নির্ঝর মুখোপাধ্যায় – কবিতাগুচ্ছ (নেতাজি একশো পঁচিশ, বাচ্চা লোক তালি বাজাও, ব্যঞ্জন বর্ণ, সারমেয় কথা)

নেতাজি একশো পঁচিশ

– নির্ঝর মুখোপাধ্যায়

শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে
একশো পঁচিশ বছর ধরে
দিল্লীর দিকে আঙুল তুলে
ঘোড়ার উপর উপবিষ্ট নেতাজী
ভাবলেন এবার তাঁর ডান হাতটাকে
একটু বিরাম দেওয়া দরকার।
ভাবামাত্র ডানপাশের লোকগুলি
তাঁর হাতটি দলাই মলাইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
বিস্তর টানামানিতে তিনি ডানদিকে হেলে যেতেই
তাঁর বাঁদিকের লোকগুলি চিৎকার করে ওঠে
যদিও তাঁর বাঁ হাতটা ব্যথা করছিলো না
তবুও বাঁহাতি লোকেরা
তাঁর বাঁহাত মালিশ করতে উদ্যত হোলো ।
এহেন টাগ অফ ওয়ারে
তাঁর প্রিয় ঘোড়াটি যারপরনাই বিচলিত হয়ে
উঁচু বেদিটার থেকে মারল এক লাফ।
মালা হাতে অপেক্ষামান
ডান হাতি ও বাঁ হাতি ফিল্ডাররা
এতো বড় ক্যাচ লোফার জন্য
মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না।
খুশি হয়ে নেতাজি তাঁর প্রিয় ঘোড়াটির
গলায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
তাঁর মুখে ফুটে উঠলো মৃদু হাসি।
তারপর ডান হাত তুলে
বজ্র কণ্ঠে ডাক দিলেন,
দিল্লী চলওওওওওও….

বাচ্চা লোক তালি বাজাও

– নির্ঝর মুখোপাধ্যায়

Anticipatory obedience is a political tragedy.
— Timothy Snyder

কাঙ্খিত পরপারের সরু সুতোর সেতু
নিজে পেরোতে না পেরে
একটা নেংটি ইঁদুরকে দিয়েছি পথ ছেড়ে।
সে বেটা দুলতে দুলতে মাঝপথে ভয়ে
যেই না যাচ্ছে পড়ে,
নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে—
অনেক আগে থেকেই
সুরক্ষা জাল পেতে
“বাচ্চা লোগ তালি বাজাও,
এ মাদারি কা খেলা আছে”
ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করছি আমি ।
আমার পাশে ধীরে ধীরে জুটে যাচ্ছে
অগণিত আমির দল যারা প্রাণ পনে
হাততালিত মুখর করতে থাকে চারপাশ ।
এর পরে ইঁদুরটা সাহসের মগডালে চড়ে
প্রথমে হেগে দেয় আমার মুখে
সেই দেখে উপস্থিত সন্ত্রস্ত আমির দল
দুহাতের ক্ষুদ্র পরিসরে ঢাকতে থাকে
আপন আপন মস্তিষ্ক সবার।
উল্লোসিত নেংটিবাবা
অগণিত নিঃসমস্তিস্কের ধরে থাকা সুরক্ষা জাল
বিস্তারিত পরখ করে
কখনো ছোঁড়ে থুতু
কখনো করে হিসি
আগে থেকে হিসেবে করে
হাতে হাতে এগিয়ে দিই তার
পরবর্তী অনাচার
স্বৈরাচারের নির্ভয়-কবচকুন্ডল।

ব্যঞ্জন বর্ণ

– নির্ঝর মুখোপাধ্যায়

ব্যঞ্জনমন্বক, স্বরঃ স্বয়ং রাজতে
(ব্যঞ্জনবর্ণ পরনির্ভিরশীল, কিন্তু স্বর নিজেই উচ্চারিত হইতে পারে।)

সমস্ত স্বরবর্ণ হস্তগত করে
আমাকে ব্যঞ্জনময় করে হাসছো।

সযত্নে অক্ষর সাজাই—
ভ-ল-ব-স
লোকে বিদ্রূপ করে,
অথচ ইচ্ছে করলেই তুমি
দিতে পারো আ-কার, ও-কার!

কবে থেকে ক-ব-ত লিখে
নতজানু হয়ে বসে আছি
লোকে বিদ্রূপ করে,
অথচ ইচ্ছে করলেই তুমি ই-কার, আ-কার…..

( শ্রদ্ধেয়া অধ্যাপিকা মন্দাক্রান্তা বোস (আমার মন্দাদি)-কে উৎসর্গীকৃত )

সারমেয় কথা

– নির্ঝর মুখোপাধ্যায়

যাঁদের ইস্কুল পাঠশালে
বাংলা মাধ্যমে পড়া
একটা শৈশব ছিল
তাঁদের কখনো না কখনো
কুকুর রচনা লেখার সুযোগ এসেছে
কমবেশী সকলেই অতএব
কুকুরের প্রভুভক্তি নিয়ে
দুটো একটা লাইন…..

কিন্তু কুকুরদের সম্বন্ধে
যে দুটো একটা কথা
আমাদের মাষ্টারমশাইরা
জানতেন কিন্তু বলেননি
সেটা হলো—
সব প্রভুভক্ত কুকুরেরাই
প্রকৃতপক্ষে একেক জন দার্শনিক
তারা প্রভুর পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে
কুঁই কুঁই করে কখনই কৃতজ্ঞতা জানায় না
আসলে তারা প্রশ্ন করে

একথা এক রাজকবি জানতেন বলে
রাজাকে একটি কুকুর উপহার দেন
তার গলবন্ধে লেখাছিল—
মহারাজ, আমি আপনার পোষা কুকুর বটে,
অনুগ্রহ করে বলবেন
আপনি কার?


কবি পরিচিতি

নির্ঝর মুখোপাধ্যায়। দম দম পার্ক, কলকাতা।

জন্ম ২৪ সেপ্টেম্বর । বর্তমানে চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিন বছর পুরোনো চাকরিতে এ্যডভাইসার হিসেবে নিযুক্ত। শিক্ষাগত যোগ্যতা –MA, LL. B., ACMA, ACS, CPM

ভালো লাগে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন কবিদের কবিতা ও বিভিন্ন নাট্যাকারের লেখা নাটক পড়তে। ভালো লাগে কবিতা লিখতে ও অনুবাদ করতে, ভালো লাগে সংগীত চর্চা করতে। ভালো লাগে নন ফিকসন যে কোন বিষয়ে পড়তে ।

স্কুল ম্যাগাজিনে, কলেজ ম্যাগাজিনে, অফিস ম্যাগাজিনে, ছোটখাটো পত্রিকায়, ওয়েবে টুকটাক লিখে থাকি।

View Post