জীবনশিল্পী
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
তিনি দিঘির সামনে দাঁড়ালেই
জলের মধ্যে ঢেউ ওঠে,
মেঘ না চাইতেই নেমে আসে বৃষ্টি
আনন্দে মেতে ওঠে খোরশোলা, পুঁটি, মৌরলা।
দিঘিটা তখন খরস্রোতা নদী
মাঝি নৌকা বায়
ছেলের দল সাঁতার কাটে,
বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে লোকে লোকারণ্য
মাছশিকারী পাখিরা উড়ে যায় জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
তিনি দিঘির কাছে দাঁড়ালেই
শহরের বাড়ি ঘরদোর সব
আবছা হতে হতে অদৃশ্য,
চতুর্দিকে গাঁয়ের পথ, খড়ের চালা
সরষে ক্ষেতে ধানের ক্ষেতে আদুল মানুষ।
আর এই সব মুহূর্তেই
তাঁর গোলা ভরে ওঠে গল্পের ফসলে।
সাজানো বাগানে নয়
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
সাজগোজ ছাড়া তুমি বাইরে আসো না,
কাপড়ে জামায় আর কপালের টিপে
ঠোঁট আর নখের রঙেও
কেমন সুন্দর মিল রাখো।
চোখের আলোয় কাঁপে সমস্ত সংসার
যেন ধ্বনিময় ছন্দে গাঁথা কাব্যসুষমা,
এই তুমি তুমি নও, সাজানো প্রতিমা।
তোমাকে দেখতে আমি অন্দরে যাবো।
থাকবে না কপালে টিপ
উড়োচুল এসে পড়বে মুখে,
শাড়ির আঁচল থাকবে কোমরে জড়ানো,
একেবারে আটপৌরে সাজে
তোমাকে দেখবো আমি,
এই তুমি তোমারই মতন
একেবারে মুখের চলতি কথা
প্রকাশিত স্বাধীন তদ্ভবে।
সাজানো বাগানে নয়,
অরণ্যেই পর্যটনে যাবো।
বৃষ্টির রাত
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
কাল সারারাত বৃষ্টি হয়ে গেছে
টিপটিপ অবিরাম,
পিতামহ, মাতামহ, প্রপিতামহীরা
পৃথিবীর জন্য মায়ায়
কেঁদেছেন সারারাত
তাঁদেরই চোখের জল ফোঁটাফোঁটা
মিশে গেছে মাটি আর নদী ও সাগরে।
কেউ কেউ স্বপ্নে এসে
দেখা দিয়ে গেছেন সংক্ষেপে,
বলেছেন –ভালো থাক
থাকিস সাবধানে,
মাটি বড় পিচ্ছিল
মায়াময় তোদের ওখানে।
কাল সারারাত
চোখ বুঁজে বৃষ্টির শব্দ শুনে গেছি
সুখস্বপ্নে হেঁটেছেন পূর্বপুরুষেরা।
বসন্তে
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
শুকনো পাতা মাড়ালেই
পায়ের নিচে খসখস আওয়াজ,
পলাশ, শিমুল, শিরীষের দিকে চাইলেই
তারা ছুঁড়ে দিচ্ছে রঙ আর আলো।
দুটো ছবিই
এই জীবনের দিকে আঙুল তুলছে,
বলছে, বুঝে নাও —
এটাই জীবন।
আর কোন ঋতুই বা এমন করে শেখায়!
বাংরেজি
– দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
বাংলায় ইংরাজি মেশে কথায় বার্তায়
তার জন্য হেঁটমুন্ড হয় নাকো কেউ,
বলে তারা — এমনই তো হয়,
ভাষার শহীদ তোমরা বলো, কার জয়?
সাহিত্যের ভাষাও নাকি এমনটি হবে
বাংলায় শব্দ নাকি কমতি পড়েছে,
ভাষার পদ্মবনে হস্তীর বৃংহণ—
নতুন শহীদ, তোমরা
বলো, কে কে হবে?
কবি পরিচিতি

দেবকুমার মুখোপাধ্যায়। পশ্চিম বাংলা, ভারত। জন্ম ১৯৫০। স্নাতক। বর্তমানে বসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির শুরু। কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প, অণু গল্প, নিবন্ধ লিখে থাকেন। বড়দের জন্য, ছোটদের জন্যও। কিছু কিছু অনুবাদও করেছেন, ইংরাজি থেকে বাংলায় — কবিতার, গল্পের।
বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে — আসলে আলোর জন্যে, এখানে তরঙ্গ এখানে জীবন, জলের উপমা (এককভাবে), আর যাঁরা কবিতা পড়েন না (দুজনে মিলে), ছড়ার মজা খাস্তা গজা ও চার মাথার মোড় (চারজনে মিলে)।