অনর্থ
– নির্ঝর মুখোপাধ্যায়
কবিকে প্রশ্ন করা হোলো —
আচ্ছা, এই যে কবিতাটা লিখলেন,
এটার কি মানে?
কবি হাসলেন
কলমটা নামিয়ে রেখে
আকাশের দিকে চেয়ে বললেন,
ওটা ঈশ্বর আর আমি জানতাম
কিন্তু বিশ্বাস করুন
এখন শুধুই ঈশ্বর জানেন!
কবি থামলেন
বিভ্রান্ত পাঠককে দেখে তাঁর বড়ই মায়া হোলো
তিনি নিজের বুকে একটি টোকা দিলেন
তারপর বললেন,
কয়েকদিন ও বড় উতলা ছিল
এখন ওকে এই কবরে শুইয়ে দিলাম।
ও এখন ঘুমাক
আপনারা বরং ওর এপিটাফ লিখুন।
লকডাউনে বৃষ্টি
– নির্ঝর মুখোপাধ্যায়
লকডাউনে মুচকি হেসে
আমার ছাদে বৃষ্টি নামে।
লকডাউনে একটু কেশে
বৃষ্টি নামে গঞ্জে গ্রামে।
লকডাউনে লহরা করে
বৃষ্টি নামে টিনের চালে,
ভিজছে বালিশ, ভিজছে তোশক
বস্তির বৌ জলকে চলে।
খালের প্রেম উপচে পড়ে
রাস্তার গায়ে পড়ছে ঢলে,
জরুরি কাজের মোটর বাইক
সোয়ারি ঠেলে হাঁটু জলে।
আমফানে যার আগেই সবই
ডুবে গিয়েছে নোনা জলে
তার কানেতেও বৃষ্টি এখন
আবোল তাবোল যাচ্ছে বলে।
লকডাউনে লকডাউনে
কারোর চোখে ঘোর শাওনে
মুরলী বাজে বৃন্দাবনে,
লকডাউনে ঘোর শাওনে
আড়ালে এবং সামনে সামনে
কারোর কারোর লুঠ করে নেয়
অন্ন বস্ত্র দুঃশাসনে।
কুমারী
– নির্ঝর মুখোপাধ্যায়
কুমারী, আমাকে দিয়েছো মন
তনুটি রেখেছো ধরে,
সামনে আয়না অপলক চোখে
দেখছো প্রহর ভরে,
দাও তবে আজ
বাকি যা রেখেছো
নিজেকে উজাড় করে,
তারপর গিয়ে আয়নার কাছে
তাকাও দুচোখ ভরে।
ভালোবেসে আরো
বেশী বেশী করে
দিয়েছি কুমারী করে।
(ফিরাক গোরখপুরী অবলম্বনে)
আস্তাকুড় মানব
– নির্ঝর মুখোপাধ্যায়
প্রথমদিন ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারিনি—
একটা লোক সিগারেটটা নিভিয়ে
বেমালুম আমার কোর্টের পকেটি গুঁজে দিল।
কিন্তু তারপর থেকে ব্যাপারটা
ক্রমশই বাড়তে থাকে
কেউ আলুর খোসা, কেউ ভাঙা কাপ
কেউ স্যানিটারি ন্যাপকিন- – –
সেদিনতো এক সৌম্যদর্শন বৃদ্ধ
হাসতে হাসতে এসে আমার মুখে
এক ধাবড়া থুতু দিয়ে চলে গেল।
আমার পক্ষে তো আর সহ্য করা অসম্ভব
প্রত্যেকদিন বাড়িতে
রাজ্যের জঞ্জাল নিয়ে ঢোকা- – –
অথচ আমি তো কিছুই বলতে পারছি না!
সেদিন যখন মেডিকেল কলেজের
সামনে দিয়ে যাচ্ছি
এক সাফাই কর্মী কিছু ফেলে দেওয়া
পি পি ই নিয়ে আসতে থাকে
আমি বুঝতে পারছি ওগুলো
আমার ঘাড়েই চাপাবে।
কিন্তু লোকটার কোনো তাড়াহুড়ো নেই দেখে
বললাম, ভাই আমি কি মানুষ নই?
লোকটা পিচ করে পানমশলার পিক ফেলে
এক গাল হেসে বলল, সে তো দেখতেই পাচ্ছি
তবে কি জানেন স্যার আপনাকে দেখেই
কেমন একটা অদম্য ইচ্ছে হয়,
নোংরা ফেলি গায়ে
আপনি কিচ্ছুটি বলবেন না।
সেই দেখে একজন দার্শনিক
বাসের জানলা থেকে মুখ বার করে বললেন,
অস্তিত্বের সঙ্কট মশাই, দুঃখ করবেন না
যান বাড়ি যান।
(Matei Visniec এর একটি নাটক থেকে অনুপ্রাণিত)
কবি পরিচিতি
নির্ঝর মুখোপাধ্যায়। দম দম পার্ক, কলকাতা।
জন্ম ২৪ সেপ্টেম্বর । বর্তমানে চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিন বছর পুরোনো চাকরিতে এ্যডভাইসার হিসেবে নিযুক্ত। শিক্ষাগত যোগ্যতা –MA, LL. B., ACMA, ACS, CPM
ভালো লাগে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন কবিদের কবিতা ও বিভিন্ন নাট্যাকারের লেখা নাটক পড়তে। ভালো লাগে কবিতা লিখতে ও অনুবাদ করতে, ভালো লাগে সংগীত চর্চা করতে। ভালো লাগে নন ফিকসন যে কোন বিষয়ে পড়তে ।
স্কুল ম্যাগাজিনে, কলেজ ম্যাগাজিনে, অফিস ম্যাগাজিনে, ছোটখাটো পত্রিকায়, ওয়েবে টুকটাক লিখে থাকি।