জামানা
– অসীম পোদ্দার
বাজছে সানাই নাচছে কানাই কলির বামুন মেটে সাপ
আইনকানুন ভেস্তে দিয়ে মামুরে সব ডাকছে বাপ।
রাতে বেলা চলছে খেলা আলি বাবা চল্লিশ চোর
চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে, বলছে সবাই
ঠিকই আছে মাতাল বাচাল গাঁজাখোর।
ধেড়ে ইঁদুর করছে ফতুর ধানের গোলা
পর্দা আড়াল হুলো বেড়াল জপছে বসে তুলসী মালা।
শেষ জামানা দিচ্ছে হানা ভোমর চাকে মারছে ঢিল
চৈত্রমাসে শুকনো বিলে ছো মারছে কানা চিল।
আশায় আশায় কোন ভরসায় দিচ্ছে বোকা বালির বাঁধ
সামনে পিছে উপর নিচে পাতা যে তার মরণ ফাঁদ।
ধূর্ত কুকুর লুটছে পুকুর করছে দখল বাড়িঘর
শালিকগণে পক্ষ টেনে নিচ্ছে তুলে দুধের সর।
সমাজ-নমাজ যতই থাকুক হচ্ছে সীতা গন্ডি পার
গভীর রাতে আসছে এয়ার, তেপান্তরে যাচ্ছে ছুটে করছে পেয়ার।
বনের মধু খাচ্ছে জুজু বাগান কেটে পরিস্কার
বাড়ছে ভুড়ি লুটছে কড়ি বনের মালিক ফরেষ্টার।
ঝটকা ছাটি কোটি কোটি মরছে বেঁধে নেট জালে
বাড়ছে অসুখ বাড়ছে বিসুক লাগছে মড়ক খালেবিলে।
পক্ষদুটো খুঁজছে ফুটো ঠুকছে মামলা মামলাবাজ
সকাল-বিকাল এদিক-ওদিক ঘুরছে কত ধান্দাবাজ।
দেখছে টিভি গুনছে বিবি হাজি সাহেব
কাজের মেয়ে টোপলা নিয়ে দিন দুপরে হচ্ছে গায়েব।
শেষ জামানা দিচ্ছে হানা সরষের ঘাড়ে চড়ছে ভূত
বাপের বুকে ছুরি মেরে হচ্ছে উধাও আপন পুত।
নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে গুরু-শিষ্যে জমছে লড়াই
ধুতরা ফুলে উড়ছে মৌ কাকের গোস্ত খাচ্ছে চড়াই।
সুতায় নাচে সোলার পুতুল জীবনটা যে শুকনো মরু
চটাং-পটাং নাতিপুতি ঠাকুরদাদা বুড়ো গরু।
পয়সা হলে যাচ্ছে খুলে জেলের তালা
হাজত ফেরত ফটাক নেতা খাচ্ছে জুতা পাচ্ছে কত ফুলের মালা।
উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে আসামি তুই ফিফটি ফোর
আসল খুনি সাজছে মুনি হচ্ছে চালান মুরগী চোর।
দিনের বেলা হাজী সাহেব রাতের বেলা দেখা নাই
কালো টাকার পাহাড় করে পুষছে কেহ দুধের গাই।
ঝগড়াঝাটি ফাটাফাটি হচ্ছে দেদার বাপে-পুতে
প্রেমে পড়ে ব্যর্থ হয়ে সাজছে পাগল পাচ্ছে ভূতে।
রায়ের কপি ফাঁকিজুকি পড়ছে বসে ব্যর্থ উকিল
কাকের চোখে ধুলো দিয়ে পাড়ছে ডিম কালো-কোকিল।
হাবুডুবু খাচ্ছে কেহ তুলছে কেহ তাসের ঘর
মারামারি ফাটাফাটি হচ্ছে দখল খালের চর।
বেকুব রাজা খাটছে সাজা করছে বড়ে কিস্তিমাত
টেক্কা মেরে গোলাম ধরে সাহেব বিবির কাটছে রাত।
ভূতের সাজা দিচ্ছে ওঝা ফ্যাল-ফ্যালিয়ে দেখছে বোকা
ফিকির ফন্দি বস্তা বন্দি ফেলছে বেদে দাঁতের পোকা।
হিসাব ছাড়া যাত্রি ভাড়া যমের শিবির মেঘনা নদী
কান্নাকাটি ফেরিঘাটে চালক বসে খাচ্ছে দধি।
বাসের চাকা ঘুরছে ফাঁকা করছে গাড়ী ব্রেক ফেল
দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে চলছে ছুটে তুফান মেল।
দফায় দফায় লোড শেডিং বন্ধ চাকা নিভছে বাতি
লক্ষ টাকা খরচ করে বাহাদুর সাহেব পুষছে হাতি।
নটার গাড়ী কটায় ছাড়ে টিকিট মাস্টার জানেন না
বাজার দরে ভাঙছে মিটার মন্ত্রী তাহা মানেন না।
ক্ষুদের হাড়ি কাড়াকাড়ি চলছে দেদার বৌ-শ্বাশুড়ী
নেতায় নেতায় ফাটাফাটি জ্বলছে আগুন পথের গাড়ী।
খুপরি ঘরে থাকে সীতা কাগজ কুড়ায় লব-কুশ
রামচন্দ্র জননেতা বোতল টেনে হারাচ্ছেন হুশ।
পোলাপানে বাজার থেকে হীরা ভেবে কিনছে কাঁচ
মুরুব্বিরা দিনের বেলায় দেখছে চেয়ে ভূতের নাচ।
দৃশ্যটা যে বড়ই করূণ ছাড়ছে হনু সকল আশা
অশোক বনে রাবন বসে সীতার সাথে খেলছে পাশা।
পাঠ্যপুস্তক দলীয় করণ ঘোষের গোয়াল প্রাইমারী
কলেজগুলো খাসের ডাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয় ভূতের বাড়ি।
হরি হরি বলুন সবাই যার যা আশা পূর্ণ হোক
গোঁফের গোড়ায় হাসছে চোরা সাধুবাবা ভালো লোক।
বাঞ্ছারামের কেস
– অসীম পোদ্দার
কেসটা তোমার জটিল বাঞ্ছারাম
চিটা বোঝাই বস্তা তবে ইঁদুর ঘুরছে ক্যান?
দেশটা নাকি ফুটো ঝুড়ি তবে সাহেব ঘুরছে ক্যান?
গ্রামটা নাকি দেশের মেরু দেশের জিয়ন কাঠি
নাকের ডগায় মরছে কৃষক পাচ্ছে নাতো মাটি।
দাম বেড়েছে চালে ডালে মদের বোতল খাক
ময়না ময়ূর পালিয়ে গেছে বাড়ছে যে দাঁড়কাক।
দেশটা নাকি সোনার বাংলা সকল দেশের সেরা
পথে ঘাটে বাসন নিয়ে ঘুরছে এরা কারা?
মাছে-ভাতে বাঙালি সব জুটছে নাকো ডাল
কুমির আনার জন্য কেহ কাটছে কত খাল।
দুধ ফুরালো মাখন গেলো ঘিয়ের বাসা গোঁফে
বাটি চালান দিয়েও ইলিশ পাচ্ছে নাকো লোকে
টিয়ে গেলো ময়না গেলো শকুন ছাড়লো দেশ
গলায় দড়ি দিয়ে মরলো হাজার নদীর দেশ।
চলমান
– অসীম পোদ্দার
জনতা চুপচাপ রাত্রি দুপুর
জননেতা চুরি করে সরকারি পুকুর।
লেজ খায় ঠ্যাংগাড়েরা পেট পায় আমলা
রক্তটা বটি খায় তেল খায় গামলা
পিঁপড়েরা আঁশ খায় গেন্নিতে আন্ডা
বিড়ালেরা চুপচাপ কাঁটা খেলে ডান্ডা।
কাক করে কা-কা চিলে খায় নাড়ি
দাড়াটা হিম হয়ে যায় শ্বশুর বাড়ি।
চোখ দুটো ফুটো করে নেতা খায় মুন্ডি
তামাশার খেলা দেখে মন্দিরে চন্ডী।
কবি পরিচিতি

অসীম পোদ্দার। জন্ম জানুয়ারি ৯, ১৯৫৭ সাল। পিতা স্বর্গীয় নির্মল পোদ্দার, মাতা স্বর্গীয় কমলা পোদ্দার। স্থায়ী বাসস্থান – শেলাবুনিয়া, মোংলা পোর্ট পৌরসভা, মোংলা উপজেলা, বাগেরহাট।
মোংলার উপজেলার শেলাবুনিয়া এলাকায় গ্রাম-নদী-খাল-বিল আর সুন্দরবনের শীতল-সবুজ পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা। পড়াশুনা সেন্ট পলস হাই স্কুলে এবং সেখানে থেকেই এস এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সমকালীন সময়ে মোংলা অঞ্চলে যারা সাহিত্য ও কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। সহজ, সরল ও সাধারণ জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী কবির অন্তর চেতনাই তাঁর কাব্য প্রেরণা। ১৯৭১ সাল থেকে গল্প ও কবিতা লেখার শুরু। এ পর্যন্ত দুটি যৌথ কাব্যগ্রন্থসহ খুলনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক হৃদয় বাংলা পত্রিকা ও মোংলা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মেছেরশাহ পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রিকায় বহু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। অপ্রকাশিত রয়েছে কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত লিখে থাকলেও এবং ইচ্ছা থাকা সত্বেও আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে এখনো পর্যন্ত কোন বই প্রকাশ সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তবে আশা আছে ভবিষতে সময়-সূযোগমত কবিতার বই প্রকাশের। কবির কবিতা সম্পর্কে মতামত জানানোর অনুরোধ রইল।