চোখ রেখো ওপারে
– নরেশ বৈদ্য
তুমি ভাবছো লাভার দেখা নেই
মানে আগ্নেয়গিরি হয়ে গেছে শান্ত
অথচ কী আশ্চর্য
সময়ের নিরিখ বদলে পরিবর্তন যে হতে পারে
বেমালুম সে কথাটি গেছো ভুলে!
এর জন্য সত্য বলবে তো বলে
প্রশ্ন ছোঁড়ার দরকার কি পড়ে?
কি জানলে?
উত্তাল সমুদ্র! ঝড় ও থামবার নয়
খানিকটা হিঁচকির খিটকি গেলে সজোরে
এখানে ও থামলে না,আরো চললে এগিয়ে!
দেখলে কি?তোমার থেকেও–
আরো দামি চাঁদ এখনো রয়েছে দাঁড়িয়ে!
শুধু ভাত কাপড়ের এইটুকু দায়ভার নেয়নি বলে–
মাঝখানে বিরতি না নিলেই নয় এই যা
বরং এখনো অগ্রাধিকারের তালিকায় প্রথম !
তাই বলি কী যতোই সংখ্যাতত্ত্বের বিচার করো
ব্যবধানের আকাশ কিনতে যেয়ো না আর
অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখে,
সুপ্ত মনে না করে চোখ রেখো ওপারে।
নদী শুকায়ে গেলে
– নরেশ বৈদ্য
সময়টা পূর্ণিমা রাত
কী জানি কেমন করে
ভেসে এলো মনকিবাত!
চেয়ে চেয়ে দেখলাম জোছনাকে
কাছে নয় দূরে–অনেক দূরে!
তখন সময়টা কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে
অনেকটা গিয়েছে এগিয়ে
চারাগাছ ও রয়েছে ঘুমিয়ে
দেখতে চাওয়াই বলো আর দেখাতে
ভ্রমরী এসবের ধার ধারে না বললেই চলে।
সেখানে আমন্ত্রণ সে তো দূর অস্ত
নদী যেমন শুকায়ে গেলে
আগাছার ঝোপঝাড় বাড়ে
তেমনই নিষ্প্রান কিছু বিনিময়ে
পাতা ঝরা কবিতার দেখা মেলে।
চোখের পাতার কী দোষ বলো
– নরেশ বৈদ্য
প্রস্তাব জায়গা দেখার হোক
কিংবা আগুন খিদের জোয়ার
কোনটাই দোষের নয়
শুধু স্বপ্ন দেখলেই তা অলীক মনে হয়!
কথার কথা হতেই পারে
কিংবা হাত,হাতের পরে রাখা যেতেই পারে
দুটোই না কী সময়ের অলিখিত দান!
অথচ সেই বুলেটের গুলিতে যায় টুটে শতশত প্রান।
যাওয়া বলো আর আসাই বলো
সুর তাল লয় নিয়ে,চলা এক ছন্দ
জড়িয়ে ধরলে পরে বলে লোকে মন্দ!
ঐ শোনো কানপেতে সুর ঝরে বাতাসে
সে আমার নয়,সে আমার নয়।
অতএব মনের গভীরে ফাটল হলে
চোখের পাতার কী দোষ বলো?
অনিদ্রার জ্বর বলে চালানোই ভালো।
অমৃতের স্বাদ
– নরেশ বৈদ্য
যেখানে জেনে গেছো মনহীন জানালায়
ফতুরের মেঘ ছাড়া কিছু নেই
থাকতে পারে কোনো এক সময়ের চলাচল।
তুমি ভাবতে পারো সে সময় তোমার ছিলো
তাতে লাভ কি বলো?
একটু তলিয়ে দেখো খুঁজে পাবে এক রাশ খেয়ালের ঝড়
তার চেয়ে বেশি হলে বড়জোর পেতে পারো পাতা খসার স্বর।
তাই বলি কী এদিক ওদিক নয়
কবিতার মায়াজালে বিকেলের বেলাভূমি কর পারাপার
পেয়ে যাবে মৃত সঞ্জীবনী সুধা এক বুক অসীম আকাশ–অমৃতের স্বাদ।
জানিনা ফুরাবে কবে
– নরেশ বৈদ্য
একটা ভাসানো ছবি
কত কিছু দিতে পারে
সেটাও বুঝতে হয়!
দূরে দূরে–কাছে কাছে
এভাবেও আসা যায়।
এই যে যাওয়া আসার
খোলা জানালা
হিসাব কি রাখে মনে?
অথচ ঢেউ আর ঢেউ খেলে
কী ভীষণ ঝড় নিয়ে
প্রেমের গল্প বুনে!
শুধু চেয়ে থাকা প্রত্যাশা ঘিরে
“জানি না ফুরাবে কবে–
এই পথ চাওয়া”।
কবি পরিচিতি

নরেশ বৈদ্য। জন্ম ২৭ শে অক্টোবর ১৯৭৯, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। পিতা: স্বর্গীয় জগন্নাথ বৈদ্য,মাতা: মনোরোমা বৈদ্য। পাঁচ সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কনিষ্ঠতম। বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার- সোনারপুর থানার অন্তর্গত বিবেকানন্দ নগরে- কলকাতা-৭০০১৫০-স্থায়ী বাসিন্দা। পড়াশোনা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এম কম)।
কবির কলমে কবিতা জেগে ওঠে স্বতঃউৎসারিত অন্তরপ্রেরণা থেকে – জীবনের বোধের অন্তর্নিহিত চেতনায় ভাস্বর হয়ে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: জীবনের রং তুলি, প্রেমের ঝর্ণাধারা, খেয়ালী আলোর ভেলা, যৌথ কাব্য সংকলন-৬-এ ছক্কা, দোহার, আকাশ গঙ্গা ও মোহনা।