উত্তরে একাকী
– পারমিতা ব্যানার্জি
হাজার প্রশ্ন নিয়ে
দিশেহারা আজও তুমি
নীল ধ্রুবতারা…
ভাবছো _
কত আর ঠায় বসে থাকা
উত্তর আগলে!
তোমার তীক্ষ্ণ নজরে _
দুধসাদা পথে বিছানো সেই
কত ভাঙা, কত গড়া!
যত যন্ত্রণার কারুকাজ…
আনন্দের ঝর্ণাধারা…
পথ খুঁজে খুঁজে
ক্লান্ত হয়োনা যেন রাতভর!
নীলে হয়ো না বিলীন!
শেষ সীমান্তে একা বসে
তুমিই যে সাক্ষী
বহমান আকাশ গঙ্গার
বিরাট কর্ম যজ্ঞের…
জীবন আলেখ্যের
দিক্ নির্দেশকও তুমিই…
তুমি আজও যে এক এবং
অদ্বিতীয় ধ্রুব “সত্য”!
এখনও
– পারমিতা ব্যানার্জি
কিছু প্রতিবাদী মুখ জড়ো হয়েছিল রণাঙ্গণে!!
এক সবুজ অবুঝ মন ঘিরে ছিল দুরন্ত বিপ্লব।
খাতার ভাঁজে কিংবা মনে উড়ে আসা চিরকুট!
অজান্তে ছাপ ফেলেছিল মনের অন্য কোথাও!
আঠারোর উন্মাদনায়, লাল গোলাপ ছটফটে,
বাগিচায় বাগিচায়।লাল মিশে যায় প্রতিবাদে।
বাউল মন একতারায়, বোষ্টমীর রসকলিতে,
তুলসী-কাঠি মালায় অথবা সাদা স্বচ্ছ প্রেমে!
বিপ্লবে ও অন্য মনে তফাৎ ছিল কী সেদিন!!
ক্যাসুরিনার বনও বাঁচিয়েছিল জীবনের মন্ত্র!
উত্তাল জন সমুদ্রের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত চিনিয়েছিল,
রাস্তা একটাই। প্রেমই যে আগুন জ্বলা কলম!
কথা
– পারমিতা ব্যানার্জি
যখন বিদায় বেলা এলো _
ক্ষণিকের জন্য
আঁখি কী হলো ছলোছলো!
কী জানি হয়তো ভ্রম ছিল!
ভেবেছিলাম _
বলব তোমায়, “ভালবাসি”!
পারিনি।
মুখে এঁকে হাসি, বলেছি,
“আসি”।
চোখে চোখ রেখে
তুমি শুধু বল্লে _ “এসো”!
একবারের জন্যেও তো
বল্লে না তুমি _ ভালবাসো।
যে কথাটা চোখে ছিল…
যে কথাটা ছিল মনে…
শব্দ হয়ে ঝরে পড়লো না
শেষের ক্ষণে…
মুখের হাসিতেই কী রইলো
সেই বিরল যন্ত্রণা!!
আর হাসি?
সে যেন নিছকই বাহানা!
স্বপ্ন ঘোর
– পারমিতা ব্যানার্জি
সাগর তটে
সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়
থেকেছি কতদিন!
দিগন্ত মেঘে ঢেকে গেছে __
সমুদ্রে সূর্যোদয় দেখা হয়নি!
কখন যেন নিঃশব্দে
হেঁটেছিলাম__
তোমার বকুল ঝরা বুকে।
‘সত্যি বকুল’, হতে পারিনি
তোমার ঐ শূন্য হাতে!
সূর্যোদয় দেখার লোভে
ছুটে গেছি সমুদ্রে…
পৌঁছে গেছি উপত্যকায়!
বুঝিনি সূর্যোদয় আজ
তোমারই চোখের তারায়!
বার্তা বাহক
– পারমিতা ব্যানার্জি
এই আনন্দ-আকাশে
হঠাৎ কেন এলো ধেয়ে
এক জং রঙা মেঘের ঘনঘটা!
কথা ছিল না, তবু
কেন যে অসময়ে এসে
চোখে পাঠালো বর্ষার বারতা!
পুরোনো সে সংলাপ
হিমেল হাওয়ায় ভাসে;
বাউল হলো আজ উদাসী মন!
হঠাৎ মেঘ ভেঙে রোদ্
শরীর ছুঁতে চাইলো!
কাতর অনুরাগে হ’ল উচাটন!
মন একা বসে বসে
বুকে নিয়ে হেমন্ত প্রেম
কোন এক অজানায় হারায়!
কেন যে বৃষ্টির মন
ভেজা ঘাসে হিম মোহে
শিশির কণিকা খুঁজে বেড়ায়!
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।