জয়শ্রী কর – কবিতা (ওরা ভগবান, ফিলিস্তিনীদের বাঁচান, বিজয়কেতন, আমার বর্ণময় শৈশব, রমণীয় ফেসবুক, নৈসর্গিক শোভা)

ওরা ভগবান

– জয়শ্রী কর

চেম্বারে ডাক্তার
কী সকাল কী দুপুর
যদি আসে ডাক তাঁর
পাড়ি দেয় বহুদূর।

নররূপী ভগবান
নাড়ি টিপে ধরে রোগ
মুখে হাসি অম্লান
সহৃদয় যোগাযোগ।

ছুরি-কাঁচি হাতে তাঁর
কেটেকুটে করে ফাঁক
ঘৃণা লাজ পরিহার
ভালো হলে নামডাক।

ইচ্ছা অনিচ্ছায়
রোগীরা করলে ভুল
ডাক্তার ধমকায়
অকূলে মিলায় কূল।

নিরলস চেষ্টায়
মুমূর্ষু পায় প্রাণ
তরি ভিড়ে কিনারায়
নতুন জীবন দান।

ফিলিস্তিনীদের বাঁচান

– জয়শ্রী কর

বাঁচান-বাঁচান, বাঁচুক ফিলিস্তিনী
এ অধিকার সবার আছে
মারণাস্ত্র তোমার কাছে
অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণও বেশি
যুদ্ধে কে মরে কে বাঁচে।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হলে
ঝরবে না প্রাণ আর অকালে
তালবাদ্য তালে তালে
কাটবে জীবন প্রীতিময় বন্ধনে
জয়টিকা ভালে ভালে।

করোনাতে মানুষ এখন কাবু
বিশ্বজুড়ে অতিমারি
অনেক বিধিনিষেধ জারি
গাজার ওপর তবুও রকেট হানা!
কে ছড়াবে শান্তিবারি?

সন্ধিস্থাপন অতীব জরুরি
জীবনহানি, বিভীষিকা
কীসের এত অহমিকা
পৃথিবীতে জীবন থাকুক টিকে
চাইছি পথনির্দেশিকা।

বিজয়কেতন

– জয়শ্রী কর

দেশের মাটিতে রয়েছে রক্তছাপ
কান্না থামেনি ব্যথাতুর নর-নারী
শহিদ হয়েছে কয়েক লক্ষ প্রাণ
পাক সেনানীরা ভীষণ অত্যাচারী।

পাকসেনাদের দুর্ব্যবহার দেখে
গর্জে উঠেছে পায়নি আদৌ ভয়
মুক্তিযুদ্ধ চলল ন’মাস ধরে
বাঙালিরা চায় বাংলাদেশের জয়।

শূন্য হয়েছে কত জননীর কোল
ইজ্জত গেছে কত শত রমণীর
পুড়িয়ে মেরেছে জ্বালিয়েছে ঘরবাড়ি
সংগ্রামীদের সতত উচ্চশির।

দেশবাসী ছিল শেখ মুজিবের পাশে
প্রতিবেশী দেশ ভারত বাড়ায় হাত
থমকে দাঁড়ায় পাকিস্তানের সেনা
ভয় পেয়ে তারা হটে যায় পশ্চাৎ।

রক্ত ঝরার পরিশেষে অবসান
নয় মাস পর জয় এল অবশেষে
সবুজের বুকে উদয় নতুন রবি
বিজয়কেতন উড়ল স্বাধীন দেশে।

আমার বর্ণময় শৈশব

– জয়শ্রী কর

শৈশব কাটিয়েছি ধুলোবালি মেখে
হাতেখড়ি মা’র কাছে অ-আ-ক-খ লেখে।
আয় আয় ফিরে আয় ফেলে আসা দিন
সোনালি দিনের গান হয় না বিলীন।

স্কুলে গিয়ে বই ফেলে লুকোচুরি খেলা
ছিল না পড়ার চাপ কেটে যেত বেলা।
সহপাঠীদের সাথে হত খুনসুটি
একটু পরেই ভাব হেসে কুটিকুটি।

বগলে শিলেট বই হাতে তালচাটা
বৃষ্টিতে কচুপাতা ভিজত না গা’টা।
মাত্র মিনিট পাঁচ অদূরেই বাড়ি
খুলে ফেলি ভিজে জামা খুব তাড়াতাড়ি।

পাঁচ জন ভাইবোন মিলেমিশে থাকা
রংতুলি হাতে নিয়ে কত ছবি আঁকা।
পুকুরে সাঁতার কাটা ডুবে পাঁক তোলা
সুমধুর দিনগুলো যায় না তো ভোলা।

আমাদের কাজ ছিল ফুল তুলে আনা
মিলত নকুলদানা মা’র নজরানা।
ভুলিনি কিছুই আমি ভেসে ওঠে সব
কোথায় হারিয়ে গেল সেই শৈশব।

রমণীয় ফেসবুক

– জয়শ্রী কর

করোনাকালেও উজ্জ্বল ফেসবুক
স্ক্রিনের ওপর ভেসে ওঠে কত মুখ।
সারাটা জগৎ হাতের মুঠোয় আজ
একটু ছুঁলেই নিমেষেই সারা কাজ।

বিলাসী জীবন ফেসবুক দুনিয়ায়
লিখে বা লাইকে দিন বেশ কেটে যায়।
শুধু মোবাইল লাগে না কলম খাতা
লেখা হয়ে যায় বললেই ভরে পাতা।

ফেসবুক আজ ভেঙেছে স্বপ্নডানা
আদর কোথায় প্রেম-ভালোবাসা কানা।
হারিয়ে গিয়েছে ঠাকুমার রূপকথা
গল্প শোনার নেই কোনো ব্যাকুলতা।

ফেসবুক পেয়ে ভুলে গেছে কে আপন
সময় কোথায় নেই তাই আলাপন।
পাতায় পাতায় গল্প কবিতা গান
ছবিও রয়েছে হবে না কখনো ম্লান।

আজকের দিনে বন্ধু তো ফেসবুক
খোলা পরিসর মেলে অনাবিল সুখ।
সকলের তাই অনায়াস বিচরণ
ওর দৌলতে ভরে ওঠে প্রাণমন।

নৈসর্গিক শোভা

– জয়শ্রী কর

ডালে ডালে কত ফুল
কথা বলে হেসে হেসে
অরুণ কিরণ ঢালে
প্রকৃতিকে ভালোবেসে।

রোদ পেয়ে কুঁড়িগুলো
বিকশিত নানা রঙে
দোল খায় সমীরণে
নাচে ওরা কত ঢঙে।

বাতাসের কানে কানে
বলে ওরা কত কথা
এ কী অপরূপ শোভা
প্রকৃতির নীরবতা।

বাহারি ফুলের মেলা
প্রজাপতি এসে জোটে
পাখিরাও সুর তোলে
মৌমাছি মেতে ওঠে।

সবুজ পাতার ভিড়ে
থোকা থোকা আছে ঝুলে
বিকেলের মিঠে রোদে
মৌটুসী ফুলে ফুলে।


কবি পরিচিতি

জয়শ্রী কর। জন্ম জুন ২, ১৯৫৬তে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কোলাঘাট থানার অন্তর্গত চিমুটিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে। মাতা কমলাবালা, পিতা রামপদ মাইতি।

কোদালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রথম পাঠ। ১৯৭৪ এ ভোগপুর কেনারাম মেমোরিয়াল হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে স্নাতক স্তরে কলা বিভাগে ভর্তি হন। পড়া চলাকালীন ১৯৭৬ এ ডক্টর অজিত কুমারের সঙ্গে শুভ পরিণয়। কৈশোর থেকেই খেলাধুলা, সেলাই ও শরীরচর্চার সঙ্গে তিনি যুক্ত। পরে গিটার, তবলা, যোগ ব্যায়াম এবং কাব্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। নিজে একজন সংগীত শিল্পী ও সুরকারও বটে – বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করে থাকেন।

প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘নীল আকাশের কোলে’ পাঠকমহলে খুবই সমাদৃত। রাজ্য সরকারের তরফে রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরীর ফাউন্ডেশন এবং বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সভার যৌথ উদ্যোগে তার বই কেনা হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গ্রন্থাগারগুলির জন্য। এছাড়া আরো দুটি কাব্যগ্রন্থ – ‘ভোরের বাঁশি’ এবং মায়াডোর’ – প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যে। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার কবিতা রচনার প্রেরণা। প্রতিদিন কবিতা লেখা, কাব্য আলোচনা আর গানবাজনা নিয়ে এখন দিন কাটছে।