এক পাখি
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
একটা পাখির ডাকে
জেগে ওঠে ঘুমন্ত দুপুর,
কারও ঘুম নষ্ট হয় না
যে শোনে সে শোনে।
তারপর সেও একদিন
পাখি হয়ে উড়ে যায়,
সে থাকে অদৃশ্য অন্তরালে।
একটা পাখির ডাক
পৌঁছে যায় বুকের গভীরে।
শোক
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
জীবদ্দশায় প্রেম ছিল আর প্রীতি
দুজনে বাস তবুও ছিল একা
কাজের ফাঁকে হঠাৎ হত দেখা।
আজ নেই সে,
বুকের মধ্যে কদিন ধরে শোক
উথালপাথাল, কাঁদছে ইহলোক।
জীবনের দিনযাপনে এই রীতি
শোকের জায়গা ভরাট করছে স্মৃতি।
স্বপ্ন আছে
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
এইখানে ফুলের বাগান হবে।
সমস্ত ঋতুতে ফুটে থাকবে গন্ধফুল
রঙিন পাখনা মেলে
প্রজাপতি এসে বসবে ফুলে,
মাঝখানে জলের ফোয়ারা হবে
আলোকে, সঙ্গীতে এক অভিনব
জলের ফোয়ারা।
তার পাশে ফলের বাগান
রসালো সুমিষ্ট ফল পাখি খাবে
এবং ছড়াবে।
বাগানের মাঝখানে একটা সরু নদী
এঁকেবেঁকে বয়ে যাবে নিজের মতন,
সেই নদীটির ওপর তৈরি করে দিও সাঁকো
দুই তীরে বসার আসন।
আর যা যা স্বপ্ন আছে
হরির লুটের মতো
দিও আজ দুহাতে ছড়িয়ে।
কী নিয়ে বাঁচব বলো
জলে আজ আর্সেনিক,
বাতাসে কার্বন গ্যাস
পৃথিবীর ওজোন স্তরে ফুটো
নিয়মিত ধর্ষণ সংবাদ,
তার চেয়ে স্বপ্ন দেখি
স্বপ্ন ছড়িয়ে যাও যথেচ্ছ
যত পারো মুঠো মুঠো।
ঘরেই সাগর
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
সমুদ্রের ঝড়ো হাওয়া শব্দ তোলে
শাঁখের ভিতরে
শিশির অন্দরে যত্নে রাখা আছে
সমুদ্রের জল,
আ্যালবামে ছবির মধ্যে
সফেন সাগরের ঢেউ স্তব্ধ হয়ে আছে,
ঝিনুকমালায় হয়ত পেয়ে যাব
সমুদ্রের নুন।
সমুদ্রে যেতে চাই — সমুদ্র যে ডাকে
দিগন্তরেখায় তার নব নব সূর্যোদয়
সূর্যাস্তের রঙ
মন ভালো করে দেয়,
দীর্ঘ জাল টেনে তোলে সমুদ্রের মীন।
আমার ঘরের মধ্যে –
চেতনায়, মননে, চিন্তায়
এইভাবে সাগরকে নিয়ে বেঁচে থাকি।
বাংলা, বাঙালি
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
ধুতি, শাড়ি নিয়ে সবটুকু ছিল বাংলা
ঠাকুমার ঝুলি, হাসিখুশি, বুড়ো আংলা
মাঠ, ঘাট, খেত ঝিল আর খোলা জানলা।
তোমরা কেউই বাংলা ভাষায় কও না,
রবি, শরতের অধিকার কেউ বও না,
সুযোগ পেলেও দাও বিদেশেই রওনা।
পোশাকে তোমরা বিদেশি কেতাই মানছ
বাংলা ভাষার জন্যে মিছেই কানছ,
ভাষাটার বুকে নিত্যই শেল হানছ।
তবে কি বাংলা শিখবে রোমান হরফে?
সহাবস্থান সূর্য এবং বরফে
কিংবা লিখন নামের পাশেই ওরফে!
আমাদের বাঁশি বাজুক শূন্য আকাশে
সুর ভেসে যাক গন্ধে মাতাল বাতাসে,
দীপটি জ্বলুক দুই বাংলার আবাসে।
কবি পরিচিতি

দেবকুমার মুখোপাধ্যায়। পশ্চিম বাংলা, ভারত। জন্ম ১৯৫০। স্নাতক। বর্তমানে বসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির শুরু। কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প, অণু গল্প, নিবন্ধ লিখে থাকেন। বড়দের জন্য, ছোটদের জন্যও। কিছু কিছু অনুবাদও করেছেন, ইংরাজি থেকে বাংলায় — কবিতার, গল্পের।
বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে — আসলে আলোর জন্যে, এখানে তরঙ্গ এখানে জীবন, জলের উপমা (এককভাবে), আর যাঁরা কবিতা পড়েন না (দুজনে মিলে), ছড়ার মজা খাস্তা গজা ও চার মাথার মোড় (চারজনে মিলে)।