মো. মাহমুদ শেখ – কবিতাগুচ্ছ – তুমি রংধনুর মতো

তুমি রংধনুর মতো

– মো. মাহমুদ শেখ

আকাশ কখনো নীল, কখনো সাদা, ধূসর বেগুনি, কালো কিংবা সিঁদুর রাঙা। এভাবে রং বদলায় – রংধনুর সাত রংয়ে; কিন্তু মানুষ যে তার চেয়ে বেশি রং বদলায়, তা আজ বুঝতে বাকি নাই।

বাতাসের কানে কানে, স্রোতের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে
জীবনে ছোঁয়া আজও হয়নি তোমায়।
আলতার লাল রঙে, রংধনুর সিঁদুর রাঙা দুপায়ে
বারে বারে উঠেছি প্রেমের সিঁড়ি হয়ে চার তলায়।

সমুদ্র সৈকতের ঢেউয়ে যেমনই মন কাড়ে, তেমনি
বর্ণি বাউড়ের ইতিহাসের পাতায়।
তোমার ছদ্মনামটি উড়িয়ে দিলাম চিঠি লিখে বাহুতে
গোপনে রেখে দিলাম মনের খাতায়।

জীবমণ্ডল আকাশ ছুঁই ছুঁই, নীলাম্বরী জল্পনা-কল্পনা
মেঘে মেঘে ঢেকে থাকা খোঁপায়;
তোমার চুলের বাবরি দোলে বিকেলের বাতায়নে ঐ
কালো কেশ অজানা পথের ছোঁয়ায়।

তুমি রংধনুর মতো আমার কপালে এক গোধূলি লগ্নে
হাজার বছরের স্বপ্ন স্মৃতি হয়ে এসেছিলে;
নিরবে গর্জনহীন মেঘ হয়ে হারিয়ে গেলে ঐ আকাশে
জীবনে কি কভু তাহা- যাবো আমি ভুলে?!

মনের রাজপথ

– মো. মাহমুদ শেখ

হৃদয়ের উল্লাসে অজস্র মানুষের সাথে
ভালোবাসার পিরামিড গড়েছি।
আকাশের ঠিকানায় পথ, বহুপথ হেঁটে
নীলাদ্রি রূপম একসময় ধরেছি।
তার আলতো আলতো আদরে আমি
সময়ের পর সময় কাটিয়ে,
নীরব পৃথিবীর এককোণায় দাঁড়িয়ে
ডেকেছি উচ্চস্বরে তোমাকে।

জীবনের স্বাদ কোথায়?
মনের মানুষের মনে নিঃশব্দে ঘুমানো,
আর ভালোবাসার বিনিময়ে স্বপ্ন দেখে
তার স্বপ্নের মায়াজালে লুকানো।
বিভাগের কিছু নাই –
হৃদয় তো এক উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের নাম।
হস্তদ্বয়ের মাঝে লাল গোপালের লুকোচুরি
কখনো বা দিয়েছি জীবনের বদনাম।

চোখের তারায় তারায়, আকাশের ইশারায়
জীবন বদলে দেওয়ার কাহিনী;
অগোচরে সব কিছু শুনেছি নিরাপদ রাখিতে
চচ্চড়িতে ছুটছে স্বপ্নের বাহিনী।
কালোকেশের ঝলমলে আবরণে আমি আজও
মুগ্ধ থাকি সদা নিথর রজনীতে;
তোমার ছোঁয়া পেতে, মনের গান শ্রবণের তরে
স্বপ্ন সাজায় তোমায় ভেবে ভেবে।

আজও হেঁটে হেঁটে মনের রাজপথ রঞ্জিত করে
ছুটে আসি নিত্য তোমার দ্বারে,
তোমায় পাবো ভেবে আমি বাসর সাজাই ফুলে
আমার একচ্ছত্র মন দরবারে।
যদিও তুমি দেখনি; কিন্তু সে ঘরে কেউ আসেনি
সে ঘর নিরীহ! একা একা –
তোমার পথপানে চেয়ে চেয়ে হাজার বছর কাটাবে
তবুও কি সে পাবে দেখা?

খুলনা শহরে

– মো. মাহমুদ শেখ

ভাল লাগে খুলনা শহরে-
এই শহরের নির্জন পার্ক,
ভাল লাগে ঘুরতে আমার
সেই শহরের রাস্তা ঘাট।
ভাল লাগে এই শহরের
দালান কোঠা, বসত-ঘর।
ভাল লাগে সেই শহরের
কিছু আপন, কিছু পর।
ভাল লাগে কল-কারখানা
হাসপাতাল আর দোকান পাট।
ভাল লাগে হোটেল, অফিস
বড় বড় রাস্তা, মাঠ।
ভাল লাগে গাড়ি-বাড়ি
স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি।
ভাল লাগে জেল, আদালত
নগর ভবন এর পুরো সিটি।
ভাল লাগে মানুষগুলো,
কর্মজীবী শ্রমিক সব।
ভাল লাগে মসজিদ, মন্দির
নিত্য যারা ডাকে রব।

ভাল লাগে এই শহরের
মানুষগুলোর কাজ কাম।
মাঝে মাঝে ভাল লাগে
রাস্তার মাঝে লম্বা জ্যাম।
ভালো লাগে খুলনা শহরে
ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক সেই;
ভালো লাগে নদ-নদী সব, সেথা
নিত্য যারা শ্রম দেয়।
ভালো লাগে এই শহরে
বিকেল হলে ঘুরতে,
ভালো লাগে নিশিদিন ঐ
ট্রেনের দুলুনি শুনতে।
সব মিলিয়ে এই শহরে
হরেক মানুষের বসবাস,
গরীব দুঃখী অসহায় মানুষের
সব খানেতে হা হুতাশ।

ক্ষণিকের মহাকাল

– মো. মাহমুদ শেখ

জন্মকালে দূর্বল, বৃদ্ধকালেও তাই;
কৈশোর আর যৌবনের তুলনা নাই!
বুঝিনি জন্মের পর – কি করতে হবে?
আদর সোহাগ দিয়ে বড় করছেন সবে।

শিশুকালে বুঝেছি সোজা পথ, বাঁকা না;
সহজে সব কিছু মেনেছি ভুল-শুদ্ধ যা।
খাবারে অনিয়ম আর নিয়ম সব ঠিক
গোসল, খেলাধুলায় পরিপূর্ণ সব দিক।

কৈশোরে পা রেখে বুঝি সব ঠিক ঠাক,
চোখ রাঙা গুরুজনের, ডরেছি সেই রাগ।
স্কুল ফাঁকি দিয়ে দুষ্টুমি রাত দিন;
আড্ডা মেরেছি শত, চুরিতে বাকহীন।

যৌবনে পা রেখে বুঝি সব ডান-বাম
ভালোবাসা মনে আসা! এই সময়ের কাম।
লেখাপড়া, প্রেম চলে; এক কাজে দুই কাজ
সকলের সামনে থেকে পালিয়ে যায় লাজ।

ষাটের আগ পর্যন্ত যৌবনের শেষ ধাপ;
স্মৃতিতে অতীত সব! মুখে বলে ওরে বাপ।
কি করেছি জীবন ভরে? দূর্বল পড়ে রয়
যৌবনের গল্প শত! নাতিদের সামনে কয়।

বৃদ্ধতে দূর্বল হয়ে বিছানায় পড়ে রয়;
মৃত্যুতে কেউ বা অকালে ঝরে যায়।
অতীতে ছিলে দূর্বল; আজও সেই দূর্বল।
মাঝখানের জীবন গাড়ি; ক্ষণিকের মহাকাল।


কবি পরিচিতি

মোঃ মাহমুদ শেখ। জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর খুলনা জেলার তেরখাদা থানাধীন ইছামতী গ্রামে। পিতা মোঃ আবুল হোসেন শেখ ও মাতা মমতাজ বেগম। শিক্ষাজীবনে তিনি বি.এ. ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে খুলনা সরকারি বি. এল. বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স অধ্যয়নরত। বিগত আট বছর তিনি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে বেকার জীবন পার করছেন।

ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা ও রচনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজও তিনি বিভিন্ন সাহিত্যিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন যৌথ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বহু লেখা। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে “আঁধারে ভরা জীবন” নামে কবির একটি একক কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশের পথে রয়েছে কবির দ্বিতীয় একক কাব্যগ্রন্থ “বিষাদ স্মৃতি”।