লিভ টুগেদার
– বিভূতি দাস
ধারনাটা বেশ চলনসই; আজকের দিনে খারাপ নয়
মায়া ছায়া ঝঞ্ঝাট নেই; জীবন হয় না দুঃখ ময়।
সম মনের কাউকে পেলে; কাটিয়ে দাও জীবনটা
সন্দেহ নেই আগে পিছে; ধূসর হয় না সময়টা।
আয়ের সাথে তাল মিলিয়ে; মনের সুখে বাঁচো
বন্ধন নেই; গঞ্জনা নেই; যেমন খুশি হাসো।
এক বাসাতে দুটি মন, সুখের নেশায় থাকা
চোখের জলে; ব্যর্থ প্রেমে; নেই বৃথাই রাত জাগা।
ভাগাভাগির আসর নেই, নেই গোমড়া মুখের ঝঙ্কার
ভালোথাকা শেষ হলে, যে যার মত আবার।
সহমতেই সব সমাধান; জীবন যদি চায়
বদলানো এই সময় কালে; গরমিলে মিল পাতায়।
ব্যস্ত সময় ব্যস্ত জীবন; বন্ধনেও নেই সুবাস
দিনের শেষে রাস্তা একটাই; নিয়ন সুখের বৃদ্ধাবাস।
টান
– বিভূতি দাস
বাইতে উজান হালের সাথে লাগে দাঁড়ের টান
একলা বাঁচন কঠিন সাধন যায়রে তাতে মান
আহা বলার চাইরে মানুষ তাতেই বাঁচে জান
দাঁড়ের খুঁটির ক্ষয় হইলেও হয় না অপমান।
নদীর যদি না থাকে টান চরা পড়ে সেথায়
পায় না পানি হালের পাটা, জীবন বৃথা যায়
গুনের রশি একা টেনে মন করে হায় হায়
চোখের পানি বান হইয়া মনের দুকুল ভাসায়।
থাকতে সময় বোঝন লাগে তাতেই বাঁচে মান
জোয়ার ভাটার দুই সময়েই থাকে উজান সুজান
মনরে সময় গেলে আর ফেরেনা, বাঁচে অভিমান
বাইতে খেয়া জীবন পারের লাগে দাঁড়ের টান।
খুলে রেখো
– বিভূতি দাস
বন্ধু, বন্ধ করোনা মনের জানালা
যতটুকু পারো তারে খুলে রেখো
আলোয় ভরিয়ে হৃদয়; ভালো থেকো
দ্যাখো, চলে যায় নীরবে মানুষ একলা।
একরাশ নীল কষ্ট নিয়ে ওড়ে প্রজাপতি
সময়ের বুকে জাগে নীরব সাগর বেলা
থমকে গিয়েছে দুরন্ত ঊর্মির সব খেলা
প্রতি পলে জাগে বেদনার হাজার স্মৃতি।
বসন্ত গিয়েছে ফিরে বন্ধ দুয়ার দেখে
নীরবে ফোটা পলাশ আগুন নিভে যায়
নিঃসঙ্গ সবুজ একলা বিরহের গান গায়
ঝাপসা দু চোখে স্বপ্নের রঙ যায় ঢেকে।
বন্ধু একটু বাড়াও ভালোবাসা মাখা হাত
নম্র উষ্ণতায় কেটে যাক দুঃসহ রাত
ভোরের আলোয় জাগুক প্রাণে রঙের মেলা
আশ্বাস সাহসে প্রেমে ভাসুক জীবনের ভেলা।
অন্ধকারে রাখো
– বিভূতি দাস
মানব প্রাণের সৃষ্টি লগ্নে প্রকৃতিই ছিল আপন
জল জঙ্গলেই কাটত সময়, অজ্ঞানে করত যাপন
ধীরে ধীরে জেনেছে, হয়েছে অভিজ্ঞতায় পূর্ণ
কলস তার উঠেছে ভরে, বদলে গেছে শূন্য।
বদলেছে তার জীবন যাপন, নানা অভিঘাতে
শৃঙ্খলায় বাঁধতে তারে, নিয়ম নানা মতে
বুদ্ধি প্রকৃতির দান, সকলের নয় সমান
পেয়েছে যারা সুযোগ শিক্ষার; বুদ্ধিতে দিয়েছে শান।
অন্ধকারের সুবিধা অনেক; যেমন খুশি ভাবো
স্বার্থের জন্য দোহাই পেড়ে; যত খুশি নাবো
পুরাকালে কতিপয় বুদ্ধিমান; বুঝেছিলেন এর মর্ম
শৃঙ্খলার জন্য লাগিয়ে ছিলেন বীজ; নাম ধর্ম।
আধিপত্য বিস্তারে নানা মতে, ধর্মের সাতকাহন
শুরু ভাগাভাগি, অমানবিক অ-সম ভাবনার স্থাপন
ভয় ভরসার অজুহাতে; ধর্মই হয়েছিল বাহন
সুযোগ মুষ্ঠিমেয়র কুক্ষিগত, বাকিদের অপাংতেয় জীবন।
বিভাজন হল মানুষে মানুষে, দুটো শ্রেণী
কর্মের ফল হয়নি সমান, গরীব এবং ধনী
গরীবের দায় ধর্মপালন; ধনীর জন্য নয়
সকল ভালো; মন্দ; সুখ নাকি ধর্মেই হয়।
ধর্মের জন্য সৃষ্ট গরীব, অধর্মেই ধনী
ধনীর মান না রাখলে , গরীব মরবে জানি
কর্মফলে গরীব মরে, চিরকালের কথা
বলেন গুণী জনে, ধনীর রাখতে মাথা ।
বাতাসে নড়ে বঞ্চনার কল, ধর্মে নয়
ধনীর হাতেই চাবিকাঠি, জানে জগতময়।
বৈষম্য
– বিভূতি দাস
যান্ত্রিক বা ছাঁচে ঢালা, এর কোনটাই নয়
তবুও আমরা অসন্তোষে ভুগি, কেন এমন হয়
উত্তর খুঁজে ফিরি বিশ্বাসে বা অবিশ্বাসে, দরজায় দরজায়
কিছু অকথা শুনে দোষ খুঁজি, বুঝিনা সৃষ্টি রহস্যময়।
একটা গাছ; ফলবতী হয়, আনন্দে ভরে ওঠে মনটা
একই বোঁটায় থেকেও ছোট বড়, কেন হয় এমনটা
একই হাতে আঙুল পাঁচটা, আয়তন কেন হয় আলাদা
বলতে পারি কি! ছোট বড়র জন্য ব্যবহারে সুবিধা।
মানুষের আঙুল; মানুষ বুঝল; স্রষ্টা বুঝল কেমন করে
তবে আছে কি রহস্য তার, লুকানো জ্ঞানের ভান্ডারে
কেনই বা আলাদা গঠন; বুদ্ধি; প্রবৃত্তি; প্রতি জনে
পাওয়া যায় কি সঠিক ব্যখ্যা বৈষম্যের, কোন কারণে!
স্ত্রী পুরুষ দুটি জাতি, তৃতীয় জাতি একই অঙ্গে উভয়
জন্মে ব্রাত্য সে সমাজ জীবনে, কেন এমন হয়
সেও পিতা মাতার সন্তান, কেন সইতে হয় অপমান
এই উত্তর দেবে কে, সমাজ! নাকি বিশ্বাসের ভগবান।
কেন পাবেনা সে অধিকার শিক্ষায়, কর্মে, প্রতিদিনের যাপনে
জন্মে তার কি দোষ, ভেবে পাওয়া যায় কি মননে
জেনেছে কি সমাজ তার বুদ্ধি, প্রবৃত্তি, কাজের উৎকর্ষতা
নাকি প্রথাগত ভাবেই গয়ং গচ্ছ, উদাসীন আড়ষ্টতা।
স্রষ্টার আশীর্বাদে সেও, আলো দেখেছে পৃথিবীর, একই ভাবে
তবুও কেন কূপমণ্ডূক সমাজের শাণিত নখে রক্তাত হবে
শিক্ষিত মানুষ নিকষ অন্ধকারের গর্ভে আলো জ্বালাবে কবে!
তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি বঞ্চনার অভিশাপ কতদিনে মুক্ত হবে
শিক্ষিত; উন্নত সমাজ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে কবে?
নিষ্কৃতি
– বিভূতি দাস
জন্মাবধি মানুষ শুনে আসছে শিক্ষাতেই জাতির, দেশের উন্নতি
হয়ত পূর্বের পূর্ব জন্মেও শুনেছিল, তবে মুছে গিয়েছে সে স্মৃতি
সংখ্যায় কম হলেও আছে, যোগে-বিয়োগে বিলিয়ে তথ্য আজগুবি
অলীক গল্পে, অদ্ভুত আচরণে মগজ ধোলাই, স্বার্থ সিদ্ধির বুজরুকী
ঘোর অবিশ্বাসী ও চক্রব্যুহে হারিয়ে বোধ; পালে ভেড়ে আকছার
নানা রঙে বৃত্ত গড়ে জমিয়ে তোলে লোক ঠকানোর কারবার।
কেহ কেহ এগিয়ে আরো, কথার ফাঁসে উন্নয়নের রাস্তা দেখায়
অষ্ট প্রহর বজ্জাতি আর জালিয়াতিতেই মিথ্যে গুলো সত্যি বানায়.
আমি দিচ্ছি আমরা দিচ্ছির হুক্কাহুয়ায় বিচার বুদ্ধির মাথা চিবায়
ঠিক বেঠিকের ঘোলা জলে রাস্তা ভুলে গুণীজন ও পথ হাতড়ায়
মুখে হাসি অন্তরে বিষের বাঁশি, আশ্চর্য আবিস্কার নাম রাজনীতি
একই পাত্র অবস্থান ভেদে ভোল বদল, মানুষের বাড়ায় দুর্গতি।
প্রতিদিন নতুন মিশ্রণ, বিশ্বাস আর হিংসায় শয়তানের পরীক্ষাগারে
ধোঁকার কারবারে দেদার খরচ, শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান গেলেও গোরে
ঢেকুর ওঠাতে পিঠ চাপড়ানো, সাকার নিরাকার যারে যখন প্রয়োজন
চার ছড়িয়ে বঁড়শি ফেলে গেঁথে তোলার সমীকরণ পরীক্ষিত প্রহসন
ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যার বেসাতি, সভ্য পোশাকে সামনে এলেও দুষ্কৃতী
আবেগের কাছে হার মানে বোধ, কোন জন্মেই কি নেই নিষ্কৃতি?

কবি পরিচিতি
বিভূতি দাস। অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারী, অভিভক্ত ২৪ পরগনার কৃষক পরিবারে। প্রকৃতির কোল ছুঁয়ে গ্রামে বেড়ে ওঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ছাত্রাবস্থা থেকেই সৃষ্টির সাথে প্রেম। নেশা-লেখালিখি এবং ভ্রমণ। বর্তমান নিবাস – সোনারপুর, কলকাতা –৭০০ ১৪৯, ভারত।