর তেলে মনের বড়া __
কিংবা লাউ শাকের চচ্চড়ি!
জীবনটা এখানেই শেষ নয়।
একটার পর একটা ঘরের
চাবি খুলি __
কিংবা বাক্সের ভিতর বাক্স!
শেষ বাক্সে হারানিধি!
প্রতিবাদ হোক
– পারমিতা ব্যানার্জি
হাওয়ায় ভাসছে
পোড়া গন্ধ __
ধোঁয়ায়, কান্নায়
চোখ হয়েছে লাল।
বুঝি না কেন এসব
মানতেই হবে
বাঁচব যতকাল।
লকারে কেন থাকে
বিবেক বন্ধ!
মানবতাও অন্ধ!
কলম উঠুক গর্জে..
এখনই হতে হবে
প্রতিবাদ নির্ভেজাল!
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।