ইথারে ইথারে
– সুমিত্র দত্ত রায়
বেতারকে বল্লাম
কবিতা শুনবো
কবিতা শোনালো
তোমার কবিতা।
মন ভার
তোমার কবিতা
আমায় টানছে বারবার
তোমার দুয়ারে,
যে দোর রেখেছো বন্ধ
কোনো এক
কুয়াশার রাত থেকে।
সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে
ফালতু চিন্তা ঝেড়ে ফেলে
এক আকাশ বুকটাকে সামলে
বাস্তবে পা রাখলাম।
যন্ত্রটাকে বল্লাম,
বন্ধ কর তোমার কবিতা,
আমি শুনতে চাই না আর।
শুনলো না।
ভুলেই গেছিলাম
আজ তুমি আমার নও
আজ তুমি বে তারের
যে তারের খেলাঘর
ইথারে …ইথারে …।
জন্মদিন
– সুমিত্র দত্ত রায়
লিখতে লিখতে কবি হবো
অভীপ্সা পূরণে কলম নিলাম হাতে
লেখাও চলল পাতার পর পাতা
বাড়লো পরিচিতের ভীড়
শুরু হলো সভা, আলোচনা,
কবিদের পরিমণ্ডলে ভাবুক ঘোরাফেরা।
সুফল মিললো কিছু কিছু
ভাষা হলো বেশ সমৃদ্ধ
প্রকাশ ভঙ্গিতে এলো গভীরতা
চোখ খুললেই, চোখের সামনে –
সমস্যারা ছোটাছুটি করে
চললো তার স্বচ্ছন্দ রূপায়ণ।
তবুও টনক নড়ে
অনেক কিছু না জানাই রয়ে গেছে
জানাও শুরু হলো – সাহিত্য, দর্শন,
প্রবুদ্ধ লেখকের অমর সৃষ্টি কত!
বোধ জাগলো, ছন্দ এলো,
সংগে এলো নাম, যশ, খ্যাতি।
ধাপে ধাপে উন্নতির স্তর
চোখের সামনে
মেলে ধরলো অন্যজগত।
সেখানে স্তুতির প্রাচুর্যতায়
আমি গেলাম অতলে তলিয়ে।
দম আটকানো পরিবেশ থেকে
একদিন খুঁজলাম নিভৃত আশ্রয়
অনেক বিশ্লেষণ চললো মননে
কোথাও মিললো না আমার কবিতার ঠাঁই
মৌলিকত্ব আমার থেকে দূরে, বহূ দূরে।
লিখতে লিখতে কবি হওয়া – হলো না
কবিতা নয়, নাম যশ খ্যাতির কাঙাল
ভাষা ছন্দে ভরে না তার অন্তঃকরণ
সে যেন এক ভাসমান মেঘমালার মতো
ধরা না দিয়েও মেঘপুস্প দান করে যায়।
কি করে বাঁধবো তাকে?
বুঝলাম যেদিন,
সম্ভবতঃ সেটাই ছিলো,
এক কবির জন্মদিন।
স্বরের আগুন
– সুমিত্র দত্ত রায়
নীলাকাশে নয় –
লাল দিগন্তে আজ,
তার পঞ্চমে,
স্বরের আগুন জ্বলছে।
স্বাধীন পথেতে
অনেক হাঁটা তো হলো,
ভেদাভেদ বোধ –
তাতেও কি কিছু কমছে?
আকাশ কাঁপানো
বিশাল বিশাল ফ্ল্যাট,
নীচে ছত্রাক
কুঁড়েঘরে বসে ধুঁকছে।
অনাদরে সব –
পরে জঞ্জাল স্তুপে,
ভুখা পেটে বসে
ক্ষুধার আগুনে জ্বলছে।
আজ তবু ওরা –
দেখছি জমতে জমতে,
সমবেত লড়াই
অভ্যেস করে নিচ্ছে।
নবীন মনের
লাল দিগন্তে আজ,
একতারা হাতে
স্বরের আগুনই জ্বলছে।
মনে রেখো
– সুমিত্র দত্ত রায়
রক্ত ঝরা দিনগুলোর হিসেব আজ
মুখ বন্ধ খামে বন্দী বিচারের জন্য।
দিন গুনে গুনে তামাদি হয় ভাবনা
ডাকছাপের অপেক্ষা আর কতদিন?
উচ্ছ্বাস ব্যবহার বা অপব্যবহারে
ক্লান্ত শিথিল দেহ আঁধারে পরে থাকে,
পাশবিক নৃশংস দলনে বোঁটা ছেড়া
বসন্ত কুসুম লুটপাট অবিরত।
স্বর্ণ শিখর রঞ্জিত প্রতিশ্রুত ভোর
আর কি আসবে না? পুঁথি পত্র শুধু
কি আশ্বাসই দেবে? নয়নে নাট্টশালা!
দিনপঞ্জি নাগাল ছাড়ায়, রঙ্গ দেখি।
অতীত, বর্তমান বা ভাবি পরিণতি
ইতিহাসে স্থান পাবে কি? তাও জানি না।
রক্ত ঝরা দিনের গুমরানো বেদনা
হয়তো রয়েই যাবে মুখ বন্ধ খামে।
যেদিন আমি থাকবো না
– সুমিত্র দত্ত রায়
হয়তো সেদিন আসবে
থাকবে আকাশ থাকবে বাতাস
থাকবে প্রীতি ভালবাসা ,
থাকবোনা শুধু আমি
চলে যাবো সব ছেড়ে
জগতের যত সুখ যত আশা।
হয়তো সেদিন আসবে
বাড়ির কোনো আলসেতে বসে
ভাববে আমার কথা,
ভাববে আমি ছিলাম
আজ আর নেই
জাগবে মনে ব্যথা।
হয়তো সেদিন আসবে
দার্শনিকের চিন্তাধারাও
চলবে আমায় নিয়ে,
জীবনধারার স্রোত দেখাবে
জাগছে কেমন করে
আমার মধ্য দিয়ে।
আসবে সেদিন আসবে
যেদিন আমি থাকবো না
এমন ছবি আঁকবো না
আমায় নিয়েই ভাববে
সেদিন আমায় নিয়ে ভাববে।
আসবে সেদিন আসবে
কেউ না কেউ ফেলবে চোখের জল
বসে ঠাকুর ঘরে,
চাপা ব্যথা বুকে ধরে।
গরদের শাড়ি পরনে থাকবে তার,
চাবির থোকায় ঘোমটা রইবে ঢাকা,
পূজার ডালি থাকবে হাতে আর –
মনটা রইবে ফাঁকা …বড়ই ফাঁকা।
কাঁদবেই সে কাঁদবে
হারিয়ে যাওয়া আমাকেই
বুকে বাঁধবে,
দূর হতে আমি দেখবো তারে,
মনে করে নেবো অতীতটারে,
তারপর যবে চলে যাব, সে জানবে না –
আমি যে এসেছি, সেটুকুও সে বুঝবে না।
থাকবো আমি থাকবো
থাকবে না আর শুধুমাত্র এ দেহটা,
শুদ্ধতা রবে কেটে যাবে এই মোহটা,
অনন্ত আর অসীম আমার আমিত্ব,
অমর থাকবে সংগে থাকবে – এ সত্য,
হারাইনি আমি আজো রয়ে গেছি,
প্রেমের জগতে চিরতরে আছি।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।