বৃষ্টি বিলাস
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
আমি তোমার বৃষ্টি দামে কেনা
নইতো বেশি চেনা
আজকে তোমায় পেতে
মন ছুটেছে বাউল নাচে মেতে।
তোমার সেই কথাটা দেখব জেনে
পরাজয়ের ক্লান্তি মেনে
বৃষ্টি ফোঁটায় নিরুদ্দেশ
সত্য মেনে বসে আছি অবশেষ।
তুমি ভিজতে গিয়ে কদম ফুলে
দাঁড়িয়ে ছিলে উপকূলে
বৃষ্টি তোমার ছোঁয়নি গাল
ধরতে এসে পাই নাগাল।
বৃষ্টি বিলাস মাঠের ধারে মন ছুটেছে
তোমার নামে ফুল ফুটেছে,
তোমার চেনা কদম ফুল
খুঁজে দিতে আর কোনদিন হয়নি ভুল।
বর্ষা এলে পরবে কদম ফি বছর
মন খোপাতে বড়জোর,
শ্রাবণ ঘনাক বর্ষা জ্বালা
গেঁথো তুমি আমায় ঘিরে বর্ষা মালা।
রাখাল ছেলে মাঠে চলে বাদলা দিনে ঐ
আমি তবু উপকূলে রই,
ভাঙা ঘরে বৃষ্টি নামে
তবু তোমায় পেলাম অনেক দামে।
অনাহারী মন
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
হাতে নেই কাজ, নেই তবু বাড়তি সময়,
অতিমারী ঢেকেছে আকাশ বিশ্বময়।
পাহাড় দেখিনা, নদীতে যাইনা
মন কেমনে স্বজন খুঁজে পাইনা।
দেখিনা আকাশ, যাইনি বহুদিন ধানক্ষেতে
মন মরার চরে পড়ে আছি কানপেতে।
কী দারুণ বিদ্রোহ, বিদ্রূপ, অপমানে,
তবু মানবিক টান, যাব কোনখানে?
তোমার কাছেও যায়নি বহুকাল
ক্ষয়ে গেছে অনুভবের কাল,
বিরহ মধুর তীব্র দহন সুরে
কেঁদেছি অসীম নিজ অন্তঃপুরে।
আমদের আজ হাত পা বাঁধা
নিজের কাছে নিজেই গাধা।
অদৃশ্য শক্তি নিয়েছে আমাদের কিনে,
কোথাও কোনো কিনার নেই এই দুর্দিনে।
হলুদ প্রজাপতি চেয়ে থাকে আড়চোখ
রাত্রির নিভাঁজ উল্লাস ঠেলি প্রাণপণ,
প্রজাপতি মেলে ডানা, দুর্ভিক্ষে বাধা আমি
আমার দুই হাতে, বাধা পড়ে মন অনুক্ষণ।
মনের খোরাক না যদি পাই,
বিবেকের কাছে নিজেকে হারাই।
অনাহারের নেই কষ্ট, মন কেমনে রই,
শিকল বাঁধা মনের বেড়ি, মুক্তি মেলে কই?
চাঁদের সুবর্ণ রেখা
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
সন্ধ্যায় সূর্য ডুবে যাবে
দিনের প্রখর সূর্যকর সে কথা
ভুলিয়ে রাখে বেমালুম!
গ্রীষ্মের বালুমাঠে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ঘাস
কেবল পেছনে ফেলে আসা
দেহকে নিয়ে গর্বিত ইতিহাসে মগ্ন।
গভীর রাতে ঘুম ভাঙলে
কেবল পুরোনো কথাই মনে পড়ে।
চা বিক্রেতার চোখ, চায়ের কাপে
গরম পানির ঝরা ঢালতে ঢালতে
সন্ধ্যায় ওজনে ঠকানো চাউল বিক্রেতার
ছবিতে পানি এসে পড়ে!
দালালের বেহায়াপনা হরহামেশা
বদহজম উগরে আসে মুখে
অথচ কী দারুণ অভিনয় সুখে
হেসে বিগলিত জনসমুখে।।
সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে
নিজেই ভুলে যাই ভালো থাকা,
ভালো থাকার সজ্ঞাই জানা হয়নি আজও
চাঁদের কাছে শিখতে গিয়েছিলাম –
বলে দিলো, আমার মুখেই কলঙ্করেখা
আমি নিজেই ভালো নেই!
গন্ধে আকাশ
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
আকাশ গাঙে গন্ধের সাধ পাইরে
সকাল বিকেল দৃষ্টি রোদের বাইরে
রাতের চাঁদ হারাই অন্ধকারে,
তোমায় ভালো বাসতে গিয়ে হেরে
মনের গন্ধের ওজন সেতো পাইনারে
তোমায় পেয়েও হারাই বারে বারে।
তোমার আকাশ কমলা রোদে ভরে
আমার জগৎ কাটে ঘুমের ঘোরে
স্বপন নামে ঘুম ভাঙতে ভোরে।
এক চিলতে আকাশ ধরি হাতে
চাইছি পেতে সকল বেদনাতে
রোজ বিকেলে আমার আকাশেতে।
আকাশ আলো ঘিরে থাকে তারে
দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে জোরে
আলোর নাচন পাই যে বুকের পরে।
আকাশ চোখে সাতরাই বিলঝিল
খুঁজে ফিরি তোমার চোখের মিল
নিঃস্ব হৃদয় বেদনায় হয় নীল।
গন্ধে আকাশ পদ্মাসনে চেয়ে
হঠাৎ আমি তোমাকে যাই পেয়ে
প্রাণ ভরে আজ বেড়াই গান গেয়ে।।
কবি পরিচিতি

মনোজ কান্তি বিশ্বাস। জন্ম ১৯৭৫ সালে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মাইটভাঙ্গা গ্রামে। বটিয়াঘাটা হেড কোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বটিয়াঘাটা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে বাংলা সম্মান সহ এম এ পাস। কর্মজীবনে একজন গবেষক ও স্বনামধন্য অধ্যাপক। গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর দুটি গবেষণার প্রজেক্টের সাথে। বর্তমানে কর্মরত আছেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে মোংলা উপজেলায় অবস্থিত মোংলা সরকারি কলেজ-এ ২০০২ সাল থেকে।
স্কুল জীবন থেকে কবিতা লেখার সূত্রপাত। কলেজে পড়াকালীন সময়ে কবিতা ও প্রবন্ধ রচনায় বেশকিছু পুরস্কার পান তিনি। এসময় বেশকিছু দৈনিক পত্রিকায়ও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর লেখা কবিতার বই ও শিক্ষার্থীদের জন্য বইও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্ত আছেন বিভিন্ন সৃজনশীল লেখা-লেখির সাথে। বেশি পছন্দ কবিতা পড়া ও লেখা। নদী, প্রকৃতি, ঋতুবৈচিত্র ও জীবনবোধের প্রকাশই তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।