পারমিতা ব্যানার্জি – কবিতাগুচ্ছ (সত্যি অথবা…, ছেঁড়া উপন্যাস, নির্বাসিত, অসূর্যম্পশ্যা)

সত্যি অথবা…

– পারমিতা ব্যানার্জি

এই যে তুমি_
এতো কথা বলো _
সুখ দুঃখের কথা.
প্রেমের কথাও…
সত্যি কী সব!

এই যে আমি_
কবিতার প্রেমে ভাসি,
পড়ি এবং লিখিও…
কলম থামে না _
কবিতা হয় কি সব?

এই যে তুমি_
আমার কবিতা পড়ো,
আহ্লাদিত হও,
ছাই পাঁশ হলেও…
সত্যি কি বোঝো সব?

এই যে আমি _
তোমার কথা শুনি…
বিশ্বাস করতে চাই.
মোমের মতো গলে যাই!
সত্যি কী সব!

এই যে তুমি _
প্রেমে গদোগদো হয়ে
বলো, “ভালবাসি”!
কিছু ফাঁক থাকে না কী!
মনে হয় সত্যিই সব!

এই যে আমি _
সব বুঝেও বুঝি না!
ভালবাসি, বিয়ে করি…
সংসার ড্যাং ড্যাং চলে!
সঙের মতো নয় কি?

এই যে তুমি _
শেষ বয়সে এসে,
অবলম্বন খোঁজ করো!
অভিনয়ে বেঁচে থাকো!
সেটাই কী সত্য?

এই যে আমি _
বিছানায় শুয়ে
পূর্ণিমার চাঁদ দেখি।
তুমি দ্যাখো আমারে!
আমি দেখি তোমারে!

সত্য সুন্দর হয়…
থাকে যদি অভিনয়!

ছেঁড়া উপন্যাস

– পারমিতা ব্যানার্জি

চিকচিকে কাগজের কাটা ঘুড়ি
গাছের মগডালে নড়েচড়ে,
বিকেলের হাওয়ায় _
রূপ যে তার এখনও অক্ষয়…
তাকাবো না যত ভাবি
কী আকর্ষণে চোখ চলে যায়?
“ও” কিছু কি বলতে চায়?

শেষ রোদ ছুঁয়ে যায় ওকে __
চোখ ঝলসায় কাগজ চকচকে!
গাছের ডালে জড়িয়ে সুতো
এখনও বুঝি ও উড়তেই চায়!
কে দেবে ওকে ধরাই?
আমি শুধু চেয়ে চেয়ে রই,
ওর রূপের পবিত্রতায়…

দেখতে দুঃখ, লাগে না ভালো!
তবু মন চলে গেলো_
যতক্ষণ না নেভে দিনের আলো!
মনে হলো _
এর চেয়ে ছিঁড়ে যাওয়া ভালো।
যেখানে জটিল জীবন উপন্যাসে
খাটে না কোনো অজুহাত!!

ঘুড়ি লুটতে এসে ক’টা ছেলে
কাটা সুতো ধরে অযথা টানে!
আঃ টানিস কেন?
ডালের খোঁচায় ছড়ে যাবে,
কেটে যাবে ওর পেলব “গা”!
কত ব্যথা পাবে জানিস না?
তোরা কি বুঝবি ওর যন্ত্রণা!

অনেক স্বপ্ন মেখে ও উড়েছিল!
আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন বোধহয়!
সহ্য হলো না জীবনের _
কাটতে চায় না তো কেউই।
তবু কারোকে কারোকে
কাটা ঘুড়ি হয়ে থাকতে হয়…
জটিল জীবন জিজ্ঞাসায়!!

নির্বাসিত

– পারমিতা ব্যানার্জি

আমার ভাঙা ঘরের
আনাচে কানাচে
আজ ঊর্ননাভের ব্যস্ততা!
ঘন জালে জীবন ধরার ফিকির!
আর চৌকাঠে আমার বার্ধক্য!

শূন্য হাতিশাল শূন্য ঘোড়াশাল
ঢাল তরবারি আর ধূলো মলিন
শিরস্ত্রাণ লুটিয়ে…
ছুঁয়ে থাকে আমার বার্ধক্য!

ক্ষয়ে যাওয়া ইঁটের
অর্ধচন্দ্রাকৃতি খিলান…
ভাঙা ঝাড়বাতি আর
জলসাঘরের গুমোট ধূলো গন্ধে
চৌকাঠে পড়ে আমার বার্ধক্য!

মেহগিনি কাঠের পালঙ্কে
মায়াবী আলো স্বপ্ন আর
অনুভবে আতর গন্ধে চৌকাঠে
মুখ থুবড়ে আমার বার্ধক্য!

ভাঙাচোরা সিংহদূয়ার আর
খিড়কির এই পৃথিবী..
সাদা লক্কা পায়রা হারিয়ে
ঘুলঘুলিত গোলা পায়রা…
আর চৌকাঠে আমার বার্ধক্য!

অসূর্যম্পশ্যা

– পারমিতা ব্যানার্জি

শব্দরা __
পেঁজা মেঘের মত ছিঁড়ে যায়,
দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে
আবদ্ধ হতে চায় বৃদ্ধ সূর্যের
বলিরেখায়…
টুকরো মেঘের আড়ালে
আঠার মতো জম্পেশ হয়েই
জড়িয়ে থাকে শূন্যতায়!
ঘন নিঃশ্বাসের গাঢ় প্রলেপ
দমবন্ধ আদ্রতা খান খান
করতে অক্ষম!

শব্দরা __
স্থির হয়ে যায় বিচ্ছিন্ন ভাবে
হিম কঠিন আস্তরনে!
সূর্যকে স্পর্শ করে না!


কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।

ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।