অজিত কুমার কর – কবিতা (হুল দিবস, রণক্ষেত্র গাজা, আমরা করব জয়, ভাঁটফুল, কেমন করে রাখি ধরে, বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম)

হুল দিবস

– অজিত কুমার কর

যত বঞ্চনা শিখা তত লেলিহান
রুখে দাঁড়িয়েছে তেজিয়ান সাঁওতাল
শাসনযন্ত্র যা দেখেনি এতকাল
সিধু-কানু-চাঁদ-ভৈরব আগুয়ান।

লুটেরার দল বজ্জাত ইংরেজ
দিল পিছুটান ধেয়ে আসে শত তির
বুক ফালাফালা করে দেবে চৌচির
শ্বেতাঙ্গ দেখে কালো মানুষের তেজ।

এ দেশ আমার তোমরা বহিরাগত
এই অরণ্যে আমাদের আস্তানা
সৃজন করছি শ্রম দিয়ে একটানা
কর হে এবার আচরণ সংযত।

সেদিনের কথা লিখে গেছে ইতিহাস
বিদ্রোহীদের সকরুণ পরিণাম
ভোলেনি মানুষ জীবনের সংগ্রাম
চির অমলিন বিক্রমী মপ্রতিভাস।

রণক্ষেত্র গাজা

– অজিত কুমার কর

নৃশংসতায় গড়ল নজির এবার ইজরায়েল
একনাগাড়ে বোমাবর্ষণ, জীবের নাভিশ্বাস
নিরীহ ওই মানুষগুলোর কোথায় অপরাধ!
প্রস্ফুটিত তরতাজা প্রাণ এক মুহূর্তে লাশ।

পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণে দেশ-ইজরায়েল
ভূমধ্যসাগরের তীরে গাজার অবস্থান
উদ্ধত-আগ্রাসী ভীষণ ওদের প্রশাসন
বোমাবর্ষণ, রকেট-হানার চাইছি অবসান।

চিন-পাকিস্তান একইভাবে চালাচ্ছে সন্ত্রাস
অস্থিরতা জিয়িয়ে রাখে’ দেশের সীমানায়
অতিমারীর সময়েও চেষ্টা দখলের
বিশ্বজুড়ে মৃত্যু-মিছিল মানুষ শান্তি চায়।

রাষ্ট্রসংঘ, অন্যান্য দেশ করুক হস্তক্ষেপ
এ সমস্যা বহুদিনের জ্বলছে দাবানল
নির্বাপণের চেষ্টা কোথায়, মরছে সাধারণ
ধ্বংস করে কী আনন্দ, জাহির অস্ত্রবল!

মানুষ-মারায় সিদ্ধহস্ত ‘মানুষ’ নামক জীব
মজুদ অস্ত্রে হতে পারে পৃথিবী ছারখার
নেতারা কি চাইছে এটাই, তাহলে ধিক! ধিক!
এমন মানুষ ধরায় আসুক চাইছি না কেউ আর।

আমরা করব জয়

– অজিত কুমার কর

ইদের নমাজ-পাঠ মসজিদে নয় ভাই
তাহলে বাড়তে পারে কোভিড-সংক্রমণ
এবার যে যার ঘরে রাখলাম আবেদন
আল্লা, তোমার কৃপা সবার জন্য চাই।

মুখোশে ঢেকেছি মুখ এটা খুব দরকার
ঘরেই থাকতে হবে বিপদের ঝুঁকি কম
বাইরে যাব না কেউ কিছুদিন একদম
বলেছে এমনটাই আমাদের সরকার।

আমরাই আটকাব করোনার এই ঢেউ
সকলের চেষ্টায় সাফল্য পাব ঠিক
শৃঙ্খল ভাঙবেই হলেই আন্তরিক
যদি না নিয়ম ভাঙি অযথা আমরা কেউ।

বিজয়ী হতেই হবে মানব না পরাজয়
দুজনের দূরত্ব কমে করে ছয় ফুট
নাক মুখ দুই ঢাকা কথা কম অস্ফুট
সাহসে বাঁধব বুক অকারন নয় ভয়।

ভাঁটফুল

– অজিত কুমার কর

মনমাতানো সুগন্ধি ভাঁটফুল
সুবাস ছড়ায় যেমন জুঁই বকুল
তাই ভ্রমরের ভাঁটফুলে গুঞ্জন
মরমি যে মন
যেতে যেতে দাঁড়ায় কিছুক্ষণ।

সবার কাছে পায় না সমাদর
পথের পাশে জঙ্গলে যে ঘর
ফুলদানিতে মেলে না ঠাঁই তাই
ফুলের দুঃখ নাই
‘বনে জন্ম, বনেই থাকতে চাই।’

ভাঁটের কথা শুনছে কেবা আর
রোজ ঢুঁ-মারে মৌমাছি বারবার
তাতেই খুশি গর্বে ভরে বুক
করে না ভুলচুক
প্রজাপতি, জোগায় মনে সুখ।

নিম শিরীষের দলেই পড়ে ভাঁট
মা’র আদরে সর্বদা ফিটফাট
সংবেদনশীল চরম তৃপ্তি পান
ফুলের প্রতি টান
নগণ্য নয় প্রকৃতির এই দান।

কেমন করে রাখি ধরে

– অজিত কুমার কর

মাত্র দু’মাস পরমায়ু
শুভাগমন শৈত্যশেষে
রং লাগলে তুমিই এসে
সঙ্গে সখী দখিন বায়ু।

তুমি ছিলে পলাশ ছিল
ছিল অশোক কৃষ্ণচূড়া
ধামসা মাদল মহুল-সুরা
মনবিহঙ্গ উড়াল দিল।

যেটুকু রং এনেছিলে
উবে গেল যাবার পরে
পারিনি তা রাখতে ধরে
কেন এমন কেড়ে নিলে।

পথের পাশে গ্রাম-নগরে
চরণচিহ্ন আজও আছে
যখন কোয়েল ডাকে গাছে
হাসি ফোটায় ম্লান অধরে।

বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম

– অজিত কুমার কর

সংগ্রাম বিপ্লব ঘটে যুগে যুগে
থলেধরা পা-চাটারা মত্ত হুজুগে।
কোথায় পিছাবে আর পিঠ ঠেকে গেছে
দাঁড়াতেই হবে রুখে সময় এসেছে।

রুশ বিপ্লব ঘটে মার্চের আটে
নারীদের পরিসর শেষ চৌকাঠে।
দিতে হবে অধিকার শ্রমিকেরা পাশে
খবর ছড়িয়ে গেল শ্বাসপ্রশ্বাসে।

বিশ্বের নারী পড়ে সমাজের কোপে
কৌশলী পুরুষেরা রাখে ঘেরাটোপে।
মে দিবস স্বীকৃত দেশে ও বিদেশে
শ্রমিক পেয়েছে আজ মর্যাদা শেষে।

দমন পীড়ন চলে, সাঁড়াশি ত্রিবেণী
শ্রমিকের হাতিয়ার হাতুড়ি ও ছেনি।
বাধার প্রাচীর ভাঙে আঘাতে আঘাতে
অসীম শক্তি আছে কড়াপড়া হাতে।


কবি পরিচিতি

অজিত কুমার কর। জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৪৬ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কিসমৎ জগন্নাথ চক গ্রামে। মাতা রাজবালা, পিতা কালিপদ। মৌরাজল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু। ১৯৬২ সালে রামচন্দ্রপুর রাইসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল ফাইনালে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ তে পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে থেকে প্রি-ইউনিভারসিটি ও ১৯৬৬ তে বিজ্ঞান বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। ১৯৬৯ এ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি গণিতে প্রথম হওয়ার ছয় বছর পর ১৯৭৫ এ ওখান থেকেই পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। সিএসআইআর এর পোস্ট ডক্টরেল ফেলোশিপ পেয়ে পুল অফিসার হিসাবে দু’বছর গবেষণা করেন। ১৯৭৬ সালে জয়শ্রী মাইতি-র সাথে শুভ পরিণয়। এরপর হুগলি জেলার নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে কুড়ি বছর অধ্যাপনার পর ২০০৫ এ গণিত বিভাগ থেকে রিডার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

তারপর প্রবেশ সাহিত্যের আঙিনায়, সহধর্মিণী ও কবি সুমনা প্রামাণিক এর অনুপ্রেরণায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ন’টি। ‘ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তাথৈ তাথৈ নাচ’, ‘পঞ্চক’ ৪খন্ড, ‘লাঞ্ছিত গোলাপ’ এবং ‘রত্নমালা’। কবির চারটি ই-বুক ‘নীলাঞ্জনে রঞ্জিত’, ‘কে তুমি লাবণ্যময়ী’, ‘কীর্তিমান’ এবং ‘প্রেম কাননে ফুটলো ফুল’। অপ্রকাশিত ‘ছড়ার ঘড়া’, ‘ঘড়া ঘড়া ছড়া’, ‘হাঁড়ি ভরা ছড়া’ ‘এক কড়া মিঠা ছড়া’, ‘মহৌষধ বনৌষধি’, ‘শেয়ালের উপাখ্যান’ ইত্যাদিপশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবির কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ। বর্তমানে বাংলা-কবিতাডটকম ওয়েব ব্লগ সাইটে নিয়মিত কবিতা পোস্ট করেন। ই-ম্যাগাজিনেও কবিতা প্রকাশিত হয়। অবসর জীবন কাটছে সানন্দে সারস্বত সাধনায় পাঁশকুড়ার জয়াকুঞ্জে।