আজ বসন্ত
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
চারপাশে বাগানের গাছ ছায়া ছায়া
একটা ভিজে লাল শাড়ি
দোল খাচ্ছে হাওয়ায়,
তার মধ্যে ঢুকে পড়েছে সূর্য —
উদয়ের স্বপ্নে রাঙা।
একটা সবুজ রঙের গঙ্গাফড়িং
ফুলে ফুলে কী কথা কইছে কে জানে!
গাছের আড়ালে
নাম – না -জানা পাখি ডেকেই চলেছে —
স্বরটা ভারি মিষ্টি,
এক একজন মানুষের স্বরেও
এমনি খুশি মাখানো থাকে।
ঘরের গাছে মেরুন রঙের ফুল ফুটেছে
তাকেও একটা নাম দিতে হবে।
উধাও পাতা, গাছের চামড়া ফাটিয়ে
ফুলগুলো আকাশের দিকে
পাপড়ি মেলেছে।
আগুন দেবে বলে
শুকনো ডালপালা জড়ো করছে কেউ —
এসবের দিকে আমি বাড়িয়ে দিয়েছি
আমার ভালবাসার হাত —
আজ নির্ঘাত বসন্ত।
বাবার হাত
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
হাঁটি হাঁটি পা পা –চলার সময়
হাত ধরে থাকত বাবা।
পড়ে গেলে তুলে ধরত বাবার হাত,
বড় বয়সেও এমনি কতবার পদস্খলন
পড়া আর ওঠা, ওঠা আর পড়া
বাবার হাত সর্বক্ষণ তৈরি থাকত
তুলে ধরার জন্য।
আজ যখন পা ভেঙে বসে আছে সে —
বাবা নেই
তখন মনে পড়ল বাবার হাতে তৈরি
লাঠির কথা —
নানান গাছের ডাল দিয়ে তৈরি,
কোনটা গাঁটে গাঁটে শক্তপোক্ত
কোনটা সৌখিন ছড়ি,
ভাবল এবার সেই লাঠি হাতেই
ফের উঠে দাঁড়াবে সে,
সেটাই হবে তার বাবার হাত।
বাবার হাত ধরবার আগেই
ঈশ্বর তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন।
পোড়া কাঠ
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
একটা আগুনে পোড়া কাঠ
তার সুখদুঃখের কথা বলতে বলতে
কখন চোখের মধ্যে ঘনিয়ে উঠল মেঘ
আর তার থেকে কয়েক ফোঁটা জল
গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।
সেই যন্ত্রণা ভুলতেই
নিজের মধ্যে যেটুকু প্রাণ ছিল
তাইতেই ধরিয়ে দিল আগুন।
একটু আগে
সেই পোড়া কাঠকেই
আগুনে পোড়াবে বলে
কাঁধে করে বয়ে নিয়ে গেল শ্মশানে।
এ যেন সেই
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
বেঁচে থাকলে সেও হত ঠিক এই বয়সী
লম্বা গড়ন ধবধবে রঙ যুবক পুরুষ,
চাকরি করত হয়ত দূরে ভিন প্রদেশে
বউ ছেলেমেয়ে ঘর সংসার সবই হত।
ছোট্ট ছেলে পাঁচ বছরে চলেই গেল,
করুণ চোখের চাউনি কি তার ভুলতে পারি?
দেহের মধ্যে অসুখ ছিল দুরারোগ্য
তখনও তার তেমন করে বোল ফোটে নি।
ধুতির সাজে যে ছেলেটি সামনে দাঁড়ায়
আমায় দেখে প্রশ্ন করে — কেমন আছ?
আমিও তাকে জিগেস করি — আছিস ভাল?
আমার চোখে এ যেন সেই, এ যেন সেই!
বিগত উৎসব
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
উৎসবে যাবার কথা ছিল।
গোধূলি আলোয়
কী এক গোপন লাজে তোমাকে রাঙাবে,
সেইদিন তোমাকে ঘিরেই
সব সাজসজ্জা, ফুলের সৌরভ
দৃষ্টির মুগ্ধ আলোকে
চকিত প্রেমের আলাপন।
উৎসবে মিলতে পারি নি
নষ্ট ফুল মিশেছে ধুলোয়,
কী কথা তোমার ছিল
কী কথা আমার —
ওষ্ঠ আর অধরেই স্তব্ধ হয়ে আছে।
তুমি তো উৎসবে ছিলে
বিবর্ণ হবে না সেই রামধনু রঙ,
অলক্ষ্যে আমিও ছিলাম
যদিও আমার কোন ভূমিকা ছিল না।
কবি পরিচিতি

দেবকুমার মুখোপাধ্যায়। পশ্চিম বাংলা, ভারত। জন্ম ১৯৫০। স্নাতক। বর্তমানে বসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির শুরু। কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প, অণু গল্প, নিবন্ধ লিখে থাকেন। বড়দের জন্য, ছোটদের জন্যও। কিছু কিছু অনুবাদও করেছেন, ইংরাজি থেকে বাংলায় — কবিতার, গল্পের।
বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে — আসলে আলোর জন্যে, এখানে তরঙ্গ এখানে জীবন, জলের উপমা (এককভাবে), আর যাঁরা কবিতা পড়েন না (দুজনে মিলে), ছড়ার মজা খাস্তা গজা ও চার মাথার মোড় (চারজনে মিলে)।