অবিরাম
তোমার কি মনে আছে,
জলা ডিঙিয়ে একদিন
একসাথে কতই না ডাঙায় হেঁটেছি!
নিস্ফল দীর্ঘশ্বাস।
টিমটিমে আলোর দিন হঠাতই আজ শেষ।
এখন নিয়ন বাতির দিন,
সোফা আর টিভির দিন,
মোটকথা একটা হুল্লোড়ের দিন।
উন্নতিসাধন!
বেচাকেনা সস্তায়,
মূল্য হ্রাসে না কি ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায়,
গুণগতমান হ্রাসে না কি মূল্যবোধ না বোঝায়,
সেটাই তো অর্থনীতি, রাজনীতি…
জীবননীতি অনেক দূরে।
এখন শুধুই সময় মেপে যাই।
আবার আমার সামনে সেই জলা!
আবার ওপার থেকে ডাঙার হাতছানি,
কিন্তু আজ আর তুমি নেই,
কোথাও …তুমি …
ভাঙা কাঁচে
সরোবরের সচ্ছলতাকে তুচ্ছ করে –
পুরাতন এক ভাঙাকাঁচে চোখ রেখে ;
আত্মার বিকৃতি খুঁজছো পাগল মনে,
ফিরে দেখছো না তাঁর ক্ষয়িষ্ণু বসন।
ডুব দাও একবার স্বচ্ছতার নীরে।
যখনই আঁকুপাঁকু করবে জীবন
সে সময়ে উত্তরও মিলে যাবে ঠিক,
শুধু একবার ডুব দাও অগাধ সলিলে।
কষ্ট যা দেবে তাঁকে সব ফেরত পাবে,
শূন্যতা সংগে নিয়েই ফিরতে যে হবে।
কোন দেনা পাওনাই তাঁর জন্যে নয়,
বিত্তে ভরে না চিত্ত, গণ্ডিও মানে না যে!
ভাব, তাঁকে বন্দী করে রেখেছো খাঁচায়!
উড়ে গেলে তাঁকে আর ফিরেও পাবে না।
আজ, হলে নীলকান্তমণি বিচ্ছুরিত
বিচ্ছুরণ রুখবার সাধ্য কী তোমার!
ক্লান্তি নেই, দুঃখ নেই, নেই অবসাদ –
আনন্দ, আবেগ নেই; নেই উচ্ছ্বাসও।
জীর্ণ বসন শুধু তাঁরই খেলাঘর,
লক্ষ্য তাঁর অচঞ্চল; স্থির – সত্য – ধ্রুব।
মনে রেখো
রক্ত ঝরা দিনগুলোর হিসেব আজ
মুখ বন্ধ খামে বন্দী বিচারের জন্য।
দিন গুনে গুনে তামাদি হয় ভাবনা
ডাকছাপের অপেক্ষা আর কতদিন?
উচ্ছ্বাস ব্যবহার বা অপব্যবহারে
ক্লান্ত শিথিল দেহ আঁধারে পড়ে থাকে,
পাশবিক নৃশংস দলনে বোঁটা ছেড়া
বসন্ত কুসুম লুটপাট অবিরত।
স্বর্ণ শিখর রঞ্জিত প্রতিশ্রুত ভোর
আর কি আসবে না? পুঁথি পত্র শুধু
কি আশ্বাসই দেবে? নয়নে নাট্টশালা!
দিনপঞ্জি নাগাল ছাড়ায়, রঙ্গ দেখি।
অতীত, বর্তমান বা ভাবী পরিণতি
ইতিহাসে স্থান পাবে কি? তাও জানি না।
রক্তঝরা দিনের গুমরানো বেদনা
হয়তো রয়েই যাবে মুখ বন্ধ খামে।
একাকার
আসন টলোমলো
জাহাজ দুলছে
ঝোড়ো হাওয়ার ঝাপটাতে
আতঙ্কিত মন
ক্যাপ্টেনের পারদর্শিতায়
পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেল
স্বস্তির নিশ্বাস
ডুবতে ডুবতে ভাসার জন্য
আনন্দ উৎসব।
উৎসবের মত্ততায়
এখন ভাসছে ওরা
কি হতে পারতো
কি হতে পারে, ভাবি পথে
তাই নিয়ে কত্তো আলোচনা
– আর যদি নাই ফিরতাম
– যাই বলো, উঁনি ক্যাপ্টেন বটে
– যাক বাবা, বাঁচাতো গেল
রঙিন গ্লাসের মধ্যে
ভাসতে ভাসতে ডোবা।
আমি কিন্তু দুটোই দেখলাম
তাই, আমার চোখে এখন
ডুবতে ডুবতে ভাসা
আর, ভাসতে ভাসতে ডোবা
একাকার।
বিম্বে পরাজয়
অপরাজিতা নও তুমি আজ –
সৌন্দর্য লোভে মুক্ত মত্ত অলিদল,
ফিরে গেছে একদিন মধুর অভাবে।
সেদিন তুমি অপরাজিতা ছিলে।
আজ তোমার ঘননীল বসনে
ভাসছে না আর কোনো নতুন ভ্রমর
পরিচিত বদ্ধতা উন্মুক্ত রেখেও
সাড়া মিলছে না কোনো ইশারায়।
বল্লরী বেষ্টনীতে যারা ঘুরছিল –
সে তো ছিলো স্বার্থ নিয়ে ঘোরা,
একদিন আহত সে মধুমাছি দল
কেউ রইলো না তোমার পাশেতে।
শূন্যতার বনে বসে ভাবছ কি
সেইসব দিন, যা ছিলো রঙিন?
তবু পারছো না যেতে, দ্বার রুদ্ধ,
বাকরুদ্ধ বলে। অধিকার হারিয়েছ।
একদিন যারে ফিরায়েছ রিক্তহস্তে
সে যে ছিলো কত আপনার ধন,
বোঝনি তখন। প্রতিফলনে আজ
বিম্বই পাবে। দর্শন মিলবে না কারও।
স্বার্থহীন প্রেমের চাবুক আজ
তোমার অঙ্গে অঙ্গে! বিদ্রুপ করে।
তোমাকে দেখে সবাই কৌতুকভরে,
অপরাজিতা নও। আজ ঝরা ফুল তুমি।
কবি পরিচিতি

সুমিত্র দত্ত রায় কবির ছদ্মনাম। প্রকৃত নাম সংকেত চট্টোপাধ্যায়।
আমি ছেলেবেলা থেকে ভাগীরথী কূলে বড় হয়েছি। আমার একাধিক লেখার প্রেরণায় গঙ্গার ভুমিকা অনেক। ওখানেই দেখেছি সূর্যাস্ত বা তৎকালীন মেঘরঞ্জনী। আদি বাড়ির কথা দিদির চোখে দেখা। বরিশালের শোলক গ্রামেই পিতৃভূমি ও বাটাজোরে মাতুলালয় ছিল। পিতা ঈশ্বর যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাতা ঈশ্বর বিজনবালা দেবী। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী রুমা চট্টোপাধ্যায় আর এক কন্যা সপ্তদ্বীপা চট্টোপাধ্যায়। ভাই নেই। দুই দিদি, গীতা মুখার্জী আর অঞ্জনা মুখার্জি। পিতা যোগেশচন্দ্র ছিলেন দেশপ্রেমিক। বরিশাল হতে বন্দী হয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। তাঁদের রক্তে কিছুটা দুঃসাহসী আমিও ছিলাম। কিন্তু কবিতার জগত আমার নিজস্ব মনে হত সেই দশবছর বয়সেই। আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দসই ছিলো। চাকুরিজীবী ছিলাম। এলাহাবাদ ব্যাংকে আধিকারিক। বদলির চাকরি। তাই ২০১২ সালে স্বেচ্ছায় অবসরের পর বাংলা কবিতা ডটকমে লেখা শুরু, আমার কন্যাপ্রতিম সোমালীর হাত ধরে। আর পিছু ফিরে তাকাই নি, এখন ওটাই ধ্যান জ্ঞান।