নরেশ বৈদ্য – কবিতা (ভাবনার পৃথিবী, এতটুকুও মিথ্যে নয়, সাদা পাতার নৌকো বেয়ে, মুখোশের অভিসার, আর কিছু চাইনা)

ভাবনার পৃথিবী

– নরেশ বৈদ্য

প্রথম পর্বের সমাপ্তি তো ঘটে গেছে সেই কবে
তবুও শুকতারাটা মনের দুয়ারে আজো রয়েছে জেগে
সেকারণেই হয়তো ‘গান ভালো বেসে গান’
এ মধুলগন সুর হয়ে বাজে মনের গভীরে
কতবার ধরা দিতে চেয়ে এসেছে উড়ে ফুড়ুৎ শব্দের স্বপ্ন নীড়ে!

যদিও অনেক অনেক দিনের পরে শিশিরস্নাত রাঙা গোলাপের সাড়া মেলে
তবুও, কোথাও যেন সেই উজান ঢেউয়ের দোলা রয়ে গেলো পাতার আড়ালে।

এটাকেই গোধূলি পর্বের সূচনা ধরে পথ চলা হলো শুরু
কিন্তু হায় এখানেও দীপ্ত ক্যালকুলাসের হলো আবির্ভাব!
ফসলের ক্ষেত জুড়ে দমকা বাতাস, সর্ষে ফুলের ধ্রুপদী উল্লাস!
ভাবতে না ভাবতেই ঘন কৃষ্ণকায় মেঘের বনেদি প্রাচুর্যে নতুন উপন্যাস,
চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঘন কুয়াশার অরাজক চরাচর
টপ টপ খুলে গেলো অন্তঃঝরার সহস্র রেস্তোরা,সুনামীর গভীর তান্ডব!

আর দেরি নয় এলো সেই মহাসন্ধিক্ষণ, সংকল্পের পথে পা বাড়িয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা
সহজ কবির নতুন বোধোদয়ে কবিতার চারা বপন,
আমায় হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে চলে ভাবনার পৃথিবী।

এতটুকুও মিথ্যে নয়

– নরেশ বৈদ্য

রঙের সুরসুড়ি বলো, কিংবা রক্তের সুপরিকল্পিত ছাপ
কাছে এসে ধরা দেওয়া—
আবারো ফিরে যাওয়া এ কেমন ডাক?
হাঁক পেড়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে কাছে–
হাতের মুঠোয় পুরে, দিয়ে ছিলে চাপ
এর পর বলে দিলে বাকি কথা তোলা থাক!

ঐ যে আগুন হাওয়া তীর ছুঁয়ে বয়ে গেলো বসন্ত সমীরে
সবটাই ছিলো কি সুনামির সুড়ঙ্গ ভরা ফাঁফা আওয়াজ?
কুড়িয়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার–
চকিত রেওয়াজের কথা বেমালুম ভুলে গেলে!
জেনে রেখো আকাশের শুক তারাটি মিথ্যে নয়
আজও তা সময় মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলে।

সাদা পাতার নৌকো বেয়ে

– নরেশ বৈদ্য

জোৎস্না ভেজা রাতের খোঁজে
অনেকটা পথ পার যে হলো
হাতের পরে হাতটি রেখে,
সহজিয়া আপন সুরে মিললো কি-
রঙিন রোদের হিসাব গুলো?

এই যে এতো, এতো গল্প বলা
পাগল হওয়ার ভাসানো ভেলা!
ফিরতি পথের বাঁকের পরে
অবাক স্রোতে ভেসে চলে
লাভ কি হলো বলো?

হয়তো আবার এসব দেখে
জাগতে পারে পাথর বাটি
মন শুন্য খাঁচায় পুরে–
যায় কি রাখা বনের পাখি?
নাই বা হলো যাওয়া-আসা
মহুয়া ফুলের গন্ধে ভাসা
থাক না পড়ে প্রেম সাগরে
স্মৃতিমুখর আখর মাটি।

মুখোশের অভিসার

– নরেশ বৈদ্য

প্রতিটি কথার আড়ালে আজ লুকোচুরি খেলা
ভাবতে গেলেই কঁকিয়ে উঠি,
চারিদিকে কেনো এতো-এতো ভাঙচুর ?
ঐ যে দিগন্ত রেখায় মেঘেদের দল ঘুরে বেড়ায়-
সেটা যে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মকে মেনে
তাই বলে রূপান্তরকামী কলুষিত কালচে বাতাস মানব বন্ধনে!
আজ যে বলে গেলো তিন সত্যি করে
সেখানেই কালের ক্ষত, সুকৌশলী কাঁটার আঁচড়–
স্থান করে নিলো ছোঁয়াচে হিঁচকির এলোমেলো পচা হয়রানি গন্ধের ঝাঁঝালো নাকাল!

আগুনের তাপ, মাত্রা ছাড়িয়ে ডেকে আনে কতিপয় শীতঘুম
তারপর ফিনিক্স পাখির মতো কোথায় যে যায় উড়ে?
উর্বর চরে ক্ষয় প্রাপ্তির আগাছায় মুখ লুকায় বর্ণের সুঘ্রাণ
চেনা মনের অলিন্দে ঘুরে বেড়ায় ব্যস্ত ঘুঘুর চাষ!
ধ্রুপদী জ্যোৎস্না সেথা কেনো আর আসে না ফিরে?
আলপথে জাঁকিয়ে বসে ঘনঘোর কুয়াশা মুখোশের অভিসার!

আর কিছু চাইনা

– নরেশ বৈদ্য

যেই না বিষ ছড়িয়ে গেলো
ঘরের ছেলেটা, ঘরের মেয়েটা পরিযায়ী হলো
অথচ, এই তো সেদিন ধুমধাম সহকারে–
আগমনের সে কী ভীষণ আয়োজনের তুফানী চুমুক ছিলো!

আবারো সেই ধারাবাহিক আশায় বুক বেঁধে আলোর বিচ্ছুরণ
কিন্তু যে তকমা লাগানো হলো তার কি হবে?
এখন তো কর্মে মন্বন্তর, ছিয়াত্তরের নির্মম শেয়াল কাঁটার আঁচড় – বেহাল অবস্থা
তবুও একশো দিনের কাজে প্রথম সারির বিজ্ঞাপনে রোল মডেল!

তবুও চাই একুশের আগমনী স্পর্শে কেটে যাক তীব্র বিষের ঝাঁঝালো জ্বালা
ভুবন ডাঙ্গার বুক জুড়ে ঢেউ খেলে যাক চির নতুনের গানে
মুছে যাক সকল অন্ধকার নব চেতনার উন্মেষে,বেজে উঠুক শঙ্খ নতুন সূর্যের নিয়ন আলোয়।


কবি পরিচিতি

নরেশ বৈদ্য। জন্ম ২৭ শে অক্টোবর ১৯৭৯, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। পিতা: স্বর্গীয় জগন্নাথ বৈদ্য,মাতা: মনোরোমা বৈদ্য। পাঁচ সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কনিষ্ঠতম। বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার- সোনারপুর থানার অন্তর্গত বিবেকানন্দ নগরে- কলকাতা-৭০০১৫০-স্থায়ী বাসিন্দা। পড়াশোনা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এম কম)।

কবির কলমে কবিতা জেগে ওঠে স্বতঃউৎসারিত অন্তরপ্রেরণা থেকে – জীবনের বোধের অন্তর্নিহিত চেতনায় ভাস্বর হয়ে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: জীবনের রং তুলি, প্রেমের ঝর্ণাধারা, খেয়ালী আলোর ভেলা, যৌথ কাব্য সংকলন-৬-এ ছক্কা, দোহার, আকাশ গঙ্গা ও মোহনা।