পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতা(দীপ জ্বেলে যাই, সুন্দর তাই চেয়ে থাকি…, আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন, মহরৎ, সান্নিধ্য)

দীপ জ্বেলে যাই

(অ্যাক্রোস্টিক ফরম্যাটে)

– পারমিতা ব্যানার্জি

দীপালিকায় ঘোচায় কালো,
পর্দানসীন নই যে আজ ।
জ্বেলেছি তাই চোখের আলো।
লেখায় কাটে বিরহ লাজ!
যাতে পেলাম মনের ভালো __
ইতিকথায় জীবন সাজ!

সুন্দর, তাই চেয়ে থাকি…

– পারমিতা ব্যানার্জি

অপরাহ্ণ আষাঢ়ে
ঘন কালো আজ পশ্চিম।
আতঙ্কের ছায়া
নেমে এসেছে অস্থির মনে।
তবুও সুন্দরকে
উপেক্ষা করি কী করে!
ভয়ঙ্করের অপেক্ষায় সুন্দর!
জানি কালোর বুক চিরে
একসময় চমকানো আলো
নেমে আসবে সশব্দে….
তবু চেয়ে থাকি __
চেয়ে থাকতে ভালো লাগে।
দুটো শালিক ভেসে আসছে
পশ্চিম থেকে পুবে।
ওলোট পালোট পাখায়
ছন্দহীন ওদের উড়ে যাওয়া!
বাসা খুঁজে পাবার
এক অনিশ্চয়তা মনে(!)
ভয়ঙ্কর সুন্দরের কোল জুড়ে
ঘন আষাঢ় জাগে
এক অপরাহ্ণ বেলায়।

আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন

– পারমিতা ব্যানার্জি

আজি বাজেনি তব বাঁশরী,
মিষ্টি মধুর সুরে।
তোড়া জোড়া রহিল পড়িয়া ;
মান করিয়াছে বুঝি…
রত্নহার পড়িল খসিয়া
বিবশ দিবস শেষে!
রহিলা বাতায়নে বসিয়া,
হেরি সে চন্দ্রমা!
রহি একাকী কত না রাতি,
হিসাব রাখে না কেহ!
বনবীথি কাঁদে তব বিরহে
বিছাইয়া মুগ্ধ নিশীথ।
লীন হইয়াছে যত মন ব্যথা _
নব রাত্রির সোহাগে।

মহরৎ

– পারমিতা ব্যানার্জি

ঝড় ছুটে যায়
মাটি ছুঁয়ে, মন ছুঁয়ে…
টুকরো করে
কত সৃষ্টির অহঙ্কার!
জীবন যখন
রঙিন হয়ে ওঠে,
আসে ঝড়…
দেখা যায় না তাকে
শুধুই
লীলা পড়ে থাকে।
ধ্বংস স্তুপের শরীরে
লেখা থাকে স্পর্শ!
হয়তো অমানবিক __
তবুও জানি
এরপর,
বিধ্বস্ততার পরেও
উঠে দাঁড়াতে হয় __
ঘুরে দাঁড়াতেই হয় __
নতুন করে সাজাতে,
সবকিছু…
শুরু হয় নাটক
আবারো…

সান্নিধ্য

– পারমিতা ব্যানার্জি

সমুদ্র স্নানে যাইনি কতদিন,
নদী জলেও ভিজাইনি চুল!
মেঘ যখন কাছে আসে __
সরবে কিংবা গোপনে _
ভিজতে ইচ্ছে করে আজও!
অপেক্ষায় থাকি তাই
ভরা শ্রাবণের…

কেটে গেছে কত বেলা….
কখনো আনমনে
মেঘ আসে আকাশ ছেয়ে!
তবুও বৃষ্টি ঝরেনি দাওয়ায়!
কী এক অজানা হাওয়ায়
মেঘ সরে সরে যায় _
কাঁদায় আমায়।

পুরোনো ভেজার দিনগুলি
মনে দাগ কেটে আছে।
গালে কান্নার জলের দাগ
মোছা যায় না সহজে।
শুখনো বাসি চুলে জড়িয়ে
ভালবাসার গন্ধ!
জল-স্পর্শ চায় এলোকেশী!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।