হারায়নি বদলে গেছে
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
তোমার চাওয়ার ধরণ, রুচির কারুকাজের বিকেলগুলো
নীল জোৎস্নার চাঁদ
সরিষা ক্ষেতের হলুদ হাসি
আধো আধো চাঁপা-বেলির সূর্য সমুখে ফুটে ওঠা, মৌমাছিদের গানের সুর,
হরিণ চাতক বুকের ঢেউ
ঝড়ের আর্তনাদ, কোকিলের কুহুতান, সন্ধ্যেবেলার কাসর ঘণ্টা,
মুয়াজ্জিন-এর আজানের সুর, হারায়নি বদলে গেছে –
যেমন বদলেছে আমাদের
বিনোদনের প্রহর, আনন্দের মুহূর্তগুলো প্রায় আজকাল।
সূর্যরঙে জ্বলেওঠা প্রতিবাদ –
পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, পত্রলেখা প্রেমের সমাধি জোড়াতালি,
চেনা বাঁশি, কেমন অচেনা সুরে
বদলে গেলেও উঠোন হারাইনি।
পুরনো সম্পর্কের জোড়াতালি
দেওয়া গেলেও নতুন সম্পর্কের ভাষা ভীষণ বদলে গেছে,
হারাইনি কিছুই, বদলে গেছে
প্রিয় মুহুর্তগুলো!!
পাখির খাঁচার পরাধীন
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
ঘরের কোনে আপন মনে আপনি পরবাসী,
অচেনা সময় গেছে গড়িয়ে
ফুরিয়েছে তাই হাসি।
এ কোন নিঃশব্দ –
চেনা পৃথিবীর নয়
আদিম যুগ এল ফিরে
দারুণ দুঃসময়।
সমাজ আছে সামাজিকতাহীন, মানুষ গৃহবন্দী,
যুদ্ধে হেরে অবশেষে করি
বিবেকের সাথে সন্ধি।
আঁধার ঘরে কোটি পরিবার
চোখ কান আছে খোলা,
মানবিক চোখ ফ্যালফ্যাল করে, হয়েছে আত্মভোলা।
অসহায় জাতি গুমরে মরে
হারিয়ে ফেলেছে গতি,
অচেনা পৃথিবী আলিঙ্গন করে
অন্তরে নিভেছে জ্যোতি।
পাখির খাঁচায় মানুষ পরাধীন
পাখিরা খাঁচা ছাড়া,
মানুষ এখন প্রাণহীন প্রায়
হয়েছে লক্ষ্মীছাড়া।
এক বুক আশা নিয়ে
মানুষ বসে আছে,
অচেনা পৃথিবী চিরচেনা হলে
মানুষ তবেই বাঁচে।।
অরণ্য না ঘুমাক
– মনোজ কান্তি বিশ্বাস
অরণ্য যদি ঘুমিয়ে যায়তো যাক –
পাখিরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় নিক,
অরণ্য বৃক্ষশোভিত থাকলে
অক্সিজেন কিনে খেতো কে?
অরণ্য পাখিশূন্য হলে
হলুদ বরণ পাখিটি মাটি দিয়ে গড়ে নতুন গান লিখো।
মহারাত্রি যদি অনন্ত রাত্রি হয়,
সূর্য যদি অভিমান করে
অমারাত্রির সুনশান গান শোনায়
অতীশ দীপঙ্করের ধ্যানগুহা থেকে তিব্বত কি উঠে আসতে পারবে?
অরণ্যকে ঘুমাতে দাও
পাখিদের কান্না থেমে যাবে একদিন।
সবুজ নির্জীব-নির্মূল হলে
তোমরা বিশ্ববাজার থেকে অক্সিজেনের চালান এনে মুদি দোকানে বেচতে পারবে।
বৃক্ষের কান্না পৃথিবী ছাড়া কে আর শুনবে?
অরণ্যকে ঘুমাতে দিলে একদিন পৃথিবীর তাবৎ প্রাণী ঘুমিয়ে যাবে,
অরণ্যকে জাগিয়ে দিলে
সবুজের মাঝে শান্তির সুদিন হাসবে মানব বসতিতে।।
কবি পরিচিতি
মনোজ কান্তি বিশ্বাস। জন্ম ১৯৭৫ সালে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মাইটভাঙ্গা গ্রামে। বটিয়াঘাটা হেড কোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বটিয়াঘাটা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে বাংলা সম্মান সহ এম এ পাস। কর্মজীবনে একজন গবেষক ও স্বনামধন্য অধ্যাপক। গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর দুটি গবেষণার প্রজেক্টের সাথে। বর্তমানে কর্মরত আছেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে মোংলা উপজেলায় অবস্থিত মোংলা সরকারি কলেজ-এ ২০০২ সাল থেকে।
স্কুল জীবন থেকে কবিতা লেখার সূত্রপাত। কলেজে পড়াকালীন সময়ে কবিতা ও প্রবন্ধ রচনায় বেশকিছু পুরস্কার পান তিনি। এসময় বেশকিছু দৈনিক পত্রিকায়ও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর লেখা কবিতার বই ও শিক্ষার্থীদের জন্য বইও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্ত আছেন বিভিন্ন সৃজনশীল লেখা-লেখির সাথে। বেশি পছন্দ কবিতা পড়া ও লেখা। নদী, প্রকৃতি, ঋতুবৈচিত্র ও জীবনবোধের প্রকাশই তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।