কোন অনুরাগে
(ট্রায়োলেট)
– পারমিতা ব্যানার্জি
কাল যে গান শুনিয়েছিলে তুমি,
পাহাড়ী সে নদী, মনে বয়ে গেল!
স্মৃতি আলো চোখে দিলো চুমি!
কাল যে গান শুনিয়েছিলে তুমি।
সুখে আঁখি জল এসেছিল ভ্রমি!
প্রেম বুঝি তাই ফিরে এসেছিল!
কাল যে গান শুনিয়েছিলে তুমি ;
পাহাড়ী সে নদী, মনে বয়ে গেল!
অভিমান ভুলে
(রুবাই)
– পারমিতা ব্যানার্জি
বাঁধিনি খোঁপা অভিমানে, বিরহে এলোচুল!
তখনই তুমি এলে কাছে, মুছে মনের ভুল!
চাঁদ ছিল না কোথাও ,তবুও জোছনা মনে!
বিরহ-প্রেম আকাশে তুমি যে এক অতুল!
চিতার কলরব
– পারমিতা ব্যানার্জি
শয়ে শয়ে পুড়ছে কোভিদ শব!
অগ্নি শিখায় চিতার কলরব!
একটু দূরে অনুভবে পরিজন,
ব্যথার বুকে বিভীষিকার ক্রন্দন।
অতিমারী যে খেলা খেলছে ভবে,
কার পালা আসবে এবার তবে!
কী এক আশঙ্কায় যে দিন গোনা!
বিধাতা শোনে না জীবন প্রার্থনা।
চিতার আগুন জ্বলবে যতদিন!
বাঁচার আশা হচ্ছে ক্রমে ক্ষীণ!
স্মৃতির লাল বাক্স
– পারমিতা ব্যানার্জি
রাস্তার মোড়েতে সে
দাঁড়িয়েই নেই আর।
পেটটি ভরে চিঠি যে
গিলে খেতো সব্বার!
ডিজিটাল যুগে বসে
উঠেছে লেখার পাট!
কম্পিউটারেও বুঝি
পড়া হয় সহজ পাঠ!
চিঠি লেখে বোকারা
নবীনেরা বলে থাকে।
এস এম এস প্রভৃতি
কত কথা যায় বকে।
ফুরিয়েছে প্রয়োজন
লাল ডাক বাক্সটার!
কী এক বস্তু ছিল সে,
সেটা বড় বিস্ময়কর!
জাগো ভালোবাসা
– পারমিতা ব্যানার্জি
সূর্য উঠুক না উঠুক _
ফুল ফুটুক না ফুটুক _
পাখি গান যদি না গায় __
আমি কি হারিয়ে যাবো?
আমার চোখের আড়ালে
থাক্ এক পৃথিবী প্রত্যাখান!
যা শুধু শেখাবে ভালবাসা।
পাহাড়ের মতো…
সমুদ্রের মতো…
বিস্তীর্ণ বনানীর মতো…
একটু একটু করে গড়ে উঠবে
‘ভালবাসা’!!!
মানুষ বুঝবে না হয়তো__
কখনো সুনামি হবো…
কখনো ল্যান্ড স্লাইডিং…
কখনো বা দাবানল হয়েও
ধ্বংসাত্মক হবো!
প্রতিহিংসায় নয়_
সেই ধ্বংসের মাঝে
সৃষ্টিকে খুঁজেবো নতুন করে।
জানি না কিভাবে যেন
একটু ভালবাসা
প্রদীপের আলো দেখাবে
প্রত্যাখানের বিনিময়ে…
অপূর্ণ উপন্যাস
– পারমিতা ব্যানার্জি
উপন্যাস _
তোকে একদিন মন দিয়েছি;
ছুঁয়ে থেকেছি। তোর সমাপ্তি চাইনি
কোনোদিনও।
তবু কেন যে তাড়া দিস_
কেন যে শেষ দেখতে চাস!!
এখনো বোধহয় বাকি
অনেক শাখা প্রশাখার _
কত পাতা জন্মায়, কত ঝরে!
এর শেষ খুঁজে পাই না।
কত না চরিত্রের আনাগোনা
প্রতিনিয়ত…
আমার কাছে সব চরিত্রই যে
মূখ্য হয়ে যায় _
ওরা শেষ হতে চায় না কেউই।
তাই বোধহয়
এক অপূর্ণ উপন্যাসকে
কলম দিয়ে নয়,
মন দিয়ে ছুঁয়ে থাকতে চাই
আজীবন…
একটিবার
– পারমিতা ব্যানার্জি
হঠাৎ যদি _
ভোরের গন্ধ মেখে
ফুটে ওঠে বিকেলের ফুল!
হঠাৎ যদি _
পিছন ফিরে তকাই
ফিরে পাই অতীতটাকে!
কিংবা যদি _
কদম গন্ধে ভিজতে চায়
রুক্ষ শীত অবেলা!
আবার যদি _
ফিরে আসো তুমি
সূর্য ওঠার কুসুম আলোয়!
কিংবা যদি _
শেষ বিকেলের ক্লান্ত সূর্য
রাঙিয়ে দেয় তোমার ঠোঁট!
ফেরার পথে _
হয়তো থমকে দাঁড়াবো
কিছুক্ষণের জন্য!
যাবার তাড়া থাকবে জানি।
তবু _ তবু _
একবারের জন্য হলেও
চোখ রাখবো তোমার চোখে।
হয়তো _
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।