কেউ মনে রাখেনি
– বিচিত্র কুমার
একদিন দু’জনে একটা সুখের স্বপ্ন দেখেছিলাম
ইচ্ছে নদীর তীরে বসেছিলাম দুজনে হাত রেখে হাতে
ফুল ফুটেছিলো সুখের গভীর বনে পাখিরা গাইছিলো
রৌদ্র উঠছিলো মিষ্টি হেসে প্রভাতে।
তুমি কানে কানে বলছিলে চুপিচুপি
সদ্যফোটা ফুলগুলো খুশিতে তুলতে,
ফুল আর ভ্রমরের মতো বারবার
মনের অজান্তে একবার ভুল করতে।
তোমার জন্য একবার ফুল তুলতে ইচ্ছে করছিলো
মৃদু বাতাস রয়েছিলো তোমার অপলক দৃষ্টিতে,
হঠাৎ আকাশের বুকে বিজুলি চমকাতে লাগলো
দু’জন ভিজে গেলাম পুষ্প বৃষ্টিপাতে।
আমার জীবনে তুমি দিয়েছিলে একদিন দোলা
দেখতে দেখতে কখন যে দুপুর হয়েছে খেয়াল করিনি,
বৃষ্টির একটানা ভিতরে কূলে দু’জন হেঁটে যাচ্ছিলাম
কখন যে সব কথা শেষ তারপর তুমি আর পিছু ফিরো নি।
অতঃপর
কখন যে আমার দুচোখে অশ্রু এলো কেউ মুছে দেয়নি
রৌদ্র কিম্বা বৃষ্টিতে সে ব্যথা এখনো শুকায়নি।
বৃষ্টি ও সাগর
– বিচিত্র কুমার
বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে
আর তোমার জলের স্রোতে ভাঙছো নদীর দ-ুকূল,
বুকের ভিতর যেন একটা কালবৈশাখীর তাণ্ডব
না জানি তুমি কত করছো ভুল।
এদিকে আমারও দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীর ভিতর
তোমার প্রবেশে আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহিত হচ্ছে,
তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে,
অনুভবে শুধু তাণ্ডব উচ্ছ্বসিত হচ্ছে।
এমন জলের রাতে যদি আমি সাগর হয়ে
তোমাকে জড়িয়ে রাখি বুকের নীড়ে,
তুমিও আঁধারের রং ছুঁয়ে খানিক হেসে
আমায় জড়িয়ে থাকো বুকের ভিতর।
প্রশ্ন
– বিচিত্র কুমার
বটের ছায়ায় বসে এক সুখ পাখিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
আদৌ তুমি আবার কি ফিরবে তো?
সে নীরবে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
মিষ্টি এক দক্ষিণা বাতাস কে জিজ্ঞেস করেছিলাম
তুমি সবসময় এমন করে প্রাণ জুড়াবে তো?
সেও নীরবে বয়ে গেলো।
পাশের বহমান এক নদীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
তোমার দেখা আবার পাব তো?
সেও কোন উত্তর দিলো না।
তোমাকে জিজ্ঞেস করব সে অধিকার তো আমার নেই,
তাই উড়ন্ত এক ময়নাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
তুমি কি আবার সত্যিই আসবে তো?
ভুলে যাবে না তো আমাকে চাঁদের আগমনে
একদিন যে শপথ নিয়ে ছিলে গানে গানে।
সেও নীরবে উড়ে চলে গেলো।
তবু আমি বসে থাকলাম নিজের মনকে প্রশ্ন করে
তুমি আবার ফিরে আসবে বটের নীড়ে,
সুদূর থেকে একটা পাহাড় ভাঙ্গার শব্দ পাচ্ছিলাম
ঠিক যেন আমার বুকের ভিতরে।
তোমার মুখশ্রীর ছবি
– বিচিত্র কুমার
তোমার জন্যই রঙ মেখেছি
আমি হয়েছি শিল্পী গায়ক কবি,
অন্তরেতে খোদাই করে এঁকেছি
তোমার মুখশ্রীর ছবি।
সেই ছবিটি বারবার ভেসে উঠে
আমার দু-আঁখির সামনে,
প্রিয়া, তুমি ছাড়া কিছু ভালো লাগে না
বলো আমি একাকী থাকি কেমনে।
তোমায় ছড়া যে আমার
রঙতুলি ছবি হাসে না,
কণ্ঠতে সুর আসে না
কবিতায় আর ছন্দ আসে না।
তোমায় ঘিরে বুকের ভিতর
আমার অনেক স্বপ্নের বসবাস,
তুমি ছড়া আমি ভীষণ একা
যেন জীবন্ত এক লাশ।
কবি পরিচিতি

বিচিত্র কুমার। জন্ম ১৯৯১ সালের ১৫ ডিসেম্বর,বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলাধীন খিহালী পশ্চিম পাড়া গ্রামে। পিতা: বিপুল চন্দ্র কবিরাজ, মাতা: অদিতী রানী কবিরাজ। ২০০৮ সালে আলতাফনগর কে এম এ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি, ২০১০ সালে সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ,বগুড়া থেকে এইচ এস সি এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে (অনার্স) ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন।
এ পর্যন্ত বেশ কিছু যৌথ কাব্যগ্রন্থে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এ সবের মধ্যে ২০১৫ সালে প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ: আমাদের দেশ, এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থ সমূহের মধ্যে : অমর কাব্য গাঁথা, একমুঠো আলো, শত কবির কবিতা, আঁধারে আলোর রেখা, লাঙল, রক্তাক্ত আগস্ট, কাব্যগাঁথা বিজয়, জীবনের যত কাব্য, সূর্যসিঁড়ি তৃতীয় সংকলন, কবিকোষ-২, সেতু(সিঙ্গাপুর), উদীয়মান কবি, কবিকোষ-৩, দীর্ঘশ্বাসের কাব্য ও মায়াবতী উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তার লেখা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক জাতীয় পত্রিকা,সাপ্তাহিক পত্রিকা,অনলাইন পত্রিকা,মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হয়।