নৈঃশব্দ্য
– পারমিতা ব্যানার্জি
তখনও সূর্য আর মাটির
হয়নি কানাকানি।
শালবনে শীতের অপরাহ্ণ
পায়ে পায়ে এগোয়…
অশরীরী আবহে খসখস
পাতার মোচড়!
বাতাস বলে রাত যে বাকি!
জোনাকিরা রাতভর
জ্বালিয়ে রাখবে শরীর __
গরম করে রাখবে
বাবুই-এর ঘর, এ বিজনে!
রুপোলী তারার দল
হার মেনে নেয় যত হেঁয়ালি!
অন্ধকার সব ঘর
পড়ে থাকে জোনাকি-হীন
ফুটপাথের শালবনে!
রাতজাগা নক্ষত্র খেলা করে
শতছিন্ন ত্রিপলে!
অন্ধ হয়ে থাকে শীত ঘুম!
ছক্কায় পুটে
– পারমিতা ব্যানার্জি
অদম্য জটিল ছোবলে,
আজ কাল পরশুর গল্প!
ঠাণ্ডায় পদাবলীর ইট কাঠ…
ফুটপাথে উলঙ্গ যিশু!!
রাত বিরেতে ধামসা মাদল
বনপলাশীর সুর…
হাতের মুঠোয় ধরা জীবন
উর্ণনাভের আঠালো জাল।
ভেজা শিশিরের ঘাসে
ভোর এসে পড়ে টুপ করে__
কাঠঠোকরা ব্যস্ত
শান দেওয়াতে শক্ত ঠোঁটে!
পথ যখন এবরোখেবড়ো…
সাত কাহনের জীবনচরিত
গোছানো সুখ!
চল রে ছুটে পলাশ যৌবন।
শুভম
– পারমিতা ব্যানার্জি
ঘুম চোখে দেখি
হোয়াট্স অ্যাপে এসে লুটোচ্ছে
এক আদুরে সকাল।
শীতে জড়োসড়ো সূর্য্যি-রাঙা
“সুপ্রভাত”!!
সকালে ঘুম ছেড়ে উঠে
ভীষণ রোমান্টিক ভাবে বাঁচতে
ইচ্ছে করলো…
রোমান্টিক হতে ইচ্ছে করছে
পৌষের পাকা ধানের গন্ধে _
বাঁচতে ইচ্ছে করে
বন্ধ জুট মিলের দরজাটা খুলে
ভালবাসা জাগিয়ে _
করোনার ঢেউ যেন শান্ত হয়ে
তীর ছুঁতে চায় রোমান্টিক
আদরের পৃথিবীর!
হোয়াট্স অ্যাপের পাতার
সেই “সুপ্রভাত” আছড়ে পড়ুক
ভালবাসা নিয়ে,
আদুরে রোদ্দুরের মতো!
যেন কুসুম রোদ মাখা
মধু বসন্তের বন্ধু হতে পারি __
আরো একবার!
ছন্দময় বিশ্ব
– পারমিতা ব্যানার্জি
আকাশ বড় নীরব মায়াময়!
অন্ততঃ আমার কাছে।
মহাজাগতিক কোনো তরঙ্গ,
না পড়ে আমার চোখে,
না পৌঁছায় আমার কর্ণকুহরে।
হয়তো ওরা চির চঞ্চল….
ওরা মহাকাশ দাপিয়ে বেড়ায়,
মেতে থাকে এক বিশ্ব খেলায়।
আমি শুধু দেখি নীল….
নীলের মনোরম কাব্যিকতা!
দেখি ছন্দময় চাঁদ, সূর্য, তারা!
অদ্ভুত তাদের কাব্য মূর্ছনা!
শালীনতা তাদের ছন্দ-খেলায়।
মত্ত মহাবিশ্বের এই কবিতায়
আমি বারবার জন্মাতে চাই!
প্রেম এসেছিল ভ্রমি
– পারমিতা ব্যানার্জি
এক খরতাপ গ্রীষ্মের দুপুরে
ভুল করে ডেকেছিল কোকিল।
হয়তো তোমারই জন্য __
সেই সুরের লগনে
না দেখা স্পর্শ অনুভবে
উতলা হয়েছিল মন…
দেখিনি তোমাকে…
দেখিনি সেই কোকিলকেও,
যার অন্তরে জেগেছিল
নব যৌবনের ডাক…
খুব তাড়াতাড়ি কী জানি কেন
এসে পড়েছিল ফাগুন..
আবীরে রাঙানো প্রেম নিয়ে
বসন্ত এলো…
তুমি বলেছিলে,
এ ভালবাসা চিরদিনের!
আপ্লুত হয়ে বলছিলাম সেদিন
“তাই হোক”।
ভুল করে এলেও আসুক নাহয়
এমন সত্যি প্রেম!
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।