মা গৌরী আসবে ঘরে
– জয়শ্রী কর
এলো পুজোর মাস
তাই ফুটেছে কাশ
উমা মায়ের মুখটি ভাসে
মিলবে অবকাশ।
বর্ষা হ’ল শেষ
শান্ত পরিবেশ
সাজো সাজো রব উঠেছে
মাতবে এবার দেশ।
তুলোর মতো মেঘ
নেইকো বায়ুর বেগ
এসে গেছে নতুন পোশাক
কেটেছে উদ্বেগ।
ফুটছে শতদল
ছড়ায় পরিমল
মহামায়ার আগমনে
ভরবে চরণতল।
মাতৃবন্দনা
– জয়শ্রী কর
মায়ের চরণ ছুঁয়ে শির ঠেকালাম ভুঁয়ে
শিরে হাত দিয়ে মাগো আশীর্বাদ করো,
কে, যখন শুধালাম উচ্চারিত হলো নাম
তুমি তো আমার কাছে সবচেয়ে বড়ো।
যাবে ধরাধাম ছাড়ি কোন দেশে দেবে পাড়ি
মায়ের হৃদয় করুণার প্রস্রবণ
বিদায়কালীন বাণী চেপে ধরে হাতখানি
বলে ধীরে ধীরে ঠিক আগের মতন।
অনটনের আবহে বড় করে জ্বালা সহে
মা-ই মানুষ গড়ার সেরা কারিগর
প্রগতিশীল রমণী মমতাময়ী জননী
দরাজ হৃদয়, রাখে সবার খবর।
সজল নয়ন তাঁর বৈতরণী পারাপার
ঘুম ঘুম চোখে ঝরে বাদলের ধারা,
ঠোঁটে সকরুণ হাসি বাজে না মধুর বাঁশি
চিরকাল মা তো বিরাম-বিশ্রামহারা।
পিতামাতা কোহিনুর গান কবিতার সুর
আঁধার সরিয়ে আনে শুচিস্নিগ্ধ ভোর,
কর্ম করে অবিরত করেছে সাধনা কত
অরুণকিরণে কাটে কুয়াশার ঘোর।
প্রকাশ করেনি আশা অফুরান ভালোবাসা
সযতনে রেখেছিল আঁচলছায়ায়,
অক্ষমতা ব্যথা তাঁর অবরুদ্ধ কন্ঠ মা’র
ধ্বনিত হবে না সুর ও’ মনোবীণায়।
জননী তো জ্যোতিষ্মান সূর্য সর্বশক্তিমান
বটবৃক্ষের মতোই জননী আমার,
আজ বড় অসহায় এ মন তোমারে চায়
চরণ স্মরণ করি নীরবে তোমার।
জোনাকি
– জয়শ্রী কর
আঁধার রাতে জোনাকিরা দেখিয়ে দিলো দিশা
পেটের নীচে দীপ জ্বালিয়ে কাটায় অমানিশা।
গাছগাছালি লতাপাতায় ওড়ে পুকুরধারে
তারার মতো ঝিকিমিকি রাতের অন্ধকারে।
রাসায়নিক লুসিফারিন দ্যুতি ছড়ায় গা’তে
ওদের দেখে রূপসিরা চিনতে পারে যাতে ।
একই ছন্দে জ্বলে নিভে উড়ছে জোড়া জোড়া
জীবনসাথি বেছে নেবে অবলীলায় ওরা ।
জোনাকির ওই আলোই হল মনের গুপ্ত ভাষা
ভাববিনিময় ক’রে ওরা জানায় ভালোবাসা ।
লম্ফ জ্বেলে পেতনি আসে নয় রে জোনাকপোকা
ভয় দেখিয়ে মধ্যরাতে মা বানাত বোকা ।
ঠামি বলত ডাকাত ওরা মশালের ওই আলো
অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায় চেহারা জমকালো।
এক জায়গায় স্থির থাকে না আস্তানা জঙ্গলে
রাত একটু গভীর হলে আসবে দলে দলে।
বাবুইবাসা আলো করে জোনাক পোকা রাতে
সন্ধ্যা নামার আগেই ধরে গোবরে আটকাতে।
পোকামাকড় লার্ভা খেয়ে জীবন ধারণ করে
ঝিকিমিকি আলোয় যেন রূপের ঝরনা ঝরে।
শিউলি শরৎ
– জয়শ্রী কর
কী বারতা দিতে আজ জাগালে আমারে
নীলকাশে পেঁজা তুলো ভাসে যেন ভেলা
শারদ-প্রাতের গান বাজে বীণা-তারে
সারাটা উঠোন জুড়ে শেফালির মেলা।
আকুল পাগল-পারা ঝরে পড়া তারা
বাহারি রূপের ছটা সুমধুর ঘ্রাণ
প্রভাত হলেই ঝরা প্রাকৃতিক ধারা
প্রজাপতি মধুকর গেয়ে যায় গান।
অপলকে চেয়ে থাকি আমি ওর পানে
মুঠো মুঠো ফুল নিয়ে খুশি রেণু মেখে
প্রজাপতি উড়ে যায় কোথায় কে জানে!
দিনমণি সারাদিন যায় ছবি এঁকে।
মেঘ এসে ঢেকে দেয় ওকে মাঝে মাঝে
পাখিরা শোনায় গান শেফালিকা ভুঁয়ে
সুরভিত সুষমায় আগমনি বাজে
বৃন্তচ্যুত যত ফুল নিরালায় শুয়ে ।
ঝরাফুল দিয়ে গাঁথি ওখানেই মালা
হিমানি মাখানো প্রাতে আকাশের হাসি
ফুল ও চন্দনে সাজাই পূজার থালা
পরাব এবার গলে মা কে ভালোবাসি।
ভাদ্রের পাকা তাল
– জয়শ্রী কর
পাকা তাল পুকুরেতে পড়ে ধুপধাপ
নীলমণি ছুটে গিয়ে জলে দেয় ঝাঁপ।
সাঁতরিয়ে তুলে আনে মন খুশি তাঁর
পাড়ে উঠে হাতে নিয়ে শোঁকে বারবার।
দিদিভাই, মাকে আজ বেটে দিবি চাল
পেটপুরে খাব পিঠে জিভে ঝরে লাল।
তাল-বড়া পোড়া পিঠে খেতে লাগে বেশ
গাছে দেখি নাই আর এইটাই শেষ ।
তাল-বড়া বানাতে মা কত তেল চাই?
এক্ষুনি বল তুমি ছুটে তবে যাই।
বিকেলে খেলতে যাব বল যাব কি না
কেমনে বানাবে তুমি তেল গুড় বিনা?
ফিরে এসে মাকে বলে দাও বাটি ভরে
ভাইবোনে একসাথে খাব মজা করে।
উঁকিঝুঁকি মারে ওরা মা যে ভাজে বড়া
বাবা বলে কোথা যাস আগে কর পড়া।
দুইজনে চুপিসারে মার পিছে ঘোরে
হাতে নিয়ে টপাটপ ওরা মুখে পোরে।
তালের গরম বড়া কী দারুণ স্বাদ!
লাগে তুলতুলে বেশ মিটে গেল সাধ।
ক্ষুধার্ত বিড়াল
– জয়শ্রী কর
শুয়ে শুয়ে দেখছে বিড়াল
মুশলধারায় ঝরছে বারি
চারিদিকে জল জমেছে
তাইতো এখন বিপদ ভারী।
খিদের জ্বালায় জ্বলছে উদর
খাবার খোঁজে সারা দুপুর
কেউ ডাকে না আয়রে খেতে
পাচ্ছে খাবার পোষা কুকুর।
বেজায় চতুর বিড়ালভায়া
তীক্ষ্ণ নজর চারিদিকে
চুপিচুপি পা টি ফেলে
ছিঁড়বে কখন ভাগ্যে শিকে।
একটা ইঁদুর দেখতে পেয়ে
সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে
পড়ল পুষি নালার জলে
বিফলতায় কান্না ঝরে।
ভেজা শরীর নিয়ে পুষি
মিউ মিউ ডাকতে থাকে
চেটে চেটে শুকনো করে
ইঁদুরটাও ফেলল পাকে!
কবি পরিচিতি

জয়শ্রী কর। জন্ম জুন ২, ১৯৫৬তে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কোলাঘাট থানার অন্তর্গত চিমুটিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে। মাতা কমলাবালা, পিতা রামপদ মাইতি।
কোদালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রথম পাঠ। ১৯৭৪ এ ভোগপুর কেনারাম মেমোরিয়াল হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে স্নাতক স্তরে কলা বিভাগে ভর্তি হন। পড়া চলাকালীন ১৯৭৬ এ ডক্টর অজিত কুমারের সঙ্গে শুভ পরিণয়। কৈশোর থেকেই খেলাধুলা, সেলাই ও শরীরচর্চার সঙ্গে তিনি যুক্ত। পরে গিটার, তবলা, যোগ ব্যায়াম এবং কাব্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। নিজে একজন সংগীত শিল্পী ও সুরকারও বটে – বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করে থাকেন।
প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘নীল আকাশের কোলে’ পাঠকমহলে খুবই সমাদৃত। রাজ্য সরকারের তরফে রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরীর ফাউন্ডেশন এবং বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সভার যৌথ উদ্যোগে তার বই কেনা হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গ্রন্থাগারগুলির জন্য। এছাড়া আরো দুটি কাব্যগ্রন্থ – ‘ভোরের বাঁশি’ এবং মায়াডোর’ – প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যে। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার কবিতা রচনার প্রেরণা। প্রতিদিন কবিতা লেখা, কাব্য আলোচনা আর গানবাজনা নিয়ে এখন দিন কাটছে।