চোদ্দো পুরুষ উদ্ধার
– অজিত কুমার কর
অনাদরে অবহেলায় কাটলো জীবন তাঁর
সাড়ম্বরে আত্মজদের পালন লোকাচার!
তৃষাতে জল পায়নি চেয়ে
সুখনিদ্রা খেয়েদেয়ে
পিণ্ড দিয়ে চোদ্দোপুরুষ তর্পণে উদ্ধার!
জীবদ্দশায় দেখিয়েছে দুর্বিনীত ভাব
শ্রদ্ধা ভক্তি ভালবাসার অত্যন্ত অভাব।
সেসব দৃশ্য যায় না দেখা
শব্দবন্ধ কোথায় শেখা?
কুরুচিতে পরিপূর্ণ ওদের ব্যবহার।
জন্মদাত্রীর কী অবদান বুঝল না কেউ হায়
মাতৃহারা শিশুরা কি তেমন আদর পায়?
কত কষ্ট সহ্য করে
যখন থাকে তাঁর জঠরে
জননীরা সারাজীবন করুণার আধার।
পরিতাপে পাপস্খলন, তাপে বরফ জল
মায়ের কাছে কীসের গর্ব জননী অতল।
চায় না অর্থ চায় সমাদর
তাতেও কুণ্ঠা রে গুণধর!
মায়ের ত্রুটি খোঁজে যারা তারা কুলাঙ্গার।
আগ্রাসন
– অজিত কুমার কর
সীমান্তে আজ ভিনদেশিদের
উগ্র আগ্রাসন
জন্মভূমি রক্তে রাঙা
বিপন্ন জীবন।
আতঙ্কে ঘুম গেছে টুটে
দেশের মাটি নিচ্ছে লুটে
পরিস্থিতি জটিল ভীষণ
বাধবে নাকি রণ।
কয়েক হাজার বর্গ কিমি
চিন নিয়েছে কেড়ে
বারেবারে দিচ্ছে হানা
আসছে আবার তেড়ে।
সার্বভৌম লঙ্ঘিত আজ
বিপর্যস্ত দেশের স্বরাজ
এ আগ্রাসন রুখতে হবে
শিয়রে দুশমন।
অনিন্দ্যসুন্দর পৃথিবী
– অজিত কুমার কর
এ পৃথিবী
এখনো সুন্দর
রোজ প্রভাতে
মেলে রবির কর
কিয়দংশ
করে ধ্বংস
আছে গঙ্গা
মানস সরোবর।
করি যদি
সানন্দে বরণ
হিংসা ভুলে
প্রেমের ফুলে
বিশ্ব হবে
তখন শোভন
ভাবি আমি
তা অনুক্ষণ।
তুমি এলে সেজে ওঠে প্রকৃতি
– অজিত কুমার কর
বসন্তিকা শাওন আসে
কেবল তুমি এলে
খেতের বরন সবুজ তখন
শিমুল আঁখি মেলে।
আমি তখন রই তাকিয়ে
ছাতিম-গন্ধ দেয় ভরিয়ে
কদম-কেয়া-জুঁই-চামেলি
সুরভি দেয় ঢেলে।
বকুল-গোলাপ-হাসনুহানা
প্রশ্ন শুনে হাসে
কে পাঠাল বললে বলে,
সবায় ভালোবাসে।
সময়মতো আমরা আসি
ছড়াই ধরায় আলোক রাশি
আর কিছু তো চায় না কেহ
মায়ের আঁচল পেলে।
শিঞ্জিনী
– অজিত কুমার কর
ওই শোনা যায় শিঞ্জিনী তাঁর
আসার সময় হল
এবার তুমি রুদ্ধ দুয়ার খোলো।
কুহু কুহু কোকিল ডাকে
ওই ওদিকে কদম শাখে
গোধুলী রং লাগুক মুখে
অবগুন্ঠন তোলো
এবার তুমি রুদ্ধ দুয়ার খোলো।
সন্ধ্যাপ্রদীপ কে জ্বালাবে
সাঁঝতারা দেয় উঁকি
নতুন বসন অঙ্গে তোমার
দেখছে বিধুমুখী।
রুমুর ঝুমুর নূপুর পায়ে
চাঁপার সুবাস দখিন বায়ে
আসবে যখন প্রাণের ঠাকুর
গোপন কথা বোলো
এবার তুমি রুদ্ধ দুয়ার খোলো।
নৈসর্গিক দৃশ্য
– অজিত কুমার কর
নিস্তব্ধ নীরব
আকাশের বুকে শ্বেত শতদল, সবকিছু সম্ভব
অসম্ভবের দুয়ার রুদ্ধ, শিল্পীর বৈভব
মহামিলনের স্তব।
সঁপেছে সর্বস্ব
পাহাড়শীর্ষ ছুঁয়েছে আকাশ কী মনোরম দৃশ্য!
ঝকঝকে নীল অমল বিমল মেঘমালা অদৃশ্য
খুঁজে ফিরি সাদৃশ্য।
তুষারাবৃত শৃঙ্গ
প্রবল শৈত্য খাদ্য অমিল নেই কোনো বিহঙ্গ
কলকাকলিতে ভরে না ভুবন পর্বত নিঃসঙ্গ
ওরা অন্তরঙ্গ।
কবি পরিচিতি

অজিত কুমার কর। জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৪৬ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কিসমৎ জগন্নাথ চক গ্রামে। মাতা রাজবালা, পিতা কালিপদ। মৌরাজল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু। ১৯৬২ সালে রামচন্দ্রপুর রাইসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল ফাইনালে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ তে পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে থেকে প্রি-ইউনিভারসিটি ও ১৯৬৬ তে বিজ্ঞান বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। ১৯৬৯ এ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি গণিতে প্রথম হওয়ার ছয় বছর পর ১৯৭৫ এ ওখান থেকেই পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। সিএসআইআর এর পোস্ট ডক্টরেল ফেলোশিপ পেয়ে পুল অফিসার হিসাবে দু’বছর গবেষণা করেন। ১৯৭৬ সালে জয়শ্রী মাইতি-র সাথে শুভ পরিণয়। এরপর হুগলি জেলার নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে কুড়ি বছর অধ্যাপনার পর ২০০৫ এ গণিত বিভাগ থেকে রিডার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
তারপর প্রবেশ সাহিত্যের আঙিনায়, সহধর্মিণী ও কবি সুমনা প্রামাণিক এর অনুপ্রেরণায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ন’টি। ‘ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তাথৈ তাথৈ নাচ’, ‘পঞ্চক’ ৪খন্ড, ‘লাঞ্ছিত গোলাপ’ এবং ‘রত্নমালা’। কবির চারটি ই-বুক ‘নীলাঞ্জনে রঞ্জিত’, ‘কে তুমি লাবণ্যময়ী’, ‘কীর্তিমান’ এবং ‘প্রেম কাননে ফুটলো ফুল’। অপ্রকাশিত ‘ছড়ার ঘড়া’, ‘ঘড়া ঘড়া ছড়া’, ‘হাঁড়ি ভরা ছড়া’ ‘এক কড়া মিঠা ছড়া’, ‘মহৌষধ বনৌষধি’, ‘শেয়ালের উপাখ্যান’ ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবির কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ। বর্তমানে বাংলা-কবিতাডটকম ওয়েব ব্লগ সাইটে নিয়মিত কবিতা পোস্ট করেন। ই-ম্যাগাজিনেও কবিতা প্রকাশিত হয়। অবসর জীবন কাটছে সানন্দে সারস্বত সাধনায় পাঁশকুড়ার জয়াকুঞ্জে।