কবিতা আমার চাই
– সুমিত্র দত্ত রায়
একটা কবিতা চাই
মিলছে না? তা নাইবা মিললো
ছন্দ নেই? তা নাইবা থাকলো
এলোমেলো কিছু কথাতো আছে!
তাতেই চলবে ছাই
তবু ,কবিতা আমার চাই,
কি হলো? লেখনা!!
লিখবে নাতো?
আচ্ছা মনে রেখো
এরপর আর তোমার সাথেতে
কে কথা বলে দেখো।
কি বললে? বয়েই গেলো,
তাতো যাবেই,
আমি আর কে!
আড়ি আড়ি আড়ি
জম্মের মতো আড়ি
আজ থেকে হলো তোমার আমার
একদম ছাড়াছাড়ি।
যতোই খুশিতে মাতো
কিছুতে আর তোমার সঙ্গে
কথাই বলবো নাতো,
আড়ি কিন্তু… একদম!
দূর ছাই, শুনেও শোনে না
মারবো কিন্তু!
কি বল্লে?
কবিতা হয়ে গেছে
কি? পেয়ে গেছি?
কই না তো!
ও মা তাইনাকি?
তবে আর কি…….
ডাব ডাব ডাব
একদম ভাব।
দাদুর রাগ
– সুমিত্র দত্ত রায়
দুষ্টু ছেলের বকবকানি
চলছিল সেই সকাল থেকে,
দাদুর রাগও বাড়ছিল তাই
বললে দাদু জোরসে হেঁকে,
“ওরে, কে আছিস, আয় না –
খোকনটাকে নিয়ে যা,
দেখছিস না নইলে আমার
অঙ্ক মোটেই মিলছে না। “
চিৎকারেতে ঘাবড়ে খোকন
ছুড়লে যখন হাতখানা,
কালিতে অঙ্ক ভরেই গেল
হেসেই দাদু আটখানা।
অঙ্কের কি মূল্য তা তো
এখনও তুই বুঝলি না,
মিলিয়ে দিলি সবকিছু তাই
একটুও তুই ভাবলি না।
বল্লে দাদু, “আয়,তবে আয়,
তোকে একটা গল্প বলি,
কেউ এলে যে ফেলবে শুনে,
আগে দরজায় খিলটা তুলি। “
এই বলে দাদু দুহাত বাড়িয়ে
কোলে তুলে নেয় খোকনকে,
খাতা পত্তোর রইলো ছড়ানো
যেমন ছড়িয়ে রোজ থাকে।
বড় যে হতেই হবে
– সুমিত্র দত্ত রায়
আমি নাকি দুষ্ট বড়ই
সক্কলে তাই বলে,
আসলে ওরা বলে, আমার এই
পিস্তলে ভয় পেলে।
সকাল থেকেই মাথায় আমার
ফন্দি ফিকির ঘোরে,
লুকোই অনেক! তবুও খানিক
বের হয়ে তার পরে,
তাতেই কপালে নিত্য নতুন
পিট্টি আমার জোটে,
দেখেও না ওরা, ঠোঁটটি তখন
কেমন ফুঁপিয়ে ওঠে।
বোনের পুতুল নতুনই ছিলো
জামাটা খুব শক্ত,
পরীক্ষা তার করা দরকার,
বুকটা এবং রক্ত।
ব্লেড দিয়ে সবে কাটছি জামাটা,
মা বলেন কান ধরে -
“কাটতে শিখছ? দেখাও তো দেখি,
অমনি জামাটি গড়ে। “
আমি ডাক্তার হলে! পারতো কি মা
মুলতে দু’কান হেন?
বলতো উল্টে, “দেখ তো খোকা,
মাথাটা ঘুরছে কেন? “
বাবা আমায় টয়-ট্রেনটা
দিয়েছে জন্মদিনে,
লাইট দুটি তার টাইট করতেই
ভাঙলো অলুক্ষুনে।
বলেন বাবা “ভাঙতে শিখেছো,
আর দেব না গাড়ী। “
কি করে বোঝাই, গড়তেও পারি
মাটির কলসী, হাঁড়ি ;
চুপ করে যাই। ইঞ্জিনিয়ার
হতে দাও একবার,
বাবা বলবেন, “দেখ্ তো বাবা,
কী যে হলো ব্রেকটার! “
প্লেন ভেঙেছি, প্রপেলারটার
ভেতর দেখবো তাই,
লাভের মধ্যে লাভ হলো শুধু
দাদার গাট্টাটাই।
দেখো দাদাকেও পাত্তা দেব না,
নীল আর্মস্ট্রং হলে,
এসব কথা বুঝবে না কেউ
বৃথাই যাচ্ছি বলে।
কপালদোষে সবাই আমায়,
ভাঙার দলেই ভাবে,
ভাঙা ছেড়ে তাই গড়ছি মনটা,
বড় যে হতেই হবে।
ফোটার সময়
– সুমিত্র দত্ত রায়
লেখিকা হবার মতো কলমের জোর নেই,
সুরে করে গাইবো দুকলি, গলায় সুর নেই,
নেই এর দলেই আছে,জীবনের সিংহভাগ,
রূপ নেই বা চোখে নেই কোন মাদকতাও,
চলার বুদ্ধি নেই , সরার মতো বলও নেই।
থাকার মধ্যে আছে এক অসহ্য যন্ত্রনা।
বুকে মোচর দেওয়া..যন্ত্রনা এক..অসহ্য…
একমাত্র সেই আমার নিত্য সংগী।
ইচ্ছেমত সে আমাকে যখন তখন দংশায়,
তাকে ভালবাসা..গভীর আমার ..গভীর..
সেই কবে, আমার ফোটার দিন থেকেই…।
ওকে আমি খুব ভালবাসি ..খুব ..খুবই ..
যত আঘাত পাই , বুকের গভীরে জমাই,
এমনি করেই একটা আঘাত এলোছিলো,
একদিন এক পাগলা কবি আমায় বললে,
তুমি কী সুন্দর.. সুন্দর …ভীষণ সুন্দর …।
তার সে বলার যাদু আমায় সুন্দর করলো,
এক অপরূপা জন্ম নিলো মনেতে আমার,
গুনগুনিয়ে উঠলো-ভেতরে গানের কলি ,
বেশ বুঝলাম, আমি এখন সুন্দরের দলে।
খোঁপায় গোলাপ , চোখে টানা কাজল,
ঘুরে ফিরে দেখছি..আর দেখছি…বারবার।
মা বল্লো – ” কি অত দেখছিস, আয়নায়? “
মুহূর্তে মনমুকুর ভেঙে চৌচির,শুধু সেই –
চিড় গুলো ক্ষতবিক্ষত করলো আমায়,
আশ্রয় নিলাম আকাশে,খোলা জানালায়,
তবু, জানালা বন্ধ হলো-
আবার কুচ্ছিত..আমি আবার কুচ্ছিত…
আঘাত পেলাম।
পাগল কবি আর আসে না..আসে না তো,
আর বলে না, কেউ কিছুতেই বলে না..
তুমি খুব সুন্দর …খুব ..খুবই..সুন্দর ..
সব সুর..কোথা ভেসে যায় ..ভেসেই যায় ..
শুধু ঐ আয়নার. ..টুকরো কাঁচগুলো …
পরে থাকে আবর্জনায় ..ভাঙা কাঁচ হয়ে ..
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।