আসলে তুমি কেউ নও
– সোমদেব চট্টোপাধ্যায়
অন্তিম কবিতার শেষে
সমস্তটা কপাল জুড়ে
মনে হয়, রোদ হও
আসলে তুমি কেউ নও,
অবেলা কুয়াশার মতন
না হয় বিন্দু জল হয়ে
রয়ে গেলে শূন্যতা জুড়ে
আজকাল অহরহ প্রায়ই
ছাই হয়ে যেতে চাই
আসলে তুমি কেউ নও,
তবু চিতা কাঠের মতন
না হয় পুড়িয়েই দিলে,
আশ্চর্য কবিতার যতন
শূন্যে প্রক্ষেপণ, নিক্ষিপ্ত শর
এখানেই আছি চিরকাল
এই সেতুবন্ধ, এই রামেশ্বর…
একা এই শ্রাবণে
– সোমদেব চট্টোপাধ্যায়
এমন শ্রাবণ দিন আগে আসেনি কোনো দিন
এমন অভাবি দিন আগে দেখিনি কোনো দিন
একা ভিজছে মন
নেই কেউ আপন
এই প্রহরে
একলা ভিজে যায়, এই শহর
এমন শ্রাবণ দিন আগে আসেনি কোনো দিন
এমন অভাবি দিন আগে দেখিনি কোনো দিন
কেউই জানবে না
এ বাঁধ মানবে না
এই শ্রাবণে
একা এই শহরে, আজ প্লাবন
এমন শ্রাবণ দিন আগে আসেনি কোনো দিন
এমন অভাবি দিন আগে দেখিনি কোনো দিন
ছিঁড়ে সব বাঁধন
সে আর ফিরবে না
এই জীবনে
একা আজ আমি, আর শ্রাবণ
তোমায় না দেখলে পরে
– সোমদেব চট্টোপাধ্যায়
কেমন আছো উর্বশী
তোমাকে না দেখলে আমার দুঃখ হয়
এমনকী অসমঞ্জদাও তার থিয়েটার ভুলে
উদাস কণ্ঠে বলে, কতদিন উর্বশীকে দেখি না রে !
কী করো এখন? উর্বশী?
তুমি ফিরোজা বেগমকে ভীষণ ভালোবাসতে
বহরমপুর রেডিও স্টেশন থেকে
এখনও কী তোমার গান শোনা যায়?
১০২.২ এফএম চালালেই তুমুল বৃষ্টি নামে
আর উজান বেয়ে উঠতে থাকে স্রোত
অঝোর বৃষ্টির মধ্যে আমার হৃদয় এবং
সমস্ত পৃথিবীটা তোলপাড় করে
ছুটে আসতে থাকো… ছবির নায়িকার মতন
তোমায় আমি সযত্নে গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম
শহরের শিশির ভেজা পথে হাঁটতে হাঁটতে
জীবনের শ্রেষ্ঠ মহাষ্টমী
আমি তোমার সাথেই কাটিয়ে ছিলাম, উর্বশী
তারপরে ছাব্বিশ হাজার বছরের শূন্যতা…
আমি আর ধূমকেতুর মতো ফিরে আসতে পারিনি
শাড়ির ভাঁজে লুকিযে রাখা প্রতিটা চিঠি
আগুনে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল
অথচ বাক্সবন্দী তোমার সব লেখাগুলো
আমি তখনও পাহারা দিয়েছিলাম
এমনকী, এই ছাব্বিশ হাজার বছর ধরেও
আমি সেই সব সম্পদেরই পাহারা দিয়ে এসেছি
এখনো প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে আমি তোমাকেই দেখি
উর্বশী,
তোমায় না দেখলে, আমার যে বড় দুঃখ হয়!
কবি পরিচিতি

সোমদেব চট্টোপাধ্যায়। জন্ম বিহারের কাটিহার জেলা শহরে৷ শিক্ষা এবং কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস৷ ইতিমধ্যে এমবিএ (ফাইনান্স), এমবিএ (মার্কেটিং), পিজি ডিপ্লোমা ইন ব্যাঙ্কিং, ও সিএআইআইবি ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া ২০১১ সালে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ব্যাঙ্কিং এন্ড ফিনান্স (মুম্বাই) আয়োজিত সর্বভারতীয় গবেষণা প্রতিযোগিতায় ‘ফিনান্সিয়াল অ্যাওয়ারনেস’ পেপারের জন্যে। বর্তমানে একটি উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে কর্মরত।
মূলতঃ বাবার অনুপ্রেরণায় লেখালেখি শুরু। দৈনিক সংবাদপত্র, বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইটে লেখালেখির ভিতর দিয়ে ৷ প্রথম কবিতা সংকলন – বৃষ্টি যেরকম (২০০৮)। অর্জন করেছেন ২০১১ সালে ‘শিল্প মনন সাহিত্য পদক সম্মাননা’ ও ২০১৮ সালে ‘সৈকত সাহিত্য সম্মাননা’। এছাড়া ইংরেজি ভাষায় কবিতার আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ‘PoetrySoup.com’ -এর বিচারে River personification এর অন্যতম সেরা উদাহরণ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে দুটি ইংরেজি কবিতা। বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘দেশ নিরুদ্দেশ’, ‘বাজেয়াপ্ত কবিতাগুলি’, ‘আমি ভারতবর্ষকে দেখেছিলাম’ – উল্লেখযোগ্য আবৃত্তিকারদের কণ্ঠেও শোনা গিয়েছে এই কবিতাগুলি। এছাড়াও প্রবন্ধ, ছোটগল্প এবং ভ্রমণকাহিনী স্থান পেয়েছে দৈনিক স্টেটসম্যান, আপনজন ইত্যাদি সংবাদপত্রে।
কবির ইচ্ছে – প্রকৃতির কোলে ছোট্ট কুটিরে বসবাস; ভালোবাসা – ছবি আঁকা, ফোটোগ্রাফি, গান শোনা, ফুলের গাছ; এবং নেশা – উন্নয়ন ও গবেষণা, সমাজ কল্যাণ।