আলো আঁধারে
– পারমিতা ব্যানার্জি
যখন আলো আমাকে
জড়িয়ে রাখে ভীড়ে!
আমি হারিয়ে যাই
একাকীত্বের গভীরে!!
কী ভীষণ এক উৎসব
শুরু হয় সেই ক্ষণে!
উৎসব, অন্দর মহলের
নিঃস্ব পদ্মবনে!
এ যে একার উৎসব
গোলাপী পদ্মের!
একটা একটা পাপড়ি
খুলে হয় দুর্নিবার!
পদ্মের ভিতরের
আঁধার শুধু আমার!!
ভুলে যেতে চাই যে
আলোর অন্ধকার!!
মাটি-বৃষ্টি যুগলবন্দী
– পারমিতা ব্যানার্জি
উড়ো মেঘে উড়ন্ তুবড়ি বৃষ্টি!
জুঁই ছড়িয়ে মাটিতে সোঁদা গন্ধ।
গর্ত গর্ত ছোপ! উধাও রোদ্দুর!
উড়িয়ে মেঘ তুখর ফোঁটা বৃষ্টি।
মাটিতে টোপা!! রোদ্দুর কদ্দুর?
বৃষ্টি দেয়ালের মেঘে কাব্য সৃষ্টি!
উড়ো চিঠির মেঘ ঝরায় বৃষ্টি!
মাটির সোঁদা গন্ধ তো প্রাণবন্ত!
অন্য ভোর
– পারমিতা ব্যানার্জি
শেষ শরতে ভোরের ছাদ __
হলুদ ঠোঁট শালিক জোড়ে
গাল ফুলিয়ে প্রেম আলাপ!
পড়লো যেন মন দেওয়ালে,
শিউলি বোঁটার হলুদ ছোপ?
হাওয়ায় এলো মেঘ পিওন!
অতীত নেশায় চিঠির খোঁজ,
মনে যখন বাদল ডাক __
কুমীর ডাঙায়, জল-কুমারীর
সদ্য ভেজা বৃষ্টি ঠোঁট!
আড়াল চোখে উদাস সুরে,
হলুদ পাখির মন খারাপ!
মন কেমনের অতীত ডাক!
পঙ্খীরাজে রাজার কুমার
কন্যে স্বপ্নে পগার পার!
দুপুর চুমে আদর গাল!!
সিঁথির বুকে সে রাজপথে,
রক্ত রাঙা বিজয় নিশান!
বহুতলের করিডোর __
মন কেমনের তেপান্তর!!!
একা চাঁদ
– পারমিতা ব্যানার্জি
তুমি তো এলে না, তাই একা জাগে রাত,
বিবসনা তরুটির ছায়া এঁকে চাঁদে।
একা চাঁদ বনপথে রাতের গভীরে,
শোনে নীরব বনানীর চাপা দীর্ঘশ্বাস!
শিশির ভেজা ঘাসে, তখন পূর্ণিমা।
কত ব্যথা, নীরবতা হিমেল বাতাসে,
সুরে বাঁধা তানপুরা আলগোছে বাজে।
একা আছে চাঁদ, হেমন্ত আকাশে আজ।
কত ঋতু আসে যায়, পৃথিবী পাল্টায়।
আত্মিক
– পারমিতা ব্যানার্জি
তুমি চলে গেছো __
জানি না কোন্ অন্তরালে!
তবু এখনও
সারাটা মন জুড়ে মুগ্ধ আতর।
দূরত্বের মাঝপথে
আলোকিত বেলোয়াড়ি ঝাড়!
পুরোনো সাজে কী ফিরে আসে
বাহুপাশে আবদ্ধ মন!
ঠিকানা খোঁজে মেঠোপথের!
হারানো একতারার!
সূর্য অস্তাচলে গেলেও বুঝি
ফিরে পেতে চায়
একই জাগ্রত প্রভাত অনুভব!
স্পর্শ নেই, তবু স্পর্শ আছে উষ্ণতার।
কবি পরিচিতি

পারমিতা ব্যানার্জি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পিতা স্বর্গীয় দাশরথি দাস, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মাতা স্বর্গীয় মণিকা দাস গৃহবধূ ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বর্তমানে আমি আমার জীবন সাথী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী তমাল ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র পরন্তপ ও পুত্রবধু পৃথা সহ শ্বশুরালয়ে থাকি।
ছোটবেলায় বাবার অনুপ্রেরণায় ও মায়ের সাহচর্যে লেখালেখি, আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সংসারে জড়িয়ে পড়ে ছেদ পড়ে লেখায়। কুড়ি বাইশ বছর পর পুত্র পরন্তপের উৎসাহে নতুন করে কলম ধরা এবং বাংলা কবিতা ডটকমে যুক্ত হওয়া। এখানেই আমি নতুন করে খুঁজে পাই জীবন। এই কবিতার জগতে এখন চলছি এবং চলছি।