ভুল করে যদি আসি
– কালিদাস রায়
ভুল করে যদি চলে আসি আমি, তোমার কোন ভাবনায়।
ঝরে যদি কভু তব আঁখি বারি আমার কোন ছলনায়।
বিরক্ত আসে যদি মোর সৃজনে – বসে বিজনে,
জ্বালিয়ে করো শেষ তপ্ত মনের আগুনে।
করতে না পারো ক্ষমা, ভরে রেখো ঘৃণার পিয়াল,
নীরবে হবো লীন ভেঙ্গে সব কোলাহল।
সাজানো ভুবনে কারো আগমনে মোর মৌন প্রয়াস
ভালো চাইতেই অকারণে ঘটে যদি সর্বনাশ
কিরূপে বধিবো নিজে, নিজেরই অন্তর!
অরণ্যের আশায় যত্নে সাজানো মরুপ্রান্তর
হোক সব শেষ, দূর থেকে আরো দূর দূরান্তর
যাই চলে তোমা হতে – হয়ে দিগম্বর।
শুধু অকারণে না ঘটুক অনর্থক,
আমার ব্যর্থতায় যদি তুমি হও সার্থক –
তবে তাই হোক, কিবা দাম হিসাবের শেষ পাতায়
হলে ভুল মিছে সব; বিরহে মোর বিবাগী হৃদয়
অকারণে সান্ত্বনার পথ খুঁজি অবেলায় ।
ভুল করে যদি চলে আসি তোমার ভাবনায় !
আবার হলো দেখা
– কালিদাস রায়
তখন তোমার পনেরো কি ষোলো,
আমার একুশ পার।
বই খাতা নিয়ে ছুটে চলা মোর,
তোমার সিঁথি লাল।
আয়ত চোখের মায়াবী চাওনি,
খুশির হাসি মুখে,
দেখতাম লুকায়- বিধাতা তোমায়,
কতটা রাখিলো সুখে?
নিষ্ফল প্রেম, নিষ্ফল আশা,
আজও নিষ্ফল হয়ে
আমার হৃদয় চাপা দিয়ে যায়,
না জানি কোন ভয়ে!
আজকে আমার ব্যস্ত সময়,
ব্যস্ত নিয়ে লেখা,
চলতি পথে অবাক করে
আবার হলো দেখা।
এখন অনেক পরিপক্ক,
কাটাও সময় বেশ,
সুখের নায়ে পাল উড়াইয়ে,
দুঃখের টানলে রেশ।
কেমন দেখো ভাগ্যবিধাতা
লিখেছে নিজ হাতে,
পথের মানুষ, পথে ছিলাম-
আজও রয়েছি পথে,
হৃদয় কাঁপে! জীবন ভরে
পাওয়ার কিছু নাই,
আজো আমি আগের মতই
তোমারই সুখ চাই।
সভ্যতা চাই
– কালিদাস রায়
রক্তের স্রোত বয় ধরণীর বুকে,
বাতাসে লাশের গন্ধ পাই।
আমরা সবাই মানুষই মুখে!
উগ্রতা নয়, সভ্যতা চাই।
দখলদারের দুষ্ট চক্রে,
উচ্ছেদের এই নিঠুর খেলায়,
নিঃস্ব অসহায় করুণ চোখে
নিরুপায় হয়ে অশ্রু ঝরায়!
স্নেহের সনে আদরের হাত
ছিল রাখা যার মস্তকে,
তার কাটারিতে রক্তপাত
ভুলে সকল শাস্ত্রকে!
বজ্রের ন্যায় বিধিল শূল
চেনা লোকেদের আজও চিনি নাই।
ভেঙ্গে যাক সব ছলনার ছল
উগ্রতা নয়, সভ্যতা চাই।
অনিয়ম করে নিয়মের কথা
চিৎকার করে জানিয়ে যায়।
নির্বাক হয়ে হৃদয়ের ব্যথা
ভিতরে ভিতরে ঠুকরে খায়।
কৌশল করে গুজব রটায়
চতুর ভাবে ডাকাতি করে,
উগ্রবাদী তাণ্ডব ঘটায়,
নির্দোষ লোক মরমে মরে।
নির্মম বিশ্বে শান্তির খোঁজে
কোথাও কি কোন পথ নাই?
প্রার্থনা করি নয়ন বুজে
উগ্রতা নয়, সভ্যতা চাই।
হিমেল বরকতের অকাল প্রয়াণে শোকাহত
– কালিদাস রায়

বেদনায় মন গুমড়ে কাঁদে
আত্মা হলো আহত!
অকালেই হায় ঝরলো মুকুল
আমরা আজ শোকাহত!
সৌরভ তোমার আছে ছড়িয়ে
মানব মনের মনিকোঠায়,
এমন করে কাঁদিয়ে যাবে
ছিল না কারো ভাবনায়।
যে ক্ষতি হলো, হবে কি পূরণ
তোমায় শূন্য অঙ্গনে।
সইতে না পারি বিষম বেদন
অশ্রু নামে নয়নে!
কাঁদায় সবারে গেলে পরপার
কে হবে তোমার মত?
আহাজারি করে তোমার পরিবার
আমরাও শোকাহত!
আমরাও শোকাহত!
আমরাও শোকাহত!
হিমেল বরকতের অকাল প্রয়াণে শ্রদ্ধার্ঘ (সচিত্র) - দৈনিক ভাটিরদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত (২২ নভেম্বর ২০২০) সম্পাদকীয় পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
কবি পরিচিতি

কালিদাস রায়। জন্ম জুন ২৪, ১৯৮২ সালে মোংলা থানার চাঁদপাই ইউনিয়নের দক্ষিণ কাইনমারী গ্রামে ।পিতা শিবপদ রায় এবং মাতা সবিতা রায়। সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০০ সালে এস এস সি পাসের পর মোংলা সরকারি কলেজ হতে এইচ এস সি ও বি এস এস এবং সরকারি বাংলা কলেজ হতে এম এস এস সম্পূর্ণ করার পর ঢাকা উত্তরাতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে একই গ্রামের মায়া রায় মিতুকে বিবাহ করেছেন – তাদের একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
ছেলেবেলা হতে লেখালেখিতে হাতে খড়ি – গ্রাম্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও পালা নাটক দিয়ে লেখালেখি শুরু। পেশাগত জীবনের ব্যস্ততায় সাময়িক ছেদ পড়লেও এখনও টুকটাক সাহিত্যচর্চার চেষ্টা করে চলেছেন। যান্ত্রিক জীবনের জটিলতা দূরে সরিয়ে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে নিজেদের মানষিক উৎকর্ষ সাধন করুক মানুষেরা এবং সাহিত্যের স্নিগ্ধ প্রশান্তি পৌঁছে যাক গোটা বিশ্বে – এই আন্তরিক ইচ্ছাই তার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা ও জীবনবোধের প্রতিফলন।