রঞ্জন ভট্টাচার্য – কবিতাগুচ্ছ (ভালোবাসি, প্রতিদান, শিকল, ফিরে দেখা)

ভালোবাসি

– রঞ্জন ভট্টাচার্য

শুধু তোমাকেই….
শুধু তোমাকেই ভালোবাসি
বহু দুগ্ধসরণি বেয়ে
তোমার এ নক্ষত্রপুঞ্জে ।
বহু ছায়াঙ্ক ঘেরা গোধূলি বেলা
ছিন্ন করে তোমার এ উরসে।
তুমি নাও অনঙ্গ ….
নিরবয়ব হয়ে কেন আছো দূরে বহুদূরে ….?
আমি তো আশায় বাঁধি পথ সমুদ্র সৈকতে
কত ছায়া-উপচ্ছায়া হয়ে অভ্র ঘন পথে
ছুঁয়েও পারিনা ছুঁতে তোমার ওই আঁচল
কেন মেলো না বাহু আমার এ তটে
এসো চির চিহ্ন রেখে যাও তোমার অস্তিত্ব
আমার এই ভূমে ।

প্রতিদান

– রঞ্জন ভট্টাচার্য

কী দিয়েছি তোমাকে?
আমার এ মধ্যাহ্নে….
যা তুমি দিলে আজ প্রতিদানে,
আলেয়ায় ভাসতে ভাসতে পেয়েছিলে মরুদ্যান আমি ছিলাম ভাঙা তরী উত্তাল তরঙ্গের
আশ্রিত তুমি আমার উরসে
এ নক্ষত্রপুঞ্জে গোধূলি বেলায়
ছিন্ন করে বহু ছায়াঙ্ক আমার এ বাহু ডোরে
এ কেমন কৃতার্থতা !
এ যে কৃতজ্ঞতা!
পাড়ে যখন ভিড়ল তরী
হরি হরি রব তুলে
আমাকে দিলে ফেলে জোয়ারের জলে
ছলনার রূপ হীন ছলচাতুরি
তোমাকেই মানায়!

শিকল

– রঞ্জন ভট্টাচার্য

আমরা স্বাধীন
ঘরে বাইরে
মনের মাঝে
কই ?

বিদেশীরা
বপন করে
পরাধীনতার
মই !

আমরা স্বাধীন
স্বাধীনতার
অর্থ বুঝি
কী ?

দেশের খনি
লুটে নিচ্ছে
নিচ্ছে তুলে
ঘি!

আমরা স্বাধীন
এগিয়ে চলি
শিক্ষার আলো
কই?

কথার মাঝে
অনেকটা ফাঁক
যেন যশুরে
কই !

আমরা স্বাধীন
ঘরে ঘরে
পরাধীনতার
বেড়া

চলতে গিয়ে
চলার পথে
মনের বাঁধন
ছেঁড়া।

মনকে যখন
বাঁধব বলে
শক্ত করে
বাঁধি।

শিয়াল কাঁটা
জড়ায় পায়ে
মনের মাঝে
আধি।

তবুও আজ
চলতে হবে
জীবনযুদ্ধে
তাই

পরাধীনতার
শিকল আজও
তাইতো ভাঙতে
চাই!

ফিরে দেখা

– রঞ্জন ভট্টাচার্য

ওই যে দূরে জলের ধারে
পানকৌটি একা ,
দিচ্ছেনা ডাক পাখির ঝাঁক
আমার চোখে দেখা ।

কোথায় আছে গাছে গাছে
মুনি টিয়ার দল ,
নেইতো এরা বিশ্বসেরা
মন করে চঞ্চল ।

ডাকো না মা আমার কাছে
ওদের একটিবার ,
একটি কথা বড়ই ব্যথা
খুবই দরকার ।

আসছে ফিরে তোমার নীড়ে
শুনে আমার ডাক ,
বন্ধু সেজে ওরা আসে
কোরোনা মা রাগ।

বুলিয়ে দেবো হাত দুটি গায়
একটু আদর করে,
বলবে ওরা দুঃখ ওদের
আমার কাঁধে চড়ে ।

হাসবে খেলবে ছুটবে ওরা
বসবে খুশির হাট ,
তিলোত্তমা দেশের বুকে
ঘুচবে দুঃখের পাঠ।


কবি পরিচিতি

রঞ্জন ভট্টাচার্য। বর্তমান নিবাস ব্যারাকপুর মণিরামপুর। জন্ম :: দমদম প্রাইভেট রোড, পিতা: স্বর্গীয় হরিদাস ভট্টাচার্য, মাতা: স্বর্গীয় সুরুচি ভট্টাচার্য। কে কে হিন্দু একাডেমী মতিঝিল থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন। পেশা হিসেবে চাকরি করেন জুডিশিয়ারি ডিপার্টমেন্টে। বর্তমানে ব্যারাকপুর কোর্টে পোস্টিং আছে ।

ছোটবেলা থেকেই লেখার অভ্যাস। আজ মধ্যাহ্নের পথে পা বাড়িয়ে আরেকটু লেখার চেষ্টা করে চলেছেন। ইতিমধ্যেই ছাপা হয়েছে তিনটি কাব্যগ্রন্থ – ভাবনাঞ্জলি, মৌন বসন্ত, ও নগ্ন পা। পাঠক মনে বেশ সাড়া জাগিয়েছে এ সব কাব্যগ্রন্থ। আগামী বইমেলায় আরো একটি কাব্যগ্রন্থ “আরেকটি চাণক্য” প্রকাশের অপেক্ষায়। লেখালেখি চলে শান্তিনিকেতন সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় – নিয়মিত ও অনিয়মিত। এছাড়া আকাশবাণী প্রাত্যহিকী বিভাগে নিয়মিত‌ যোগাযোগ আছে তাঁর।

View Post