মোংলা পৌরসভার আয়োজনে বইমেলাঃ ১৯-২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ (স্লাইড শো)

মোংলা পৌরসভার আয়োজনে বইমেলাঃ ১৯-২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২১
প্রতিবেদন – অনিমেষ বিশ্বাস

১৯, ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি এই তিন দিনব্যাপী, বাংলা ভাষা ও ভাষা শহীদের স্মরণে যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত, শোকের আবহে এবং নতুন প্রত্যয়ে মোংলাতে এবারেও পালিত হল অমর একুশে বইমেলা। এটি ছিলো মোংলা পৌরসভায় বইমেলার ৫ম বর্ষ (২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে মোংলা পোর্ট পৌরসভার বই মেলা।) করোনা মহামারীর কারণে প্রায় স্তিমিত পরিবেশে, উপযুক্ত সতর্কতা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে মেলায় জন সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। তিন দিন ব্যাপী নানাবিধ অনুষ্ঠানসূচী ও উপস্থিত পাঠক ও দর্শকদের কলতানে মুখর ছিল মোংলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনটি।

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাবা হাবিবুন নাহার মোংলাপোর্ট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। উপস্থিত ছিলেন ইউএনও কমলেশ মজুমদার, পৌরসভার মেয়র শেখ আব্দুর রহমান ও কাউন্সিলরগন, উপজেলা চেয়ারম্যান, সহকারী কমিশার ভূমি, মোংলা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ, সাংবাদিক, কবি লেখক সহ বহু গন্যমান্য ব্যক্তি ও দর্শনার্থী। মোড়ক উন্মোচন শেষে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় সহ সকলে বইমেলার বিভিন্ন বুক স্টল পরিদর্শন করেন ও গ্রুপ ছবি তোলেন।

এবারের মেলায় ১২ টি বইয়ের স্টল, বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি ছিল বেশ কয়েকটি ফার্স্টফুডের দোকান। মেলাতে উপস্থিত স্টল সমূহের মধ্যে ছিল – বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা), মোংলা সাহিত্য পরিষদ, গাঙচিল সাহিত্য পরিষদ, তিলোত্তমা প্রকাশনী, আব্দুল হাই ব্লাড ফাউন্ডেশন, বাঁধন প্রকাশনী, জসিম বুক ডিপো, অনিন্দ্য প্রকাশ, ছাত্রবন্ধু প্রকাশনী ও মোহাম্মদীয়া পুস্তাকালয়। করোনার জন্য নতুন বই প্রকাশ না পেলেও তথ্য মতে

  • গাঙচিল প্রকাশনীর ব্যানারে প্রকাশিত হয়েছে চারটি নতুন বই (১) সোনালি ভোরের শুভ্র ঘ্রাণ – আসমা আক্তার কাজল (কবিতা)-৪ ফর্মা, (২) অঞ্জলী – ডা. নিখিল চন্দ্র রায় (কবিতা) – ৪ ফর্মা, (৩) হিরু মিয়ার গপ্প – সাজ্জাদ হোসেন (গল্প) – ৪ ফর্মা, (৪) ঝড়ের রাতে দেখা – সাজ্জাদ হোসেন (উপন্যাস) – ৫ ফর্মা
  • অনন্য প্রকাশনী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক মনোজ বিশ্বাসের “বুনন” গ্রন্থটি। এই বইমেলায় বইটির মোড়ক উন্মোচিত হয় এবং বেশ কয়েকটি স্টলে বইটি রাখা হয়।

সাংবাদিক মনির হোসেনের তথ্য মতে মোংলা সাহিত্য পরিষদের স্টল হতে বিক্রিত (পূর্ব প্রকাশিত ও সংগৃহীত) বই- একুশের বর্ণমালা ১৯ টা, একুশের ঠিকানা ১১ টা, অবিনাশী প্রেম ৬ টা, বুনন ২ টা, নীরবে পুড়ে যাই ২ টা, হঠাৎ ধুমকেতু ৪ টা। কবি আসমা আক্তার কাজল জানান তার বই “সোনালী ভোরের শুভ্র ঘ্রাণ” বিক্রয় ছিল সন্তোষজনক। এছাড়া গত বই মেলায় আজিজ মোড়লের প্রকাশিত “দক্ষিণ বঙ্গে মেছেরশাহ্” বইটি শুধুমাত্র ডিসপ্লের জন্য রাখা দশটি বইয়ের মধ্যে বইপ্রেমী ক্রেতাদের অনুরোধে ছয়টিই বিক্রি হয়ে গেছে। কবি ও সাহিত্যিক আফরোজা হীরার বনের ধুবলা, পথ ও নারী, হিরক রশ্মি, ভয়ের পেটে ভূতের বাড়ি, ছন্দে গড়া মজার ছড়া, ও দখিনার ফুল (যৌথ কাব্যগ্রন্থ) – এই ছয়টি বই ছিলো জসিম বুক স্টলে। কবি ও সাহিত্যিক সাজ্জাদ হোসেনের উপরে উল্লেখিত বইগুলি ছাড়া এর আগে এককভাবে প্রকাশিত আরো যে সব বই গাঙচিলের স্টলে স্থান পেয়েছিলো সে গুলি হলো – পাথরের কান্না, নষ্ট গোলাপ, স্মৃতির বালুচর, হীরক তরবারি, দ্যুলোকের ডাক, কবিতার ফেরিওয়ালা, শিশিরের ধ্বনি, কাঁচের জগত, কষ্টের নোনা জল, চোখের জলে ছল, সভ্যতার বস্ত্রহরণ ও খেলা ঘরের কান্না। সকল স্টলের বিক্রয়ের সঠিক তথ্য জানা না গেলেও করোনা মহামারিকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় পাঠকের উপস্থিতি ও ক্রয়ে প্রকাশনাগুলো মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে প্রকাশনা গুলোকে টিকিয়ে রাখতে গেলে ভবিষ্যতে পাঠক ও ক্রেতাদের আরো সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরী বলে মনে করেন প্রায় সবগুলো প্রকাশনী। পাঠক ও দর্শকদের মধ্যে ক্রেতা সত্ত্বা বিকশিত না হলে দিনে দিনে গৌরব ও উজ্জ্বলতা হারাবে বইমেলা।

বই হোক নিত্যদিনের সঙ্গী। মেলার উৎসব আবহের পাশাপাশি বই ক্রয়ের মাধ্যমে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে উজ্জীবিত রাখার মহান দায়িত্ব গ্রহণ হোক আমাদের অঙ্গীকার।


পরিচিতি

অনিমেষ বিশ্বাস। জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ সালে। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৫ সালে এসএসসি এবং মোংলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী মোংলা কলেজ) হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাসের পর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, বাংলাদেশ হতে প্রকৌশলী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়াশুনা। কোর্স সমাপ্ত করার পর প্রাণ আরএফএল গ্রুপে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঁচ বছর কর্মরত থাকার পর ২০১৭ সালে পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে ইইউবি-তে ইইই বিভাগে ভর্তি এবং ডিসেম্বর ২০২০-তে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন।

ছোটবেলার থেকেই সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। পড়া থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সাহিত্য চর্চার – টুকিটাকি লেখালেখিও শুরু করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই। এ পর্যন্ত ছয়টির অধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক ভাটিরদেশ অনলাইন পত্রিকার সাথে সংযুক্ত আছেন সহযোগী তথ্য সম্পাদক হিসাবে। সাহিত্য সাধনায় আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি।