যোষেফ হাজরা – কবিতাগুচ্ছ (এখানে বসে আছ কেন, তুমি কেন এত কাঁদালে আমাকে)

এখানে বসে আছ কেন

– যোষেফ হাজরা

এখানে বসে আছ কেন
আমার হৃদয়ের উপর
এত ভালবাসা আমি বইতে পারি না
অথচ সকল অর্থে অনর্থে খুঁজে পাই তুমি আছ তুমি আছ
কিন্তু কিছুই সহজতর হয় না
যদিও মনে করি তাই

জানো, তোমার এই স্পর্শ আমাকে নবীন করে তোলে
আমি মিশে যাই বৃহৎ কর্মযজ্ঞে, হারিয়ে যাই
এবং তুমি খুঁজে আনো আমাকে
পবিত্র কর উষ্ণ স্নানে
নতুন কোন পালকে উড্ডীন করে দেও
আমি ভ্রমণ করি প্রেমের আদি-অন্ত

আমি মুক্তি পাই পৃথিবীর গতি থেকে
তুমি সুখে রাখ, শান্তিতে রাখ
অন্তরে জড়িয়ে থাক অন্তর লতা
কান্ত সবুজ এই আমার বুকে
এমনি যদি ঘুমিয়ে থাক ক্ষণিকের সুখে
মনে করি এইতো জীবন
আর কী চাই বেশি কিছু
যার বুকে ঘুমিয়ে থাকে
স্বর্গীয় মহাধন

মনে হয় তুমি ছিলে তাই বেঁচে আছি আমি
প্রাণ থাকলেই বেঁচে থাকা যায় না
এই থাকা আর না থাকার বিস্তর ব্যবধান
কোন কিছু নেই যার বিনিময়ে পূর্ণ করা যায়
তোমার প্রেমের তুলনা শুধুই তোমার প্রেম
তোমার হাসি আমি আর কোথাও খুঁজে পাই না
যা আমাকে উচ্ছল করে তোলে
এবং আমি ভেবে পাই না
এই আমি এতকাল কোথায় ছিলাম

অথচ তোমার পরশ পাথর
এই হৃদয়ের ধরে রাখতে আমার কষ্ট হয়
আমি কী তবে এর যোগ্য নই?

তুমি কেন এত কাঁদালে আমাকে

– যোষেফ হাজরা

তুমি কেন এত কাঁদালে আমাকে
কেন এত ভালবাসলে
এইতো প্রথম কেউ এত কাছে এল
সমস্ত মন দিয়ে হয়তো সমস্ত মন নিয়ে গেল
এখন কী করব আমি
তোমার ব্যক্তিত্ব আমাকে জড়িয়ে রেখেছে
আমি আর সেই আমি নেই
তোমাতেই বিসর্জন দিয়ে তোমাকে গ্রহণ করেছি

একি করলে তুমি
তবে আরো কাছে এসো
আরো উষ্ণ হই অধর চুম্বনে
তারপর আমরা ছায়া বিনিময় করি
এবং আবার মিলিত হবার আগে
দুজন দুজনকে নিয়ে বিভক্ত হয়ে যাব

জানি না এত ভালবাসার কী যোগ্যতা ছিল আমার
তবুও তুমি দিয়েছ,
আর যোগ্য করেই তুলবে আমাকে জানি
আমি গ্রহণ করেছি তোমাকে বিনা সংকোচে
এবং তুমি প্রথম দেখায় এতটা সাবলীল ছিলে
মনে হয় সেই পরিচয় যেন যুগ যুগান্তের
অন্তত রহস্যের মধ্যে আকর্ষণীয়

তোমার কাছে আসি আর আমিত্ব পোশাক ছেড়ে
নিজেকে নতুন করে তোমার কাছে আবিষ্কার করি
অনুভব করি হৃদয় কতটা হৃদয়ের কথা বোঝে
চোখ কতটা চোখের কথা বোঝে
বোঝে শরীর-সত্তা ও দৃষ্টিকোণ

যে শব্দ তুমি রেখে যেতে চাও
আর যে শব্দ ভুলে যেতে চাও
সে সব আমার সকল শ্রবণ দিয়ে মর্মে বিঁধে থাকে
আমাকে হাসায়, কাঁদায়, সুখের জলে ভাসায়
শুধু তুমি অনেক কাছে থেক
যেন সুখের জোয়ারে যদি বাঁধ ভেঙে পড়ে
আমরা প্রেমের আলিঙ্গনে ভেসে যেতে পারি
ভেসে যেতে পারি সুখে ও দুখে


কবি পরিচিতি

যোষেফ হাজরা। ছদ্ম নাম তারুণ্যের কবি। বর্তমান নিবাস – বঙ্গবন্ধুপাড়া, শেলাবুনিয়া, মোংলা, বাগেরহাট।

আমি আমার জীবন গঠনের সময় বহু জায়গার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম। শহরের হাওয়া বা মফসলের জীবন এমনকি উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারার ছোঁয়া আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। আমার জন্মস্থান মোংলার স্বনামধন্য সেন্ট পলস হাসপাতালে। ১লা মে জন্ম হাওয়ায় ফাদার মারিনো রিগন আমার নাম যোষেফ (আধুনিকায়নে যোসেফ) রাখে। পিতা তাপস হাজরা, মাতা এন্ড্রো রিনা নাথ।

আমি প্রথম যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতা পড়ে তার সম্পর্কে জানি তখন থেকেই তিনি আমার অনুপ্রেরণা। এ জন্য চিত্রকলা, সংগীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও পরবর্তীতে সেন্ট পলস স্কুলের লাইব্রেরি ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অপার সুযোগে লেখালেখির হাতে খড়ি দেই। সকল শিল্প-সংস্কৃতি থেকে আমি লেখালেখি করতে বেশি ভালবাসি। কারণ মনের কথা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করে, ভাষার জাদুকারিত্বে, জ্ঞান ও দর্শনের যে সমন্বয় হয়, সেই আত্মদর্শনে সম্পূর্ণ আত্মতৃপ্ত করতে সক্ষম। আমি যদিও রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব মানি তবুও তার ধাঁচে আমি লিখি না। আমি কাব্য ও রচনায় অন্যান্য ঢং রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করি যাতে কেউ পড়ামাত্রই বুঝতে পারে এই লেখনীর স্রষ্টা কেবলমাত্র আমি।