চোখ নয় নদী
– অনিমেষ বিশ্বাস
আশ্রয়হীন দিগন্তে কালমেঘের ঘটায়,
বৃষ্টির অনাবিল ঢল নামে ফিকে সবুজে;
দৃষ্টির সীমারেখায় ঝাপসা আলো
ভেসে যায় চোখের মানচিত্র আঁকা
মায়াবী কাজলের স্নিগ্ধ প্রশান্তি মায়া কালি।
জীবন সে তো তৃষিত চাতকের ন্যায়!
যে চোখ ভাসলে সুখের অশ্রুজলে
থাকত না কোন অবসাদ,
সে আঁখির পরিধি বেদনাতে
নিত্যই হল বরবাদ।
কষ্টের জলচ্ছাপ যতই হোক সুক্ষ্ম,
আকিঞ্চন অগভীর কিংবা গভীর প্রকট রুক্ষ,
তার নেই শান্ত্বনা! নেই কিছু স্বস্তি!
দুই চোখে প্রকাশ তার মন বলি যারে
উপমা হারায় সব পেলে ব্যথা যত,
চোখ নয়, যত সয় অসময় অবিরত,
ভাসে দু’কূল ছেপে যেন নিরবধি,
বেদনাতে আহত মনে চোখই হল নদী।
চিরনিদ্রা
– অনিমেষ বিশ্বাস
একদিন জ্যোৎস্নাতে বলেছিলাম – “মায়াবতী হও”-
“আরো গভীরে আলো ছড়াও। প্রকাশিত হও।”
জ্যোৎস্না লজ্জায় লাল হল!
আরো ছড়াল দ্যূতি ,
পূর্ণিমা নিয়ে এল পৃথিবীতে
আলোকের ছটায় ভাসল আকাশ
ভাসল জানলা, জাগল ভাঙা খুঁটি
হাসল প্রকৃতি ফুটল ফুল
জুড়ল খুনসুটি।
জ্যোৎস্নাকে বললাম –
“ঘুম যে কেড়ে নিলে!”
“আরো প্রশান্তি দাও।”
“একটু ঘুমাতে চাই।”
পৃথিবী বড়ই ক্লান্ত!
কি বুঝল সে? জানি না তা!
নাকি সে আঘাত পেল?
ক্রমে ক্ষয়ে এল চাঁদ,
আলো হারাল দিনে দিনে
লুপ্ত হল প্রায়-
এল অমানিশা
প্রকৃতিতে; জীবনেও।
এখন স্বস্তির ঘুম দু’চোখে
চির শান্তিতে ঘুমিয়ে আছি,
নিচ্ছিদ্র ছয় দেয়ালের মাঝে!
এখন আর আমি জ্যোৎস্না কিংবা
আঁধারের পার্থক্য বুঝি না কিছুই,
সমাধিফলক চাঁদ তারা নক্ষত্রের
আলোয় ভেসে গেলেও,
আমার কিচ্ছু এসে যায় না।
কবি পরিচিতি

অনিমেষ বিশ্বাস। জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ সালে। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৫ সালে এসএসসি এবং মোংলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী মোংলা কলেজ) হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাসের পর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, বাংলাদেশ হতে প্রকৌশলী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়াশুনা। কোর্স সমাপ্ত করার পর প্রাণ আরএফএল গ্রুপে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঁচ বছর কর্মরত থাকার পর ২০১৭ সালে পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে ইইউবি-তে ইইই বিভাগে ভর্তি এবং ডিসেম্বর ২০২০-তে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন।
ছোটবেলার থেকেই সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। পড়া থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সাহিত্য চর্চার – টুকিটাকি লেখালেখিও শুরু করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই। এ পর্যন্ত ছয়টির অধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক ভাটিরদেশ অনলাইন পত্রিকার সাথে সংযুক্ত আছেন সহযোগী তথ্য সম্পাদক হিসাবে। সাহিত্য সাধনায় আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি।