নিঃসুপ্ত
– সুমিত্র দত্ত রায়
আমায় ছেড়ে আমিও চলে গেলাম।
কোথায় গেলাম?
হয়তো কোন গভীর কালো বনে,
কিংবা কোন অথৈ সায়র তলে,
হতেও পারে উঁচু কোন হিমাদ্রি শিখরে।
হাতে এখন সময় অনেক কম
এম্বুলেন্স, ঘাত প্রতিঘাতে ,লাশের ছড়াছড়ি
শকুন দৃষ্টি মেলে এখন অপেক্ষাতে আছে।
যদিও ফোকাসে তার
এখনো আমি দূরে, বহূদূরে।
জীবন সেতো হারিয়ে গেছে,
সবুজ বলে অবুঝ কি কেউ থাকে?
চারদিকে দেখি ধূ…ধূ…মরু সাহারা,
কতো না ক্লান্তি জমে আছে..জলে
শান্তি, তৃষ্ণা,বিরাম হারিয়ে গেছে।
সময় নেই ..শান্তি কই..
ভাবতে ভাবতে আমিও চলে গেলাম।
স্পন্দন
– সুমিত্র দত্ত রায়
কালের স্পন্দন
বিশ্ব স্রষ্টা,
মেঘের স্পন্দন
নাদ স্রষ্টা,
মনের স্পন্দন
শিল্প স্রষ্টা।
লহর উচ্ছলিত
হয় আঘাতে,
জল তরঙ্গিত
হয় আঘাতে,
মন আন্দোলিত
হয় আঘাতে।
মনের আঘাত
জীবন আলোড়ন
সৃষ্টির চেতনা।
প্রতি কষাঘাত
জীবনের জয়ে
মুক্তির প্রেরণা।
আঘাত বা স্পন্দন
সংগ্রামের উৎস
স্বাগত তাদের,
পানসে জীবনে লাঠি
প্রথম পদক্ষেপ
জীবন জয়ের।
আনন্দঘন
– সুমিত্র দত্ত রায়
ভৈরবে জাগরণ,
প্রাণ মন ভরাবো সংগীতে, হলো না।
একবুক কথা গাঁথবো ছন্দে কবিতায়, হলো না।
শিশির ভেজা মাঠে প্রথম উদিত আলো,
আঁকবো তুলি দিয়ে, হলো না।
সকাল পেড়িয়ে সূর্য অস্তমিত প্রায়,
এখন আকাশের চাঁদ, কবির কল্পনা। তবু,
ভোর আকাশে শোনা কোকিল কূহু,জাগায় চেতনা।
আবছায়া ভোর রাতে খুঁজে পাই, চিত্র প্রেরণা।
চাঁদও ডুবু ডুবু রাত ফুরোনোর পালা,
কল্পনা দল এখন ঘুরছে চারপাশে,
দিন রাতের অভিজ্ঞতা সমস্ত মন জুড়ে,
ঘুম নেমে আসছে ক্লান্ত দুচোখ ভরে।
শেষ বারের মত হিসেব মেলাতে চাই,
শিল্পী মনের হিসেব।
দেবদূত বলে যায় –
শিল্প কলা সবার জন্য নয়, তবে শিল্পী সকলেই।
প্রকাশ বেষ্টিত থাকে চেতনা আধারে।
মঙ্গলের বর্ণমালা
– সুমিত্র দত্ত রায়
প্রতিদিনই সূর্য ওঠে,
কখনো আলো ছড়ায় ,
কখনো বা লুকোয় মেঘেদের ভীড়ে,
তবুও সূর্য ওঠে প্রতিদিনই –
একই আকাশের আশ্রয়ে থেকে।
সব সকাল কিন্তু তবুও এক নয়,
সেখানে খেলা করে বহূ নট নটি।
মন, কাল, চেতনায় রোজই গল্প চলে,
কখনও বা কাক, বেড়ালের ডাকে-
কিংবা কুকুর কান্নায়, প্রকৃতি অস্থির।
প্রতিদিন সেই একই চোখে দেখি,
কখনো দেখি দেখার জন্য,
কখনো আয়নায় প্রতিবিম্ব রূপে,
দৃষ্টি ছড়ায় মন ,আপনার পরিমণ্ডলেতে
ভাবনার বেড়াজাল পেতে।
তবু সব নজরই এক নয়।
কখনো চঞ্চল কখনো বা স্থির –
আহত বিহংগেরে পিঞ্জরে সাজাতে,
কাল, গতি বা ঘটনা প্রবাহে অনবরত –
নজর বদলায় নানারকম দৃষ্টিভঙ্গিতে।
বন্ধু
– সুমিত্র দত্ত রায়
শন শন করে বইছে বাতাস
কল কল সুরে নদী,
পাল তুলে দেখ চলছে তরনী
ঠিকানাটা জানো যদি,
জানিও বন্ধু একবার শুধু জানিও আমারে।
বন বন করে ঘুরছে পৃথিবী
সংযম নিয়ে চাঁদ,
মনটাকে যদি পার গো বাঁধতে
পাও নতুনের স্বাদ।
দেখিও বন্ধু একবার শুধু দেখিও আমারে।
উন্মন মনে ছুটছে জীবন
আয়ু ফুরানোর দিকে,
ফুরাবে যখন লাভ কি তখন
বাকি জীবনটা থেকে?
পলে পলে শেষ সময় বিশেষ
সংযত করে যদি,
গড়তে পার গো ধাবমান কোনো
শুধু সময়ের নদী,
চিনিও বন্ধু একবার শুধু চিনিও আমারে।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।