সুমিত্র দত্ত রায় – কবিতা (বৃষ্টি রানীর মিষ্টি হাসি, করুণাসিন্ধু, বন্ধনডোর, শেষ ইন্ধন, আগমনী)

বৃষ্টি রানীর মিষ্টি হাসি

– সুমিত্র দত্ত রায়

বৃষ্টি পড়ছে টাপুর টুপুর​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ টাপুর টুপুর,​
বাজছে নুপুর গাছের পাতায়​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বাজছে নুপুর।​
কালো মেঘের চোখ রাঙানি​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সকাল দুপুর,​
কালো মেয়ের পায়ে তবুও​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বাজছে ঘুঙুর।​
বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখি​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মেঘ গুড়গুড়,​
টাপুর টুপুর, বাজছে নুপুর,​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বাজছে ঘুঙুর।

করুণাসিন্ধু

– সুমিত্র দত্ত রায়

আমার বন্ধু করুণাসিন্ধু মস্ত সে এক কবি,​
বসে কিছুক্ষণ হয়ে আনমন লেখাটাই ওর হবি।​
​ ​ ​ ​ ​ ​ লেখে কতকিছু, না হলেও মানে,​
​ ​ ​ ​ ​ ​ লেখাগুলো দামী এ কথা সে জানে।​
অভিধান থেকে বাছাবাছা কথা জড়ো করে একমনে,​
তারপর সব একএক করে জোড়ে সে কালির টানে।​

শব্দগুলোকে শক্ত করে সে সারার্থ রাখে গুপ্ত,​
পাঠকেরা যাতে মাথাটি নাড়ায় না হলেও মানে রপ্ত।​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ বুঝলে সবাই দাম কমে যায়,​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ তাই তো শক্ত শব্দ জোটায়।​
কার মানে হলো, কার হলো না কজনেবা খোঁজ রাখে?​
আছে তো শব্দ করতে জব্দ মূর্খ সমাজটাকে।​

বর্ণনা তার মেলা বেশভার পরণেতে প্যান্ট পাঞ্জাবি,​
মুখে সিগারেট বুকতে বোতাম হাতেঘড়ি বেশ দামী!​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ লেখার মাথাটা থাক বা না থাক​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ মুন্ডুটা বলে ধনী মুছে যাক।​
তাইতো বেশের পরিবেশে সেই সুচিত্রটা তুলে ধরে,​
মদ না খেলে লিখবে কি? তাই বিলিতি দেশি ছেড়ে।​

এ হেন বন্ধু করুনাসিন্ধু ​ বর্ননা কতো দেব আর?​
জানতে চাইলে বলতেপারি পাত্তা কোথা মেলে তার।​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দিনে কফি হাউজ রাত্রে গ্রান্ডে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ শনি রবিবার রেস গ্রাউন্ডে!​
যদি চাও তারে দেখতে পাবে খুঁজে বারকর একবার,​
তখন দেখো কত্ত বাড়ানো না বাকি আছে লেখবার?​

বন্ধনডোর

– সুমিত্র দত্ত রায়

‘তোমায় আমি ভালোবাসি,
সোমালী,
তোমায় আমি ভীষণ ভালোবাসি।’
কোথাও কি বজ্রপাত হলো?
ভাব না কেন মেঘ পাহাড়ের খেলা,
এই বেলা …আরও কত বেলা..
খেলা. ..আর খেলা …।

মন্দজনে যা বলে তা বলুক
কতটা কি এসে যায় তাতে!
রিমঝিম বাদল বা ঝিকমিকে রোদ
কারুর একার তো নয়!
কোন দুঃখ বা সুখই নয় ভুলবার,
তা ছাড়া তুমি নিজেও তো জানো –
সোমালী,
আমি যে তোমায় কত ভালোবাসি।

মনে পরে সেই বিশেষ দিনটার কথা।
মন ছেড়ে যেদিন তুমি বাইরে এসেছিলে,
এলোমেলো কথার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল,
ম্যাসেঞ্জারে চলছিল বাঘবন্দী খেলা,
দরজা ভেজানোতেও ত্রুটি তো দেখিনি।
চাবুকের ঘায়ে ছিলে ঘায়েল তখন,
আমি তোমার ললাট চুমেছিলাম –
পরিয়ে দিয়েছি জয়মাল্য তোমার গলায়।
শান্ত এ বক্ষমাঝে তোমার তোমাকে
আমি প্রতিষ্ঠা করলাম।

বলতে পারো?
একই তরী বাইবো কত আর!
আর নয়,
এবার ছড়িয়ে পরো মুক্ত নীলাকাশে,
মেঘলার বৃষ্টি হয়ে
ঝরে যাও অশান্ত নদীর বুকে।
সাগরকন্যার রূপে একবার ফিরে এসো
সেই নদীপথে, জনপদের সীমানা ছাড়িয়ে,
আমি যে রয়েছি তোমারই পথ চেয়ে
অন্তত অসীমের নীরব নয়ানে।

শেষ ইন্ধন

– সুমিত্র দত্ত রায়

লজ্জা তোমার,
নিজের হাতে যেদিন সঁপেছিলে,
আমার এ বজ্রমুষ্টি মাঝে।
তোমার মনের গোপণে –
শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে।
সুখানুভূতি ছিলো আনন্দ বিভোর।
তোমার আরও কাছে এলাম,
অনেক…অনেক…নিবিড় হলাম,
চেতনা হারালো আমার মানব বন্ধনে।

ঈশ্বর সাক্ষী করে,
আদিম পুরুষ আদম এসেছিল –
ইভের সন্ধানে ,আমার ব্যাকুল মনে।
প্রার্থনা করেছি তাঁর দরবারে,
দয়াময় দয়া করো,একবার দয়া করো –
আমার এ মনের মনিগুহা হতে –
আর কখনো,কখনোই যেতে দিও না ওকে।

কিন্তু এ কী হলো …?

রাতের উল্লাসে মত্ত সাগর বেলায় –
করুণ কণ্ঠ ভেসে ভেসে হারিয়ে গেল।
তোমার আর্তনাদ কালের গর্জনে স্তিমিত,
লোলুপ হিংস্র জান্তব পীড়ন থেকে –
নিজের সম্ভ্রমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে,
নিজেই হারিয়ে গেলে কালের সাগরে।

ঢেউ কিন্তু তখনো চলছিল ,
শুধু তুমি নেই।

আমি মাত্র বিশ মিনিটের দূরে।

মন দিয়ে গাইছিলে তাই –
ঘুরতে ঘুরতে এসেছিলাম শাঁখের সন্ধানে,
লক্ষীদেবীর আসনে রাখবো বলে।
স্বর্গদ্বারে।

তোমার থেকে মাত্র…বিশ…মিনিট…তবুও …

ঢেউ কিন্তু তখনো চলছিল,

তার তরঙ্গের নিয়মিত ধারা বজায় রেখে।

আমিই শুধু নিস্তরঙ্গ মাঝে।

আজ যে…তুমি….হারিয়ে গেলে …
মহাসিন্ধু পানে..কোথায় …কোনখানে…

আমি ভীষণ একা।

আগমনী

– সুমিত্র দত্ত রায়

উৎসুক মন;
প্রজ্বলিত দীপাধার নিস্প্রভ,
তমসাবৃত এখনও নিস্ফলা রজনী,
তারই মাঝে কিন্তু আবছায়ায় দৃষ্টি –
স্থির, অচঞ্চল।

আকর্ষণ !
অভিকর্ষ,মহাকর্ষের সীমানা ছাড়ায়ে,
হ্যারিকেন,টর্নেডো বা সাইক্লোনের –
কম্পন পর্বের সমাপ্তিও এখন বর্তমান।
নিশ্চিন্ত বিরাম।

মুহূর্তকাল লাভাস্রোতে ভাসন্ত চেতনা –
প্রার্থী হয়ে রয়েছে আশ্রয় সন্ধানে।
পিচ্ছিল দূর্গম পথ অতিক্রমি,
স্থিরভাবে খুঁজে পায় নবগৃহ তার –
নব পরিণতি।

অন্ধকারের বন্দীশালায় কিছুকাল থেকে
অস্তিত্ব প্রকাশ করে আপন সত্বার।
সময় আসে নব জাগরণের,
নব দিবালোকের দরশনে ব্যকুল অন্তর।
এক মুক্ত জীবন –
স্বাগত জানায় চিরন্তন নব দিবাকরে,
আগমনী শঙ্খ বেজে ওঠে।


কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।

আমি ছেলেবেলা থে‌কে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু,  আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।