মো. মাহমুদ শেখ – কবিতা (অস্থিরতা, কষ্টের কারাগারে, পদ্মফুলের প্রেমে, আমি আবার আসবো)

অস্থিরতা

– মো. মাহমুদ শেখ

এখন আর পারছি না!
হৃদয় ক্ষত! নিঃস্ব আত্মার সীমাহীন ক্রন্দন
আবেগের আকাশে ও মেঘের ঘনঘটা ;
নিঃশ্চুপ আলোকে একটু অস্থিরতা।
অসভ্যের আভাসে কল-কাকলি মনোরঞ্জনে
আমি বিমোহিত।

শোকের পাথরাজি অশোকে ভোগে
নয়নের দৃষ্টিফলকে অনন্ত প্রেমকান্না!
স্বপনের তপ্তকাঞ্চনে গৃহিত আঁখিদুটি বিমুখী
আর পরিশেষে অনলের আহাকারে আহত
স্বচ্ছ মনের আতপাতা আর্তনাদে
হচ্ছে না কষ্ট রোহিত।

বাঁশঝাড়ে শুকনো ঝনঝনে গুঞ্জনে গুঞ্জরিত
তপতপে মুখে শুকনো হাস্যেজ্বল চেহারা
আয়নায় দেখা, তাতো স্বপ্নের বিপরীতে স্বপ্ন।
প্রেম যাওয়া আর চিন্তামগ্ন মস্তিষ্কের আবহাওয়া
দুটোই কষ্টির মাইলফলক।
জানি সবাই তাহা জানি!

আকারে ইঙ্গিতে সত্য তথ্যের রহস্য উন্মোচনে
আজও তিক্ততা অনুভূত হয় অন্তরের আকাশে।
সুচিন্তিত মতামতের অপেক্ষায় কত সময় হারিয়েছি
তবু সিদ্ধান্তে সিদ্ধ হাতছানি বৈ কিছু না।
চেষ্টার বিপরীতে নেই কিছু তবে
কথা সব মানি আর নাই মানি।

কষ্টের কারাগারে

– মো. মাহমুদ শেখ

আত্মার সীমাহীন অবহেলায়
আজো আমি নিস্তব্ধ শহরের নির্জন প্রান্তরে।
আত্ম শাসনের দীপ্ত প্রত্যয় নিয়ে
বার বার ফিরে আসছি ভুলে যাবার শপথ করে।
ভুলে যেতে পারি না!
অপ্রত্যাশিত সাফল্যের শিখরে বিরাজমান মন,
আঘাত পেয়ে ও বিরহ যাতনা সহে
সঠিক পথে চলার ভুলে নিমজ্জিত।
যেখানে বন্ধুত্ব সেখানেই কষ্ট।
কষ্টের সাগরে সাঁতার কাটা নিত্য দিনের রুটিন।
সেখান থেকে উঠলে মনে হয়
এই তো- ভাল সাথি হয়তো পেয়ে গেছি:
বিশ্বাসে আঘাত হানবে না,
আকাশের মতো উদারমনা আত্মা নিয়ে
আজ ও বিরহ অনল জ্বালা মেটাতে পারি না!
বার বার আঘাতে কেঁদে ফাটাতো
এই প্রাসাদে থাকা অতৃপ্ত আত্মা।
আত্ম দ্রোহী হতে পারি নাই,
অকৃতকার্য এক হতভাগা হয়ে
বার বার বিশ্বাসের শেকল পরি
এতটুক আজও বুঝি নি: চেষ্টাও করিনি।
শতবার বন্ধুত্বের বন্ধনে জড়িয়ে ফেলি নিজেকে।
আর আত্মাকে কষ্টের কারাগারে প্রেরণ করি!
আত্ম দ্রোহের শিক্ষাটুকু গ্রহণ করতে পারি নি।
অবচেতন মন।
চায় না এই ক্ষণিকের আনন্দে আত্মহারা হতে,
তবুও জড়িয়ে যায়
তাই তো আত্মা দ্রোহ আমাকে লজ্জা দেয়
অপরাজিত করে মানব মেলায়।

পদ্মফুলের প্রেমে

– মো. মাহমুদ শেখ

আমি তো চেয়েছিলাম-
তোমাকে নিয়ে পদ্মবিলে যাবো!
পদ্মফুলের দুলনির মতো নৌকায় দুলবো-
অজানায় পার হবে সারাটা দিন।
দুজনের হাসাহাসি ও কানাকানিতে মেতে রবো
পদ্মফুলের হাতছানির কাছে।
প্রেমাদরে ভুলিয়ে দিবে সবকিছু;
আমি আদরে সোহাগে মাতলিয়ে চেয়ে থাকবো
তোমার অপূর্ব চেহারার চন্দ্রনমুখে।
যে মুখের হাসিতে পদ্ম ভুলবে তার হাসি
ভুলে যাবে তার বেড়ে চলা
থমকে দাঁড়াবে তার ফুটন্ত প্রলাপ।
শান্ত হবে বিলের পানি;
নৌকায় দ্বিতারার ঘূর্ণনে হারিয়ে যাবে হাজার বছর।
আমিও সেখানে পদ্মফুলের মতো প্রেমে জড়াবো!
কারণ,
তোমার সাথে না হয় পদ্মফুলের তুলনা;
না হয় গাং শালিকের গান
না হয় তুলনা পদ্মের অপরূপ দুলনি;
না হয় পুষ্পের অপলক চেয়ে থাকা।
তাইতো পদ্মফুলের প্রেমে বিভোরিত হয়ে-
পদ্মফুলের রঙে শোভিত শাড়ি তব গায়ে জড়িয়েছি
আমি বিমোহিত!
আমি বিমুগ্ধ,
আমি আশাবাদী ;
আমি তোমার শাড়ির আঁচলে বেঁধেছি সে প্রেম
যে প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তুলেছি শতো ফুল!
সে ফুলে সাজাবো তোমায়;
নিজ হাতে গেঁথেছি মালা: পরাবো তোমার গলে।
দূরে ফুটন্ত একটি ফুলের মতো
পরাবো তোমার কালোকেশে।
আর তোমাকে দেখবো সেই জোছনার আলোয়
যেদিন চেয়ে রবে হাজারও তারকা!
স্বাগতম বাদ্যধ্বনিতে আমি বিস্মিত হয়ে
আনন্দে দুলবো ফুরফুরে বায়ুর মতো।
ঝনঝনে সুরে গান শুনবো,
আর চেয়ে রবো ফু্ঁটে থাকা হাজার পদ্মের মতো
তোমার পানে শতো রজনী।

আমি আবার আসবো

– মো. মাহমুদ শেখ

তুমি নেই তো কী হয়েছে?
আমি আছি আজও তোমার শিহরে,
সকালের মিষ্টতা হাওয়া মানেই আমি।
নিদজাগা পাখির সুর,
কাননে গুঞ্জনে, মুখরিত পুঞ্জনে কলকাকলি;
আর সূর্য্যমামার দীর্ঘ কিরণরাশি-
সেতো তোমার কাছাকাছি হওয়ার অভিপ্রায়।

আমি ক্লান্ত নয়, ভূগর্ভ, নিঃশব্দ
তবে আমি আবার আসবো!
তোমার ভালোবাসার হৃদয়ে অঙ্কুরোদয় হবো।
সেখানে বটবৃক্ষ মতো ছায়াপুরুষ হয়ে
জীবনের রৌদ্রতেজ দূর করে,
দখিনার মোলায়েম বায়ু হয়ে,
কখনও বা ছায়াবৃত্ত হয়ে তোমাকে আবৃত করবো।

গোধূলির লাল আভা হয়ে,
আমি আবার আসবো!
জীবনকে রাঙাতে, দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে
যে অপরাধে তুমি আজও অনেক দূরে-
পশ্চিমা রাজপথে ডুবন্ত রাজার মতো:
আমার আঙিনার বাহিরে, অন্য রাজ্যের রাণী।

রাতের মিটিমিটি তারকার রূপে
চন্দনের সুদৃষ্টি মনকাড়া চাহনি হয়ে
আমি আবার আসবো!
তোমার অপলক চেয়ে থাকার মাঝে
আমি নব্য পূর্ণিমাতিথি খুঁজবো।
যার ছোঁয়াতে সারাটা রজনী কাটবে সুখে;
আরামে আহ্লাদে তব পরমে মধুর নিদে
বৃক্ষের আঁখিতারা লুকাবে ধরায়।


কবি পরিচিতি

মোঃ মাহমুদ শেখ। জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর খুলনা জেলার তেরোখাদা থানাধীন ইছামতী গ্রামে। পিতা মোঃ আবুল হোসেন শেখ ও মাতা মমতাজ বেগম। নয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ। শিক্ষাজীবনে তিনি বি.এ. (স্নাতক) ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে খুলনা সরকারি বি. এল. বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স অধ্যয়নরত। দশ বছর যাবতকাল তিনি বেসরকারি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। বৈবাহিক জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক।

ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা ও রচনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজও তিনি বিভিন্ন সাহিত্যিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইউটিউবে “বাংলা সাহিত্য চ্যানেলে” নিয়মিত আবৃত্তি ও সাহিত্য আলোচনা করে থাকেন। বিভিন্ন যৌথ কাব্যগ্রন্থ ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বহু লেখা। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে “আঁধারে ভরা জীবন” নামে কবির একটি একক কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশের পথে রয়েছে কবির দ্বিতীয় একক কাব্যগ্রন্থ “বিষাদ স্মৃতি”।