শঙ্খ ঘোষ
( প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ-কে বিনম্র শ্রদ্ধা)
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
সাদা ধূতি পাঞ্জাবীতে তোমায় আর দেখতে পাব না,
জোরালো প্রতিবাদী কণ্ঠের তীব্র নিনাদ
খাদ্য দুর্নীতিতে আর গর্জে উঠবে না,
কবিতার সমালোচনায় নতুন কবিদের জন্য
সত্যের মঙ্গল শঙ্খধ্বনি স্তব্দ হয়ে গেল!
নিজের কবিতা পড়ার ভয়ে তোমাকে
আর মঞ্চ ছেড়ে পালাতে হবে না,
সাহিত্য জগৎ থেকে চিরকালের জন্য
কলম তুলে নিয়ে, পালিয়ে গেলে?
শেষ বার শঙ্খধ্বনি দিয়ে যাও কবি- নতুন ঠিকানায়;
সাহিত্য জগৎ জেগে থাক চিরকাল।
শঙ্খ ঘোষকে না পড়লে, রবীন্দ্রনাথ আজও
আমার কাছে সীমা অসীমে ধুম্রজাল ছড়াতো,
পাঠকের অগণিত চোখ নিত্য খুঁজেছিল যাঁকে
শেষ শঙ্খ বাজিয়ে গেলেন, কবি শঙ্খ ঘোষ!
সাহিত্যের জয়গানে মুখোরিত কবি-
জীবনযুদ্ধে হেরে, জয় করেছেন অনুরাগী কাব্যিক হৃদয়।
কালবোশেখি
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
বৈশাখের রোদ জানে শীতের আতিথিয়তার কদর,
তুমি জানো কি তোমার ভেতরের খবর?
এই ভিজেমাটি রোদ, শীতের উষ্ণতা
ভরা বর্ষার দুকুল প্লাবন অথবা ভ্যাপসা গরম
তোমার যা উপাদেয়, অন্যের কাছে হয়তো অনর্থক।
নতুন অতিথির মতো বৈশাখী হাসি
হাসে কতো ফল, ফুলের স্বদেশ, বিদেশ!
তোমার হাসিতে হাসে বাংলাদেশ;
খোঁজ নিয়ে জেনেছো কি, প্রতিবেশীর হাসিতে
কতটা ঈর্ষা মাখা রোদ?
বৈশাখ মাসে নদী-খাল, জলাশয় জলশূন্য
মাঠ ফেটে চৌচির, বোবাকষ্টে যেমন ফাটে বুক,
অথচ সবার সামনে তোমার হাসি মুখ
অনাগত স্বচ্ছন্দে যেমন সাতয়ার নববর্ষ,
আমাদের ভিতর বাহির, স্বজনের আনন্দধারা।
সুদিন বুঝি ডাক দেয় বৈশাখের তপ্ত হাওয়ায়
তবু সজনেডাঁটা শুকায় অবহেলায়,
যৌবনে স্বাদ দিয়েছিল বলেই বৃদ্ধের অনাদর
পৌষে যেমন বোশেখের নেই দরকার,
অথচ, কালবোশেখি জানায় তার তীব্র আর্তনাদ!
রাতের জোনাকি রঙ
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
স্মৃতির দুয়ারে কপাট দিলেই
জীবনে সন্ধ্যা নামে, মুখোমুখি থেকে-
ভোর রাত জেগে, উঠোন স্বপ্ন দ্যাখে ভোরের শিশির
ঘুম ভেঙে ডাক দেয় মাছরাঙার স্বরবিতান।
তুমি আসবে বলে সারারাত বকুল ঝরেছে পথে
গন্ধের নীরবতা তোমাকে খুঁজে পায়নি ভোর,
তপ্ত বাতাস নিশ্বাস ফেলে সবে ছুটি নিলো
সে আর অপেক্ষা করতে পারনি বলে
জাম গাছের নিচেয় শুকনো রোদ্দুরে
কিছু প্রসাদ রেখেগেছে; নিরুদ্দেশ পুজারি,
স্মৃতির রাস্তার ধুলো সরিয়ে আজও
কপাট খোলেনি জমে থাকা স্মৃতির রেণু!
পুষ্প গন্ধমাখা হলেও কাঁটার কথা ভুলি কি করে;
পলাশীর আম্রকানন আবার মুখ খুলবে জেনে
সিঁদুর রাঙা মেঘে ভয় নেই, প্রাঞ্জল মোনালিসা
আবার নতুন করে আঁকবে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি।
খুলে দেখো স্মৃতির কপাট-
শস্যক্ষেত ভরে যাবে রাতের জোনাকি রঙে!
কবি পরিচিতি

মনোজ কান্তি বিশ্বাস। জন্ম ১৯৭৫ সালে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মাইটভাঙ্গা গ্রামে। বটিয়াঘাটা হেড কোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বটিয়াঘাটা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে বাংলা সম্মান সহ এম এ পাস। কর্মজীবনে একজন গবেষক ও স্বনামধন্য অধ্যাপক। গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর দুটি গবেষণার প্রজেক্টের সাথে। বর্তমানে কর্মরত আছেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে মোংলা উপজেলায় অবস্থিত মোংলা সরকারি কলেজ-এ ২০০২ সাল থেকে।
স্কুল জীবন থেকে কবিতা লেখার সূত্রপাত। কলেজে পড়াকালীন সময়ে কবিতা ও প্রবন্ধ রচনায় বেশকিছু পুরস্কার পান তিনি। এসময় বেশকিছু দৈনিক পত্রিকায়ও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর লেখা কবিতার বই ও শিক্ষার্থীদের জন্য বইও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্ত আছেন বিভিন্ন সৃজনশীল লেখা-লেখির সাথে। বেশি পছন্দ কবিতা পড়া ও লেখা। নদী, প্রকৃতি, ঋতুবৈচিত্র ও জীবনবোধের প্রকাশই তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।