জয়শ্রী কর – কবিতা (গুণবতী চন্দ্রাবতী, কাকতাড়ুয়া, মৃত্যুমিছিল, প্রথম বই সহজপাঠ, বাংলা ভাষা গর্ব আমার)

গুণবতী চন্দ্রাবতী

– জয়শ্রী কর

চলনবিলের চন্দ্রাবতী অশেষ গুণবতী​
বিলের পাশেই বিশাল প্রাসাদ ভক্তিমতী অতি।​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সখীরা রয় পাশাপাশি​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ছলকে পড়ে মুক্তা-হাসি​
​ ​ ​ ​ বিদ্যাবুদ্ধি প্রখর খুব চোখে দিব্যজ্যোতি।​

রোদ ঝলমল প্রত্যুষে রোজ ডিঙা ভাসায় বিলে​
​ ​ যায় না একা কোনদিনও যাবে সবাই মিলে।​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ডিঙা থাকে বিলের ঘাটে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ সাঁতারুরা সাঁতার কাটে​
বিলের জলে মাছ আছে ঢের ছোঁ-মেরে খায় চিলে।​

​ সহজ-সরল অন্তঃকরণ কাতর দুঃখীর দুঃখে​
‘দরাজ হাতে দান করে সে’ উড়ছে মুখে মুখে।​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অন্ন দেবে নিরন্নকে​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অর্থ-বস্ত্র দরিদ্রকে​
সর্বদা চায় দেশের মানুষ থাকুক একটু সুখে।​

​ চলনবিলের চন্দ্রাবতীর খ্যাতি জগৎজুড়ে​
এসব খবর রয় না চাপা বাতাসে যায় উড়ে।​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ অনাড়ম্বর জীবনযাপন​
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ দেশের মানুষ সবাই আপন​
দেশের কেমন পরিস্থিতি দেখবে ঘুরে ঘুরে।

কাকতাড়ুয়া

– জয়শ্রী কর

শস্যক্ষেতে ঠায় দাঁড়িয়ে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে
মাথায় ছাতা ধরে না কেউ পাখি-ফড়িং চড়ে।
বাতাস বলে কানে কানে তোর রূপ নেই মোটে
কিন্তু তোকে দেখাচ্ছে বেশ চুরুট গোঁজা ঠোঁটে।

এসব কথা চুপটি করে কান পেতে সব শোনে
ফুটো দিয়ে বাতাস ঢোকে অপূর্ব রিংটোনে।
দিবারাত্র খোলা মাঠে একাই জেগে থাকে
রবি-শশীর মিষ্টি আলো সারা অঙ্গে মাখে।

মায়ের কোলে শিশু-কিশোর দেখে অবাক চোখে
স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে বেড়ায় কল্পলোকে।
অন্ধকারে ভূত ভেবে লোক ভয়ে পালায় ছুটে
ভয় তো ওদের পাবার কথা চেহারা বিদঘুটে!

চাঁদকে পেয়ে রবির যেমন খুশির জোয়ার প্রাণে
কাকতাড়ুয়ার বিজন ভুবন ঝিল্লি ভরায় গানে।
মৌমাছিরা ধানের শিষে উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে
মনটা তখন বাঁধনহারা আকাশ যেন ডাকে।

মৃত্যুমিছিল

– জয়শ্রী কর

করোনা তুই আবার এলি ফিরে
জ্বলছে চিতা শ্মশান-নদী তীরে ।
লাশের ওপর লাশ জমা হিমঘরে
দীর্ঘ সময় মেঝেতে রয় পড়ে।

কবরস্থানেও বিশাল লাইন মৃতের
শূন্য পুরি এ কী খেলা ভবের।
ভোটের প্রচার ভীষণ চড়া সুরে
মরছে মানুষ সারা বিশ্বজুড়ে।

স্বাস্থ্যবিধির নেই সুরক্ষা পাঁচিল
মাস্ক না পরে চলছে মিটিং মিছিল।
অকারনে ঘূর্ণাবর্তে পড়ি
নিজের কবর নিজেই খুঁড়ে মরি।

অর্থ, প্রভাব থেকেও মানুষ নিঃস্ব
চোখের সামনে ভাসছে করুণ দৃশ্য।
মুহুর্মুহু মৃত্যুর হাতছানি
আগুন নিভবে কবে কেউ না জানি।

প্রথম বই সহজপাঠ

– জয়শ্রী কর

শিশু শেখে অ-আ-ক-খ
সহজ পাঠ বইটি পড়ে
এভাবেই তো ধীরে ধীরে
শিশুর জীবন ওঠে গড়ে।

মা-ঠাকুমার মুখের ছড়া
কেউ কখনো যায় না ভুলে
পাঠশালাতে সেগুলো ফের
পড়ছে শিশু হেলেদুলে।

সকল ছাত্র-ছাত্রী খোলে
রোজ দু’বেলা বইয়ের পাতা
শেখার পরে অনুশীলন
লিখে ভরায় আপন খাতা।

বছর শেষে নতুন নতুন
বইপত্তর আসবে কতো
সেগুলো কি কঠিন হবে
নাকি সহজ আগের মতো?

এমন প্রশ্ন সকল শিশুর
গিয়ে শুধায় মা-বাবাকে
‘আগের মতোই সহজ হবে
আদর করে বোঝায় তাঁকে’।

বাংলা ভাষা গর্ব আমার

– জয়শ্রী কর

বাংলা ভাষা অদ্বিতীয়
সুধামৃত নিসর্গীয়
এটাই আমার মাতৃভাষা
নিত্যসাথী বড়ই প্রিয়।

সম্ভাবনার অজস্র বীজ
এই ভাষাতেই নোবেল প্রাইজ
নিয়ে এলেন রবীন্দ্রনাথ
প্রস্ফুটিত এক সরসিজ।

সভ্যরা সিদ্ধান্ত নিল
ইউনেস্কো জানিয়ে দিল
একুশ হবে ভাষা দিবস
অগ্রভাগে বাংলা ছিল।

বাংলা পড়ি বাংলা বলি
ভাষা মাকে দিই অঞ্জলি
কোথায় পাবো এমন ভাষা
সুরক্ষা দেয় গানের কলি।

বাংলা ভাষা গর্ব আমার
আখরগুলো কী ক্ষুরধার
লৌহকপাট ভাঙতে পারে
করতে পারি এপার-ওপার।


কবি পরিচিতি

জয়শ্রী কর। জন্ম জুন ২, ১৯৫৬তে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কোলাঘাট থানার অন্তর্গত চিমুটিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে। মাতা কমলাবালা, পিতা রামপদ মাইতি।

কোদালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রথম পাঠ। ১৯৭৪ এ ভোগপুর কেনারাম মেমোরিয়াল হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে স্নাতক স্তরে কলা বিভাগে ভর্তি হন। পড়া চলাকালীন ১৯৭৬ এ ডক্টর অজিত কুমারের সঙ্গে শুভ পরিণয়। কৈশোর থেকেই খেলাধুলা, সেলাই ও শরীরচর্চার সঙ্গে তিনি যুক্ত। পরে গিটার, তবলা, যোগ ব্যায়াম এবং কাব্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। নিজে একজন সংগীত শিল্পী ও সুরকারও বটে – বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করে থাকেন।

প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘নীল আকাশের কোলে’ পাঠকমহলে খুবই সমাদৃত। রাজ্য সরকারের তরফে রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরীর ফাউন্ডেশন এবং বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সভার যৌথ উদ্যোগে তার বই কেনা হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গ্রন্থাগারগুলির জন্য। এছাড়া আরো দুটি কাব্যগ্রন্থ – ‘ভোরের বাঁশি’ এবং মায়াডোর’ – প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যে। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার কবিতা রচনার প্রেরণা। প্রতিদিন কবিতা লেখা, কাব্য আলোচনা আর গানবাজনা নিয়ে দিন কাটছে।