বিচিত্র কুমার – কবিতা (ভালোবাসা, প্রেমের অভিষেক, বসন্তের কোকিল তুমি, এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি, প্রথম দেখা)

ভালোবাসা

– বিচিত্র কুমার

ভালোবাসা একটা অনুভূতি
যা মনের সাথে মনের একটা টান,
ভালোবাসা সুখের একটা স্বপ্ন
কিম্বা বুকে লেখা কারো প্রিয় নাম।

ভালোবাসা যেন একটা উড়ন্ত প্রজাপতি
সুদূর থেকে দেয় শুধু হাতছানি,
দিবানিশি তার জন্য শুধু ছটফটানি
কিম্বা হঠাৎ আকাশের বুকে দুফোঁটা পানি।

ভালোবাসা হচ্ছে মনের মধ্যে লুকানো একটা স্বপ্ন
যা একজন লেখকের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির মত,
কেউ লাইফে প্রকাশ করতে পারে কেউবা পারে না
সবাই শুধু অনুভব করতে পারে একান্ত।

প্রেমের অভিষেক

– বিচিত্র কুমার

সেদিন ফাগুনের চিকিমিকি রৌদ্রে হঠাৎ তুমি
চেয়ে চেয়ে আমার হাতটি ধরে বলেছিলে,
ঐ দেখো আকাশের বুকে অপরূপ রংধনু উঠেছে
পিছনে বাগানে রকমারি ফুল ফুটেছে হেসেখেলে।
জানো ওদের না আছে বাবা মার ভয়,
কিম্বা না আছে কলঙ্কের ভয়।

তখন হয়তো বা তোমার কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারিনি
হঠাৎ যেন এক নতুন পৃথিবী কেঁপে উঠেছিলো আজানা ভূমিকম্পে,
আমাদের দুজনার খুব তৃষ্ণা পাচ্ছিল অতৃপ্ত আকাঙক্ষায়
মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম দুজনে পাশাপাশি বসে ক্যাম্পে।
আমাদের মধ্যে কোন দৌরাত্ব ছিলো না,
কিম্বা খুব একটা দূরত্বও ছিলো না।

দুর্বোধ্য ভাবনাগুলো তখনও অন্ধকারে হামাগুড়ি খাচ্ছিল
পাতার ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে গাইছিল বুলবুল,
সুদূর থেকে ভেসে আসছিল রবীন্দ্র সঙ্গীতের মিলনের সুর
ভ্রমর আর প্রজাপতি ফুলের পাপড়ির উপর করছিল ছুলবুল।
আমি তোমার দু পায়ের নূপুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম,
অবশেষে আমি তোমার দুষ্টু চাহনি বুঝতে পেরেছিলাম।

বসন্তের কোকিল তুমি

– বিচিত্র কুমার

তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে
একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে,
তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি
অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে।

সে চলার কোন শেষ সীমা নেই
তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে ,
কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে
একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে।

এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে
তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে,
শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে—

যেদিকে তাকাই —
ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পড়ে
বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে,
তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায়
উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।

এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি

– বিচিত্র কুমার

কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে
ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ,
তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে
হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।

তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে
ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁপাশ শিশির রেখা,
তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি
আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা।

প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের সব চুম্বন
চিকিমিকি রোদ্রে নিয়ে চলে যেত তোমার কাছে নীরবতায়,
তোমার চুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণে পাগল দিবানিশি
ভাসমান মেঘের মতোই উড়ে আসত আমার জানালায়।

প্রকৃতির নিয়মের মতো একদিন তাকেও
তুলে বিক্রি করা হলো কোন মালির দোকানে,
আমার অজান্তে গোপনে গোপনে-
অবশেষে, আমি টের পেলাম একটা দুঃস্বপনে।

রাহু গ্রাসে অন্ধ প্রেম আচ্ছন্ন হয় ঘন কুয়াশায়
স্বার্থহীনভাবে ভালোবেসেও হৃদয় আজ মরুভূমি
কথা ছিল যাবে নাকো আমায় ছেড়ে তুমি
জানি না, কোথায় আজ বন্ধু তুমি?

কখনো কখনো মনের বাসর সাজায়ে কেন
এ জীবন ধুধু মরীচিকা হয়,
কিসের অভাব আছে এই দুনিয়ায়
সত্যিকারের প্রেম কেন রাত্রি গভীরে কাঁদায়।

প্রথম দেখা

– বিচিত্র কুমার

বৈশাখেতে প্রথম দেখা
উতলা ফাগুনে দু’জনার পরিচয়,
নীল আকাশের তারার সাথে রোজ
ফেসবুকেতে মনের কথা হয়।

ফুলের মতো কচিকাঁচা
তার মুখশ্রীর হাসি,
যেন লাল টুকটুক ফুটন্ত গোলাপ
ফুটচ্ছে রাশিরাশি।

তার বিরহে রাখাল বাজাই
ভালোবাসার বাঁশি,
মিটমিট করে জোনাক জ্বলে
গভীর সেই নিশি।

সেই সুরেতেই ফিনিক্স পাখি
মনে মনে রঙিন স্বপ্ন আঁকে,
ঝাঁকেঝাঁকে প্রজাপতি রঙ ছড়ায়
নীল আকাশের বুকে।


কবি পরিচিতি

বিচিত্র কুমার। জন্ম ১৯৯১ সালের ১৫ ডিসেম্বর,বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলাধীন খিহালী পশ্চিম পাড়া গ্রামে। পিতা: বিপুল চন্দ্র কবিরাজ, মাতা: অদিতী রানী কবিরাজ। ২০০৮ সালে আলতাফনগর কে এম এ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি, ২০১০ সালে সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ,বগুড়া থেকে এইচ এস সি এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে (অনার্স) ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন।

এ পর্যন্ত বেশ কিছু যৌথ কাব্যগ্রন্থে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এ সবের মধ্যে ২০১৫ সালে প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ: আমাদের দেশ, এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থ সমূহের মধ্যে : অমর কাব্য গাঁথা, একমুঠো আলো, শত কবির কবিতা, আঁধারে আলোর রেখা, লাঙল, রক্তাক্ত আগস্ট, কাব্যগাঁথা বিজয়, জীবনের যত কাব্য, সূর্যসিঁড়ি তৃতীয় সংকলন, কবিকোষ-২, সেতু(সিঙ্গাপুর), উদীয়মান কবি, কবিকোষ-৩, দীর্ঘশ্বাসের কাব্য ও মায়াবতী উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তার লেখা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক জাতীয় পত্রিকা,সাপ্তাহিক পত্রিকা,অনলাইন পত্রিকা,মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হয়।