বাংলা ভাষা
– অনিমেষ বিশ্বাস
এ এক মহান ভাষার আত্মকথা
মায়ের মুখের সুধা সঞ্চিত বাণী,
শাশ্বত-চিরন্তন সে, স্রোতস্বিনী যেন ক্ষুরধার
পারাবারের ন্যায় নিরবধি প্রবাহিণী।
কী গভীর আবেগময় শব্দ সম্ভার!
সুললিত শৃঙ্খলে সৃজনশীলতার সজ্জায়,
প্রকাশের আনন্দে, সৃষ্টির ছন্দে
ঐশ্বরিক অনুভব মননে কিংবা অস্থি-মজ্জায়।
৪৭-এর দ্বিজাতি তত্ত্বে, ৪৮-এর ঘোষণায়
ঊর্দু হল রাষ্ট্রভাষা, প্রাণের ভাষা অবহেলায়,
ভাষার সন্তানেরা নামলো পথে, প্রত্যয়ে,
রক্ত শোভিত জীবন খেলায়।
বাঁচাতে মাকে, মায়ের ভাষাকে
ভেঙে নিষ্ঠুর ১৪৪ ধারা, উপেক্ষা করে গুলি,
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথে
ছাত্র-জনতার রক্তে নদী, উড়ল মাথার খুলি।
শোষকের হাত যতই লাল হোক খুনে
তাজা প্রাণের রক্ত যেন অভ্যুদয়,
যে ভাষায় জন্ম নেয় সালাম, বরকত,
রফিক, শফিক, সে ভাষার নেই ক্ষয়।
শোষণের শৃঙ্খল ছিঁড়ে, বারুদের-
অগ্নি-স্ফুলিঙ্গে পুণর্জন্ম তোমার,
বাংলা মা’গো তোমার ভাষায়
গর্বিত আমি, ভালবাসা অনিবার।
যত্নে বাঁচুক জীবনের দামে কেনা
সুমধুর বাংলা ভাষা চিরদিন,
মন প্রকাশের সোনালি আকাশে
আজন্ম বন্দিত হোক, ভাষার জন্য ঋণ।
অমর একুশে
– অনিমেষ বিশ্বাস
সকালের শুভ্র আকাশে লাল সবুজের সংমিশ্রন,
দীপ্ত প্রত্যয়ে দুর্বার বাংলাদেশ
আরও একবার অপরাজেয় শক্তিতে
জীবনের জয়গানে মুখরিত করে রাজপথ
চির অম্লান সে বাণী নিয়ত সমুজ্জ্বল অমর একুশে।
সমর সংগ্রামে অপরাহত রাইফেল নয়
বুকের তাজা রক্ত সম্বল; দুর্ণিবার
বাণীমাতার পরিশুদ্ধ সন্তান কপালে সূর্যটিকা পরে
নির্দ্বিধায়, এঁকে দেয় স্বাক্ষর চিরন্তন সময় প্রবাহে —
কালের ধারায় সৃজনশীলতার সে অক্ষয় প্রতিকৃতি।
তবু , সময়ের প্রত্যাশিত সূর্যের বুকে, অমানিশার অন্ধকার
বিঁধিয়ে দেয় ব্যর্থতার তীক্ষ্ণ ছুরি,তাঁদের শাশ্বত চেতনায়!
বুলেটের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যারা মুছেছিল বুকের তাজা রক্তে!
এখনই সময়, হাতে হাত রেখে দৃঢ় প্রত্যয়ে বিভেদের বেড়াজাল ভেঙে,
গড়ি নতুন বাংলাদেশ যে স্বপ্নছবি এঁকেছিল তাঁরা অমর একুশেতে।
কবি পরিচিতি
অনিমেষ বিশ্বাস। জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ সালে। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৫ সালে এসএসসি এবং মোংলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী মোংলা কলেজ) হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাসের পর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, বাংলাদেশ হতে প্রকৌশলী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়াশুনা। কোর্স সমাপ্ত করার পর প্রাণ আরএফএল গ্রুপে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঁচ বছর কর্মরত থাকার পর ২০১৭ সালে পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে ইইউবি-তে ইইই বিভাগে ভর্তি এবং ডিসেম্বর ২০২০-তে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন।
ছোটবেলার থেকেই সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। পড়া থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সাহিত্য চর্চার – টুকিটাকি লেখালেখিও শুরু করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই। এ পর্যন্ত ছয়টির অধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক ভাটিরদেশ অনলাইন পত্রিকার সাথে সংযুক্ত আছেন সহযোগী তথ্য সম্পাদক হিসাবে। সাহিত্য সাধনায় আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি।