সাজ্জাদ হোসেন – কবিতাগুচ্ছ (কবে আসবে স্বাধীনতা, এমন যদি ঘটতো, অন্তঃদর্পণ, যখন আমি থাকবো না, দেবী যখন ধর্ষিতা)

কবে আসবে স্বাধীনতা

– সাজ্জাদ হোসেন

আমার স্বাধীনতা মানেই পরাধীনতা,
আমার স্বাধীনতা মানেই দীনতা-
আমার স্বাধীনতা মানেই- কার্পণ্যতা আর সীমাবদ্ধতা।
শিশু কালে এটা করো না, ওটা বলো না-
স্কুলে বেত্রাঘাত কানমলা- এভাবে শিক্ষাপর্ব শেষ।
এরপর, গো জীবন, দাপ্তরিক বন্দিত্বে সন্ধি।
মুখে তালা, কানকালা, হাতপায়ে রশি বাঁধা,
অফিসে গাঁদা গাঁদা নথি খাতা- সব কিছু মাপা।
উহু মুখে নয়, কাগজ কলমে অফিসের কথা,
এইতো স্বর্ণালী জীবন, চওড়া কপালে লেখা।
যত বাঁধা, সি এল, ই এল, স্টেশন লিভ কত কি-
আহা! যাতনায় মরি মরি-
লেখাপড়া শেষে কেরাণি- এইতো বাহাদুরী।
নথি খাতার জটিল সমীকরণ-
সামান্য ভুলে জবাবদিহিতায় মরণ।
বসের নানা ফরমায়েশী আর
পদোন্নতির মালিশে চলে পাল্লা, রক্ষে আল্লা।
বাসা আর অফিস- অফিস আর বাসা-
ম্যারাথন দৌড়ে জীবন ছাতু, এইতো জীবন খাসা।
বাসায় সন্দেহবাতিক নবাবজাদীর ভাংচুর- পাঁচহাতি ফর্দে-
আর যতসব গায়েবী প্রশ্নের জবাবে জীবন কাবাব।
দিনে অফিস রাতে বউ, এই না কি সংসার মৌ?
আখের ছোঁবড়ার মত নিঃশেষ শক্তি-
অবসরের নামে অফিস আমায় দিলো একদিন মুক্তি।
ম্যারাথন দৌড়ের অবসান-
জীবন জীর্ণ, অবসর জীবন চিত্র একদম ভিন্ন।
সচল মানুষ অচল সর্বহারা-
নিরুপায় দিশেহারা- চোখদুটি ধু ধু সাহারা।
এখন বৃদ্ধাশ্রম- না হয় ছেলে মেয়ের বদান্যতা,
তাহলে কবে আসবে আমার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা?

এমন যদি ঘটতো

– সাজ্জাদ হোসেন

এমন যদি ঘটতো কিছু
জেগে দেখি যৌবন মিছু,
সবে আমি ছ’মাসের শিশু
খেলছি শুয়ে দিয়ে ছিচু।

এমন যদি ঘটতো কিছুৃ
স্ত্রী সন্তান নেই পিছু,
মায়ের কোলে একলা শিশু
পাওয়া ছাড়া সবই মিছু।

এমন যদি ঘটতো কিছু
খেলছি লুডু- খাচ্ছি ফিডু,
দুঃখ ব্যথা সবই মিছু
কান্না দিলে পাই সব কিছু।

এমন যদি ঘটতো-
দাদার ঘাড়ে চড়ে আমি যাচ্ছি নানু বাড়ি,
নানু আমায় দিচ্ছে খেতে পিঠা হাঁড়ি হাঁড়ি।
খালামণির কোলে চড়ে আনছি কিনে গাড়ী,
সেই গাড়ীতে হরেক কিছু নিয়ে ফিরছি বাড়ি।

অন্তঃদর্পণ

– সাজ্জাদ হোসেন

বিধাতা না দিলে রূপ
কি হবে আয়নায় দেখে মুখ?
জনম ভরে পাবে শুধু দুখ।

অন্তদর্পণে দেখ সদা মুখ
স্বচ্ছ কর অন্তর বাহির রূপ,
দোজাহানে পাবে পরম সুখ।

নিন্দুক দেবে কলঙ্ক তিরস্কার
তবুও দেহ মন রাখো পরিস্কার,
বিধাতা দিবে মহাপুরস্কার।

রং মহলে ভাবের খোকা
এড়িয়ে চল ইবলিসে ধোঁকা,
সুপথে চলো-সহায় হবে খোদা।

যখন আমি থাকবো না

– সাজ্জাদ হোসেন

যখন আমি থাকবো না এ ভবে-
হৃদয় মাঝের স্বপ্নগুলো কর্পুর হয়ে যাবে,
ফুলদানির ওই শখের গোলাপ ছাগলে মুড়ে খাবে।
যখন আমি থাকবো না এ ভবে-
কষ্টগুলো ব্যুমেরাং হয়ে করবে তোমার নাশ,
সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলে হবে জিন্দা লাশ।
যখন আমি থাকবো না এ ভবে-
অনুতাপের দহন তোমায় কুরেকুরে খাবে,
বিভীষিকার আঁধারে থাকবে না কেউ পাশে।
যখন আমি থাকবো না এ ভবে-
তোমার দেয়া কষ্টে তুমি ভাসবে নয়ন তারায়,
দূর আকাশের লক্ষ তারায় খুঁজবে তখন আমায়।
যখন আমি থাকবো না এ ভবে-
পাগলপারা মনটা তোমার হবে সেদিন উদাস,
পাথর হৃদয় হবে তোমার ভালোবাসার আকাশ।
যখন আমি থাকবো না এ ভবে-
রবি-শশী-গ্রহ-তারা নিঠুর হবে সবে,
পাহাড়-নদী-ফুল-পাখিরা থাকবে না কেউ পাশে।
যখন আমি থাকবো না এ ভবে-
নাবালিকার অন্তর হবে টইটম্বুর মধু,
জ্ঞান গরিমায় পুষ্ট হয়ে- সাজবে আবার বধু।

দেবী যখন ধর্ষিতা

– সাজ্জাদ হোসেন

যে মায়ের গর্ভে নূরের পয়দা-
যে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত,
যাঁকে স্বর্গের দেবী বলে পূজা দিই
তিনি ধর্ষিতা হলে ধর্ম বলে থাকে কি?
যাঁকে নিয়ে ভালোবেসে গল্প-কবিতা লেখা
স্বযতনে হৃদয়ে রঙিন ছবি আঁকা,
তাঁর জীবন যদি হয় মরুময় ফাঁকা
তবে মানুষের জীবনে কি নিয়ে বাঁচা?
যুগে যুগে নারী মহিয়সী-প্রেমিকা
লাইলী-পার্বতী-শিরি-শকুন্তলা,
তাঁরাই ধর্ষিতা হলে, কে হবে মহাকাব্যিক নায়িকা?
কে বা হবে লিওনার্দোর অমর মোনালিসা?
জগতে ছায়া-মায়া-কালজয়ী নারী,
জান্নাত-জননী-দেবী-হুরপরী,
কলঙ্কের নকরাঘাতে তারাই যদি পশুর ফূর্তি-
তাহলে যমুনার জলে বিলীন হবে তাজের মত মহাকীর্তি।
স্বর্গের ফুল শিশুরা কলঙ্কিত, নরপশু হায়েনার কারণে।
তাহলে অর্ঘ্য কার হাতে দেবো- কোন দেবীর চরণে?
স্বপ্নের বাসরে- কোন সতীকে বা ঘরে তুলব বধুবরণে?


কবি পরিচিতি

সাজ্জাদ হোসেন। জন্ম যশোর জেলার মণিরামপুর থানার শ্যামকুড় গ্রামের ‘বিশ্বাস বাড়ি’ ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল। পিতা – মরহুম গোলাম বিশ্বাস, মাতা – মরহুমা ফুলজান বিবি।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা – শ্যামকুড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যশোর সরকারি বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়, খুলনা টেকনিক্যাল এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। কর্মক্ষেত্র – প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়- বেপজা ঢাকা, বর্তমানে মোংলা ইপিজেড-এ।

‘শ্যামকুড় উত্তরণ সংঘ নাট্যগোষ্ঠির’ মঞ্চ নাটকে ১৯৮০ সালে শিশু শিল্পী হিসাবে অভিষেক। আর তখন থেকে নাটক দিয়েই তাঁর লিখনের শুরু। নাটকের পাশাপাশি গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও গান লেখেন। ২০১৫ সাল থেকে মোংলার মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির সংস্পর্শে তিনি শতাধিক বই লেখেন। প্রকাশিত বই – পাথরের কান্না, নষ্ট গোলাপ, স্মৃতির বালুচর, হীরক তরবারি, দ্যুলোকের ডাক, কবিতার ফেরিওয়ালা, শিশিরের ধ্বনি, কাচের জগত, কষ্টের নোনা জল, চোখের জলে ছল, সভ্যতার বস্ত্রহরণ, হিরুমিয়ার গপ্পো, ঝড়ের রাতে দেখা, ও খেলা ঘরের কান্না।