চেতনায় মুজিব
– হারুন-অর-রশীদ খান
দুনিয়ার তাবৎ মানুষের কাছে
তুমি স্বপ্ন আর সংগ্রামের কিংবদন্তি।
তোমার সেই আকাশছোঁয়া স্বপ্ন,
জীবন বাজি রাখা অবিচল সংগ্রাম,
দিগন্তজোড়া হৃদয়ের অনুভূতি,
ভালোবাসায় সমুদ্রের গভীরতা,
মানবিক মেঘময় সুনীল ছায়া;
কেনো জানি আজ বড় বেশি ম্লান।
আজও হররোজ পাকি গোলামেরা
ধর্মের নামে আমজনতারে ঘিরে নেয়।
ঘাপটি মারা বদরেরা গণতন্ত্র চায়;
ঘাতকেরা আইনের শাসন নিয়ে ভাষণ দেয়।
বুকে “পাকসার জমিন” নিয়ে
হায়েনারাও লাল সবুজের পতাকা উড়ায়।
তোমার দয়ায় যে গোলামেরা
নতুনকরে জীবন পেয়েছিলো;
তারা এখন বড় বড় দল কচলায়।
ইনিয়ে বিনিয়ে ফন্দিফিকির আওড়ায়।
ধর্মের সুড়সুড়ি, জঙ্গীবাদ আর ষড়যন্ত্রে;
তোমার সোনার বাংলার দখল চায়!
দেশপ্রেম আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা
যেন প্লাবন ভূমির মতো ভাসিয়েছিলো!
যুদ্ধ শেষে তাইতো তুমি ভেবেছিলে-
এই বিজয় দেশের সব মানুষের;
সবাই তোমার আপনজন।
স্বাধীনতা, পতাকা, এই ভূখন্ড,
এই বাংলাদেশ সকলের অর্জন!
শত্রুমিত্র ভুলে সবাইকে আপন ভেবে,
বুকের জমিন ঝাঁঝরা করে,
ভূবন কাঁদিয়ে অকালে হারিয়ে গেলে!
তোমার হিমালয়সম ছায়া মুছে
গেলো মাথার উপর থেকে!
ঘাতকেরা উল্লাসে উচ্ছ্বাসে
মেতে উঠলো নতুন ষড়যন্ত্রে!
আবারও কত যুগ, কত কাল
আমরা গেলাম পিছিয়ে!
জানিনা সেই স্বপ্ন কবে স্বার্থক হবে;
এই বহমান সংগ্রাম কোথায় দাঁড়াবে!
মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার চেতনায়
এই বাংলায় মানবতার জয়গান হবে।
চলে এসো বন্ধু এপার বাংলায়
– হারুন-অর-রশীদ খান
তুমি চলে এসো বন্ধু
এই বাংলায় প্রাণের মেলায়।
শহীদের রক্তে পাওয়া, মায়ের মমতা মাখা;
সুনীল, সবুজ দ্বীপের এই সোনার বাংলায়।
ভাষার জন্যে জীবন দান,
মুক্তিযুদ্ধে গেল কত প্রাণ!
আত্মত্যাগের ইতিহাস জেনে যাও।
একবার ঘুরে যাও মায়াময় সবুজ দ্বীপে;
শহীদ মিনার আর স্মৃতিসৌধে
একটু শ্রদ্ধা জানাও।
দক্ষিণে সাগরের সুনীল ঢেউ
উত্তরে মায়াভরা পাহাড় সারি সারি;
সবুজের বুক চিরে বয়ে চলে হাজারো নদী।
কোথাও পাবে না খুঁজে
নানা রঙের এত মাখামাখি।
ছোট নদী ছোট বাঁকে, কত হাট কত ঘাটে;
জুড়াবে প্রাণ তোমার নিবিড় পরশে।
ফসলের ক্ষেতে শৈল্পিক দোলায়;
নিশ্চিত লাগবে ছোঁয়া তোমার হৃদয়ে।
ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘুরে ঘুরে
একটু বিশ্রাম নিও পদ্মার তীরে।
আকুল হও যদি ইলিশের গন্ধে;
একান্তে স্বাদ নিও তুমি রসনা বিলাসে।
তুমি চলে এসো বন্ধু, এই বাংলায়,
পলিমাটির বুকে নিবিড় ভালোবাসায়।
আমার সোনার বাংলায়;
এই প্রাণের মেলায়।
শ্রাবণ ধারায়
– হারুন-অর-রশীদ খান
শ্রাবণ ধারার সিক্ত ছোঁয়া
কাব্য জাগায় মনে;
সুরে সুরে কত কথা
বেঁজে উঠে প্রাণে।
ভালবাসার মুক্ত আলোয়
নিবিড় পরশ মেখে;
সুখের গাঙের মোহনাতে
স্বপ্ন সিঁড়ি আঁকে।
হঠাৎ যেমন নীলাম্বরী
হারিয়ে ফেলে বৃষ্টিধারা;
তুমিও ঠিক তেমনি করে
শিকড় ছিঁড়ে হও অধরা।
আবেগ জমে পরাণ পোড়ে
আশায় কাটে যুগ;
অঝোর ধারায় কষ্ট ঝরে
বুকের মাঝেই ভাঙে বুক।
যদি তুমি পানসী ভিড়াও
মোহনাতে পাবে আমায়;
ইচ্ছে হলে ভিজতে পারো
মিষ্টি মধুর শ্রাবণ ধারায়।
কালের ভাবনা
– হারুন-অর-রশীদ খান
গেলো শতাব্দীতে ভাবতাম মনে মনে;
আগামী শতাব্দীটা হয়তো বদলে যাবে।
মন্থর হবে দলবাজি আর দূর্নীতি;
ডান-বাম, ধর্ম-অধর্মের জগা-খিচুড়ি।
পাল্টে যাবে জনপদ, সভ্যতা, সংস্কৃতি;
আলোকিত হবে সমাজ, সম্পর্ক, সম্প্রীতি।
সুশিক্ষা, মানবিক চেতনা জাগাবে;
আমজনতা শান্তির সুবাস পাবে।
স্বপ্নগুলো অঙ্কুরিত হবে পত্রপল্লবে;
জীবন জগত বিকশিত হবে নতুন প্রাণে।
এ শতাব্দীর বিশটা বছর কেটে গেল;
অথচ, বিদ্বেষের বর্ণমালা আরও জটিল হলো।
অন্ধত্বের ঘেরাটোপে ভন্ডের বয়ান;
যা শোনানো হয়; বড্ড বেমানান।
গুমরে মরে চেতনা, মুচড়ে যায় আকাঙ্খা;
যা বলতে চাই; বলা যায় না।
প্রান্তর জুড়ে কেবলই আতঙ্ক!
হায় স্বাধীনতা! এভাবে আর কত!
পরিচিতি

মোঃ হারুন-অর-রশীদ খান। জন্ম খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার খলশী গ্রামে। তিনি সরকারি বি. এল. কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন এবং ছোটছেলে এবার এইচএসসি উত্তীর্ণ হবে। কর্মজীবনে ডুমুরিয়া শহীদ স্মৃতি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময় (১৯৯৪) থেকে তিনি এই কলেজে কর্মরত আছেন। কলেজটির নামকরণ তারই করা।
কবিতা, প্রবন্ধ ও নাটক লেখার চেষ্টা করেন কলেজজীবন থেকে। ভালোবাসেন ভ্রমণ আর লেখালেখি করতে। কিছু পথ নাটক রচনা ও পরিচালনা করেছেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। কবিতা, প্রবন্ধের পাশাপাশি ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে লেখালেখি করতে আগ্রহী। ডুমুরিয়া সদরে চারণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, উত্তরণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, অন্বেষা সাংস্কৃতিক সংসদের সাথে একজন সংগঠক হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানেও তিনি কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন। আশির দশকের শেষ দিকে তার লেখা বেশ কিছু নাটক উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মঞ্চস্থ হয়। তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে দর্শকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়।
সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর আগ্রহ বরাবরই। এ কারণে অবসর পেলে লেখালেখি এবং দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করে সময় কাটানোর চেষ্টা করেন তিনি।