জীবনের চাকা
– বাসুদেব পাল
আঁকা বাঁকা বন্ধুর দুর্গম পথ ,
তার মাঝে ছুটে চলে জীবনের চাকা ,
ছুটে চলে দ্রুত গতি নিয়ে
অথবা ধীরে, অতি ধীরে –
কিন্তু থামেনা, ছোটে – শুধু ছোটে।
দু’ চোখের দৃষ্টি সামনে যায়,
দেখে শুধু কুয়াশাবৃত জমানো আঁধার
অথবা সীমাহীন ধোঁয়ার কুন্ডলী।
জীবনের চাকা আরো দ্রুত গতি নেয়
কিন্তু থামেনা, ছোটে শুধু ছোটে।
সামনে প্রতিকুলতার প্রশস্ত প্রান্তর,
বিষাক্ত বায়ুতে রুদ্ধপ্রায় জীবনের দ্বার,
শংকায় প্রকম্পিত পৃথিবীর মাঝে আজ
দুর্বার নির্ভীক হয়ে ছোটে জীবনের চাকা;
সংগ্রাম মুখর হয়ে ছোটে, ছোটে – শুধু ছোটে।
কখনো মধুময় স্বপ্ন দেখে জীবনের চাকা,
সুরভিত পুষ্প পাপড়ি বিছানো কোমল পথে
সুনীল আকাশে উড়ন্ত বিহঙ্গের গান যেন শোনে
ক্ষীণতম শান্তির পরশ প্রাপ্ত জীবনের চাকা,
তাই একটু মন্থর গতিতে ছোটে, ছোটে – তবু ছোটে।
বাস্তবতার আঘাতে বিচুর্ণীভূত কল্পনার প্রাসাদ,
ক্রমাগত স্পষ্টতর হয় রাশি রাশি ভুল –
স্পষ্টতর হয় কল্পনা আর স্বপ্নের বিশাল প্রভেদ;
তাই পূণ: ছোটা শুরু করে জীবনের চাকা –
দ্রুত বেগে ছোটে, ছোটে – শুধু ছোটে।
সংগ্রাম অবিরাম
– বাসুদেব পাল
দুঃখের সমুদ্র ঠেলে ঠেলে
ওরা সামনে এগিয়ে চলে।
রিক্ত হাতে তিক্ত পথের উড়ন্ত ধুলি মাঝে –
দুরন্ত – অরা চির দুর্বার,
সংগ্রাম করে চলে।
শত্রুর বেশে এসে যায় শীত,
জীর্ণ পোষাকে কাঁপন ধরায়
তবু তো কাতর নয় –
অটল – ওরা চির অবিচল
ওদের চলার পথে।
বিশ্রামহীন ওদের কর্মপথে
নিরুপায় শীত ব্যর্থ হয়ে
পালানোর পথ খোঁজে।
গ্রীষ্ম আসে –
বৈশাখ মাসে রৌদ্রের ঝাঁঝ বাড়ে –
গাঁয়ের রক্ত ঘাম হয়ে ঝরে
তবু নয় পরাজয় ,
দুপুরের রোদে ভ্যানের প্যাডেলে
ভাতের গন্ধ খোঁজে,
রক্ত জমানো হাতুড়ি পিটায়ে
ইটের দর্প ভাঙ্গে,
ভাঙ্গেনা তবু শোষকের দর্প
সংগ্রাম তাই চলে –
প্রতিপদে সংগ্রাম,
সংগ্রাম অবিরাম।
সন্ধান
– বাসুদেব পাল
জোনাকি হয়েও দেখেছি ,
অমাবস্যার আঁধার ঠেলে ঠেলে –
ঘন সবুজ বীথিকার মাঝে,
কখনো বা খোলা প্রান্তরে
তোমার হারিয়ে যাওয়া সেই পথ ধরে
আমার ক্ষীণ আলো ছড়িয়ে তোমায় খুঁজেছি।
কখনো পতংগ হয়েছি,
প্রস্ফুটিত পুষ্পের পাপড়িতে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে
বর্ণময় সুদৃশ পরাগ রেণু গায়ে মেখে
সৌরভে সুরভিত সমীরে পাখা মেলে
চিরচেনা সেই পথে তোমাকে খুঁজেছি।
উত্তাপে বাষ্প হয়েছি,
মেঘ হয়ে আকাশের নীলিমার মাঝ দিয়ে
ছুটে গেছি গ্রহান্তরে, দূর নক্ষত্রালোকে –
ধুমকেতু, ছায়াপথ আর উল্কাপিন্ডের মাঝেও
ঘুরে ঘুরে শুধু তোমাকে খুঁজেছি।
শুক্তি হয়ে সাগরে ভেসেছি –
প্রশান্ত আর আটলান্টিক ছেড়ে ছুটেছি
গভীর হতে আরো গভীরে –
স্তুপীকৃত নুড়িপাথর আর শ্বেত শঙ্খের মাঝে
তোমারই সন্ধান করেছি।
শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়েছি,
আমার হৃদপিন্ডের গতি স্তব্ধ হয়েছে ধীরে ধীরে,
সহস্র শতাব্দী পেরিয়ে ফসিল হয়েছে দেহ
তবু অতৃপ্ত আত্মা তৃপ্তির জন্য আজও
শুধু তোমার ফসিল সন্ধান করে।
জোৎস্না
– বাসুদেব পাল
বিদায় ঘন্টা উঠলো যে বেজে
আঁধারের অবসান,
পূব আকাশে আলোকের রেখা
ওঠে জোৎস্নার বান।
যত ছিল কালো, যত মলিনতা
জোৎস্নায় গেল ভেসে,
শূন্য হৃদয়ে পূর্ণতা দিয়ে
জোৎস্নায় ওঠে ভেসে।
সহস্র যুগের জমানো ব্যথা –
বঞ্চনা অভিমান,
শোষিতের বুকে শত আহাজারি
জোৎস্নায় হলো ম্লান।
আলোর প্রকাশে লুকায় আঁধার –
ধরার নিয়ম তাই,
সততায় ভরা জোৎস্না আলোকে
মিথ্যার নাই ঠাঁই।
কবি পরিচিতি

বাসুদেব কুমার পাল। জন্ম রামপাল উপজেলার বড়দিয়া গ্রামে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে, পিতা মণিদ্রনাথ পাল ও মাতা সরোজিনী পাল। বি, এসসি(অনার্স) ও প্রাণিবিজ্ঞানে এম,এসসি ডিগ্রী অর্জনের পর এখন আমড়াতলা চাঁপড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে এখন কর্মরত। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত – স্ত্রী লাবনী পাল এবং বাণী ও বর্ণ নামে দুই সন্তানের জনক।
ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। ছাত্রজীবনেই খুলনার বিভিন্ন দৈনিকে অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে খুলনার দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে কবির কবিতা। এছাড়া তিনি উপন্যাসও লিখে থাকেন। – এ পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাস একটি – স্বপ্নের মৃত্যু, অপ্রকাশিত উপন্যাস চারটি। তিনি আরো লিখেছেন ছোট গল্প ও ছোটদের জন্য ছড়া এবং রচনা করেছেন আধুনিক গান। শখের বসেই তার লেখালেখি, অবসর কাটে লিখে ও বই পড়ে। কবির লেখার ভিতর সম-সাময়িক বিষয় ও প্রকৃতিই প্রধান্য পায় বেশী।