কল্পলোক
– পারমিতা ব্যানার্জি
সকাল থেকে রাত
খুঁড়িয়ে চলা খোয়া ওঠা রাস্তায়
জীবন গাড়ির গড়াগড়ি…
কুয়াশা ঢাকা কল্পলোকের সরণ।
শংসাপত্র হাতে
কেউকেটার বৈতরণী পার!
হয়তো বুক ফুলেছিল অজান্তে!
স্বর্গের গেটে
হতাশ দারোয়ান; ঘুষ বেহাত।
বারোয়ারী স্বর্গে
অনুদানের ছড়াছড়ি…
ব্ল্যাকে বিকোয় মাথা __
কে ধরবে ছাতা! হাজার ফুটো!!
কেতায় চলে নেতা।
চটি থেকে, মুড়ি মসৃণ রাস্তা!
এক্কা গাড়ি ছোটে__
শত শতকরার ভেট-এ।
চিলতে রোদের হাসি
– পারমিতা ব্যানার্জি
দীঘির কোলে, ওই শালুক বনে
বর্ষা মেয়ে নাচলো আপন মনে।
আষাঢ় গেল, শ্রাবণ এলো ওই;
খবর পেলো কদম কেয়া জুঁই ।
আমি তখন এলিয়ে খোলা চুল
আবছা রোদের সুখে করি ভুল!
নিভু রোদের মেঘের ফাঁকে উঁকি
সূর্য তখন খেলছে টুকি টুকি __
কনে দেখার আলোয় মন খুলে
ঘোমটা দিতে যেন গেলাম ভুলে।
তোমার চোখে দেখি আমার মুখ।
আমার তখন হাজার সূর্য সুখ!!!
ভাঙা প্রেম
– পারমিতা ব্যানার্জি
আজকাল __
মনের আঘাতগুলো
শ্রাগ করার মত ঝেড়ে ফেলি।
চোখের কোলে
জল জমে উঠলে ঢোঁক গিলে
কন্ট্রোল করে নিই!
তারপর দন্ত বিকশিত করি।
হাসিতে চাপা পড়ে যায়
যত যন্ত্রণা…
এত কিছু করতে করতে
বুকে ব্যথা অনুভব করি…
তখন হৃদয় বিশারদের
কাছে যাই।
এসব তাকে বুঝতে দিই না।
সর্বদা একটা হাসি
ঝুলিয়ে রাখি ঠোঁটের কোণে।
এর নাম ‘ভালবাসা’
কি না বুঝি না__
তবে বন্ধুত্বকে বজায় রাখি!!!
ভবের হাটে
– পারমিতা ব্যানার্জি
প্রেমানন্দে মজে
এ ভবের বাজারে চলেছে
হরেক পাগলের খেলা!
মন হারানোর মেলা _
প্রেম বিলিয়ে মরে যে জন
প্রাণের পাগল সেই জনা।
তুমি পাগল,
আমিও পাগল,
ক্ষ্যাপা-ক্ষ্যেপীর হাটে!
শ্যাম পাগলে বাজায় বাঁশি,
সে সুরে রাই পাগলিনী
সয় যে যত গঞ্জনা।
রসিক যে জন পাগল হলো
পাগল যে তাই সব জনা!
মেঠোপথও হয় যে পাগল
পলাশ যখন রাঙায় তারে__
সে পাগলামি
বোঝে ক’জন, মন জানে না।
উদাস বাউল ক্ষ্যাপা হলো
একতারার ঐ সুরে__
কবি পাগল, শিল্পী পাগল
ক্ষ্যাপা যে তাই সব জনা!
ভবের হাটে
ঘুরছে কত পাগল…
আসল পাগল কোন জনা!!
মন জানে না ।
নব ঘন আশা
– পারমিতা ব্যানার্জি
শেষের সূর্য আগুন জ্বালালো যেদিন
বিরহ আঙিনা মাঝে!
বিজয় তূর্য তোমায় সাজালো রঙিন
সকল কাজের সাঁঝে!
গুটি গুটি পায়ে এসেছিল শুকতারা
সূর্য যখন উদাসীন!
চোখের ছায়ে পেলাম তোমার সাড়া,
বাজিয়ে মনোবীণ!
একদিন মনে হাজার তারার আশা
রচেছিল আগমনী!
নয়নের কোণে নব আষাঢ়ের নেশা
হারানো মুক্তোমণি!
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।